বিতর্ক: ফিরোজ শাহ কোটলায় মঙ্গলবারেও ক্রিকেট ছাপিয়ে শিরোনামে দিল্লির দূষণ। দেখা গেল আতঙ্কের নানা ছবি।
ক্রিকেট মাঠে এতদিন স্কোরবোর্ড হাজির থেকেছে রান, উইকেট, ওভারের সন্ধান দেওয়ার জন্য। ফিরোজ শাহ কোটলার হাত ধরে নতুন এক স্কোরবোর্ড যেন এসে পড়েছে। প্রেস বক্স থেকে ম্যাচ রেফারির বক্স, ড্রেসিংরুম থেকে গ্যালারি, সর্বত্র যাকে নিয়ে আলোচনা অব্যাহত— দূষণ মাপার ‘স্কোরবোর্ড’!
দিল্লির ভয়াবহ দূষণের প্রভাব মঙ্গলবার বিকেলে পড়ল ভারতীয় দলের ওপরও। শ্রীলঙ্কাকে ৪১০ রানের টার্গেট দিয়ে ব্যাট করতে পাঠানোর পরে মহম্মদ শামি যখন তাঁর তৃতীয় ওভার করছিলেন, তখন হঠাৎ তাঁকে বমি করতে দেখা যায়। ওই ওভারে উইকেট পেলেও তার পরে তিনি মাঠ ছেড়ে চলে যান। বাকি সময়ে আর ফিরে আসেননি তিনি।
সকালে বোলিং করার সময় একই ঘটনা ঘটে সুরঙ্গা লাকমলের সঙ্গেও। তাতে যতটা না প্রতিক্রিয়া হয়, শামি অসুস্থ হয়ে পড়ায় ফের দূষণ-বিতর্কের আগুনে যেন ঘি পড়ে। আগের দিনই শামি সাংবাদিক বৈঠকে এসে বলে যান, ব্যাপারটা নিয়ে শ্রীলঙ্কা হয়তো বাড়াবাড়ি করছে এবং তাঁরা এই পরিবেশে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। সেই শামিই এ দিন মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়ায় এ বার শ্রীলঙ্কা শিবিরও পাল্টা কথা শুনিয়ে গেল।
শ্রীলঙ্কার কোচ নিক পোথাস এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘আপনাদের শামিকেও তো দিনের শেষে অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখলাম। আমি তো বলব, আমাদের ছেলেরা এই পরিবেশের সঙ্গে দারুণ ভাবে মানিয়ে নিয়েছে। কাজটা মোটেই সোজা ছিল না।’’ কোটলা এলাকার বাতাসের মানের সূচক অনুযায়ী মঙ্গলবারও দিনের বেশির ভাগ সময়ই গত দু’দিনের মতোই ছিল। ধোঁয়াশাও ছিল এতটা যে, এ দিন সকাল থেকেই সারা দিন ফ্লাড লাইট জ্বেলে খেলা হয়।
আরও পড়ুন: দিল্লি জয় আর ৭ উইকেট দূরে
দিল্লি ক্রিকেট সংস্থা আবার এ দিন এক স্থানীয় চিকিৎসককে শ্রীলঙ্কা শিবিরে পাঠায় তাদের ক্রিকেটাররা কতটা অসুস্থ, তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য। তিনি শ্রীলঙ্কা শিবিরে গিয়ে নিরোশন ডিকওয়েলা, ধনঞ্জয় ডিসিলভা ও লক্ষণ সন্দাকনকে পরীক্ষা করলেও দলের অন্য ক্রিকেটাররা কেউ তাঁর কাছে পরীক্ষা দিতে রাজি হননি। এইমসের সেই চিকিৎসক ডা. অমর পাল ভাল্লা এ দিন বলেন, ‘‘তিন জনেরই শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক। তবে এই দূষিত পরিবেশে ক্রিকেট খেলা সত্যিই
বেশ কঠিন।’’
শামির শারীরিক অবস্থা নিয়ে শিখর ধবনকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘‘শামি এখন সুস্থই আছে। কাল ওকে মাঠে নামতে দেখতে পাবেন।’’ এ দিকে ডাক্তারের আগমনে ক্ষিপ্ত পোথাস বলে দেন, ‘‘কী পরীক্ষা করেছেন ওই ডাক্তার, আমি জানি না। আমি তো আর ডাক্তার নই, তাই বুঝিনি, উনি কী কী পরীক্ষা করেছেন। কেন পরীক্ষা করা হল, তাও বুঝলাম না। এর থেকে কিছু বোঝাও যায়নি।’’
এই ধোঁয়াশায় কিছুটা হলেও অবাক হয়েছেন ধবন, যিনি ছোট থেকেই দিল্লিতে রয়েছেন। ধবন বলেন, ‘‘আমার এখানেই জন্ম, এখানেই বড় হয়েছি বলে দিল্লির পরিবেশ সম্পর্কে জানি। এখন (হরিয়ানা, পঞ্জাবে) ফসল কাটা হয়। ফলে ওখান থেকে দিল্লির পরিবেশ দূষিত হতেই পারে। কিন্তু এই মাসটায় দেখছি দূষণ যেন একটু বেশিই। এ বার রোদও খুব একটা ওঠেনি বলে শুনছি। সেটাও হয়তো দূষণের কারণে। তবে পরিবেশ বোধহয় এতটাও দূষিত নয় যে, ক্রিকেট খেলাই যাবে না।’’
শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা এ দিন ফের মুখোশ পরে ফিল্ডিং করেন। ধবনের যুক্তি, ‘‘আমাদের দলেও তো অনেকে আছে, যারা দিল্লির আবহাওয়ায় অভ্যস্ত নয়। তারা অন্য রাজ্য থেকে এসেছে। কিন্তু যে কাজটা তাদের দেওয়া হয়েছে, তা তো করতেই হবে। পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই করতে হবে।’’ ভারতীয়রা ফিল্ডিং করার সময় এ দিনও কেউ
মুখোশ পরেননি।