লং জাম্পে রুপোজয়ী শ্রীশঙ্কর। ছবি: টুইটার।
বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে পুরুষদের লং জাম্পে রুপো জিতেছেন শ্রীশঙ্কর মুরলি। কেরলের ২৩ বছরের অ্যাথলিট ভারতের দ্বিতীয় পুরুষ লং জাম্পার হিসাবে কমনওয়েলথ গেমসে পদক জিতেছেন। তাঁর এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে কড়া অনুশাসন। তবে সুযোগ পেলেই বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে পার্টি করেন শ্রীশঙ্কর।
কেমন সেই পার্টি? নিজেই জানিয়েছেন শ্রীশঙ্কর। বলেছেন, ‘‘বন্ধুদের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই পার্টি করি। আমি শুধু চিপ্স আর ফলের রস খাই। বন্ধুরা অনেকেই ধূমপান বা মদ্যপান করে। কিন্তু আমাকে কখনও খাওয়ার জন্য বলে না। কারণ, ওরা জানে জোর করে খাওয়ালে আমাকে আর আড্ডায় পাবে না। আমার বাড়িতে সবাই এক সঙ্গে হলে মদ্যপানের কোনও ব্যাপারই নেই।’’
ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সে প্রতিভাবান বলেই পরিচিত শ্রীশঙ্করের জীবনে বিনোদন বলতে এটুকুই। বাকিটা কড়া অনুশীলন এবং অনুশাসন। ছেলের সাফল্যে গর্বিত তাঁর মা-বাবা। তাঁর মা কেএস বিজিমলও প্রাক্তন অ্যাথলিট। তিনি ৮০০ মিটার দৌড়তেন। ছেলের সাফল্যে গর্বিত বিজিমল বলেছেন, ‘‘শ্রীশঙ্করের মতো ছেলে পেয়ে আমরা গর্বিত। ও প্রথম থেকেই অত্যন্ত বিনয়ী স্বভাবের। সকলকে শ্রদ্ধা করে। এই স্বভাবের জন্যই এত দূর পৌঁছতে পেরেছে। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই শঙ্কু (এই নামেই ডাকেন ছেলেকে) খুব শান্ত স্বভাবের। ওকে নিয়ে কখনও আমাদের কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি।’’
বাবা মুরলি বিজিমলের কাছেই অ্যাথলেটিক্স শুরু শ্রীশঙ্করের। এখনও বাবার কাছেই অনুশীলন করেন তিনি। ছেলের সাফল্যে গর্বিত মুরলি বলেছেন, ‘‘পরিশ্রম করতে কখনও ভয় পায় না। কখনও পালিয়ে যায় না। কোনও দিন অজুহাত দেয়নি। কখনও সহজ পথে কিছু করার চেষ্টা করে না। খুব কম সময়ই কড়া গলায় কথা বলতে হয়েছে আমাকে।’’
শ্রীশঙ্কর নিজেও সাফল্যের জন্য কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাবাকে। রুপোজয়ী অ্যাথলিট জানিয়েছেন, তাঁর বাবা খুবই কড়া ধাঁচের কোচ। শ্রীশঙ্কর বলেছেন, ‘‘অনুশীলনের সময় কোনও কিছুই পছন্দ করেন না বাবা। অন্য কিছু করলে খুব রেগে যান। অনুশীলনের বিরতিতে ফোনে গান শোনাও পছন্দ করেন না।’’ অনুশাসনও কঠোর। বাড়িতে রাত ১১টার পর টেলিভিশন দেখা নিষিদ্ধ। ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে ফেসবুক বা হোয়াটস অ্যাপ ব্যবহারের অনুমতি ছিল না শ্রীশঙ্করের। তা নিয়েও আপত্তি নেই শ্রীশঙ্করের। বলেছেন, ‘‘বাবা জানেন আমার জন্য কোনটা সব থেকে ভাল।’’
খেলার পাশাপাশি সমান গুরুত্ব দিয়ে করেছেন পড়াশোনা। সে দিকেও কড়া নজর ছিল তাঁর বাবা-মার। দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ৯৫ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছেন। অ্যাথলেটিক্সের মতো পড়াশোনাও তাঁর প্রিয়। কেরলে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় খেলোয়াড়দের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান পান শ্রীশঙ্কর। নিট পরীক্ষাতেও ভাল ফল করেন। সেই সুবাদে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। কিন্তু চিকিৎসক হতে চাননি শ্রীশঙ্কর। বরং অঙ্ক নিয়ে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করেন। ভবিষ্যতের কথা ভেবেই ছেলের পড়াশোনায় কখনও আলগা দেননি মুরলি। তিনি বলেছেন, ‘‘অ্যাথলেটিক্সে আমার অনেক বন্ধু এখনও বেকার। নিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্যই প্রথম থেকে ওর পড়াশোনায় আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের দেশে পড়াশোনা না করলে কিছুই সম্ভব নয়।’’
কমনওয়েলথ গেমসে দাদার সাফল্যে খুশি শ্রীশঙ্করের বোন শ্রীপার্বতীও। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পড়ুয়া বলেছেন, ‘‘বাড়িতে বা বাইরে দাদাকে কখনও কারও সঙ্গে ঝগড়া-মারামারি করতে দেখিনি। মাঝেমাঝে আমাদের মধ্যে হয়তো মতবিরোধ হয়েছে। এর বেশি কিছু নয়। বার্মিংহাম থেকে আমাকে কয়েক বার ভিডিয়ো কল করেছে। তাতে আমিও বেশ জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছি বন্ধুদের মধ্যে।’’