স্বপ্নার হাতে স্মারক তুলে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দক্ষিণেশ্বরে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
জাতীয় গেমসে সোনাজয়ী অ্যাথলিট স্বপ্না বর্মনের হাতে আট লাখ টাকার চেক ও স্মারক তুলে দিলেন। তার পর উত্তরীয় পরিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “আরও ভাল করতে হবে। বাংলার মুখ আরও উজ্জ্বল করতে হবে।”
খো খো-র বিশ্বজিৎ মণ্ডল, বুবাই দাসদের মলিন চেহারা দেখে তাঁর মন্তব্য, “তোমাদের চাকরি দরকার তো? না হলে খেলবে কী করে?”
বক্সিংয়ের সোনাজয়ী, হাওড়ার দেবাংশু জায়সাবালের সুঠাম বিশাল চেহারা দেখে অবাক হলেন তিনি। আবার জিমন্যাস্টিক্সের প্রণতি দাশ, মন্দিরা রায়চৌধুরীদের আদর করলেন গালে হাত দিয়ে।
বাংলার খেলাধূলার ইতিহাসে প্রথম বার শুধু জাতীয় গেমসের পদক পাওয়া ক্রীড়াবিদদের হাতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তুলে দেওয়া হল এক কোটি তিরিশ লাখ টাকা। দক্ষিণেশ্বর মন্দির প্রাঙ্গনে এক অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার কৃৃতিদের হাতে পুরস্কার-অর্থ ও সম্মান তুলে দেওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিলেন, “আমি চাই শুধু গেমসে নয়, কমনওয়েলথ, এশিয়াড, অলিম্পিকেও বাংলার ছেলেমেয়েরা ভাল ফল করুক। সে জন্য রাজ্যের একটা ক্রীড়ানীতি তৈরি করা দরকার। যারা খেলায় ভাল করছে সেই সব ছেলেমেয়েদের চাকরি দরকার। খো খো-র ছেলেদের সেটাই বলছিলাম।”
কেরল, হরিয়ানা-সহ খেলাধুলায় এগিয়ে থাকা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ক্রীড়ানীতি থাকলেও বাংলায় তা নেই। বাম জমানার শেষের দিকে তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় চেষ্টা করেছিলেন ক্রীড়ানীতি তৈরি করার। কিন্তু তা সফল হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী ‘স্পোর্টস পলিসি’ তৈরির কথা বললেও তা করবে কে? সেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে এ দিন। ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রই তো সারদা-কাণ্ডে জেলে? রাজ্যে খেলার উন্নতির জন্য ক্রীড়ানীতি অত্যন্ত জরুরি। এ দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন সংস্থার কর্তারা তাই খোঁজ নিয়েছেন, এটা কি শুধুই কথার কথা। না, বাস্তবে কিছু হবে।
মোট ৮১ জনের পুরস্কার পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কলকাতা পুরসভার নির্বাচনের জন্য নির্বাচন বিধি মেনে এই অঞ্চলের খেলোয়াড়দের মঞ্চে তোলা হয়নি এ দিন। ফলে মোট ৬৬ জনের জন্য চেক তৈরি ছিল। তা নিতে মঞ্চে উঠেছিলেন ৬২ জন। অনুপস্থিত ছিলেন গেমসের পতাকা বাহক এবং ব্রোঞ্জজয়ী শু্যটার জয়দীপ কর্মকার, অ্যাথলিট চন্দন বাউরিও। কয়েক জনের বাবা-মা আবার সন্তানের হয়ে পুরস্কার নিয়ে গেলেন। গ্রাম-গঞ্জ থেকে আসা ছেলেমেয়েরা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে দেখে অন্য অনুষ্ঠান বন্ধ রেখে জাতীয় গেমসের সফল ক্রীড়াবিদদের ডেকে নেন মুখ্যমন্ত্রী। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন বিওএ প্রেসিডেন্ট অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত তাঁর উদ্যোগেই তো প্রথম বার এত টাকা পেলেন ছোট খেলার সফল ক্রীড়াবিদরা।
অজিতবাবু সম্পর্কে আবার মুখ্যমন্ত্রীর নিজের দাদা।