ভারতীয় ব্যাটিং বিপর্যয়ে একা কুম্ভ চেতেশ্বর

টেস্ট ব্যাটিং কী, দেখিয়ে দিলেন সেই অদম্য পূজারা

ঘুম থেকে উঠেই যদি কোনও দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের দেখতে হয় তাদের দলের স্কোর ১৯-৩, তা হলে কেমন লাগে, তা বৃহস্পতিবার ভাল ভাবেই বুঝে নিলেন ভারতীয়রা। চেতেশ্বর পূজারা যে সেঞ্চুরিটা করে দিনের শেষে ভারতকে আড়াইশো রানে এনে দাঁড় করালেন, সেটা একটা ডাবল সেঞ্চুরির সমান।

Advertisement

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:১৩
Share:

দুরন্ত: অ্যাডিলেডে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের ধস আটকালেন পূজারা। বৃহস্পতিবার সেঞ্চুরি করার পরে। গেটি ইমেজেস

বিদেশে যে কোনও টেস্ট সিরিজের সূচনা সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজের শুরুটা যা হল ভারতের, তাতে কিছুটা হতাশ হতেই হল। ভারতীয় ব্যাটিংয়ের ব্যর্থতা ও চেতেশ্বর পূজারার সাফল্যে যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে বোলারদের হাতেই এখন প্রথম টেস্টের ভাগ্য। শুক্রবার সকালে তাঁরা যদি পাল্টা আক্রমণ করতে পারেন, তা হলেই ম্যাচের রাশ ভারতের হাতে থাকতে পারে। তা না হলেই সমস্যা।

Advertisement

ঘুম থেকে উঠেই যদি কোনও দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের দেখতে হয় তাদের দলের স্কোর ১৯-৩, তা হলে কেমন লাগে, তা বৃহস্পতিবার ভাল ভাবেই বুঝে নিলেন ভারতীয়রা। চেতেশ্বর পূজারা যে সেঞ্চুরিটা করে দিনের শেষে ভারতকে আড়াইশো রানে এনে দাঁড় করালেন, সেটা একটা ডাবল সেঞ্চুরির সমান। ওই সময় তিনি ও রকম একটা দায়িত্বপূর্ণ ইনিংস না খেললে ভারত এখন যেটুকু লড়াইয়ের কথা ভাবছে, তাও ভাবতে পারত বলে মনে হয় না।

অ্যাডিলেডের উইকেট নিয়ে যতটা চর্চা শুনেছিলাম, অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমে যে ভাবে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছিল, সবুজ উইকেটে হবে প্রথম টেস্ট, সে রকম কিন্তু দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। বরং দ্রুত নিষ্প্রাণ হয়ে উঠছে এই উইকেট। প্রথম দিনই নেথান লায়ন যে ভাবে বল ঘোরাচ্ছিলেন, তা অপ্রত্যাশিত। দ্রুত নিষ্প্রাণ হয়ে ওঠা উইকেটে আড়াইশো রান যে ভাল স্কোর, তাও বলা যায় না। উইকেটটা যে ভাবে ব্যাটিংয়ের পক্ষে ক্রমশ সহজ হয়ে উঠছে বলে মনে হচ্ছে, তাতে বোলারদের যে শুধু বাড়তি পরিশ্রম করতে হবে তা-ই নয়, অনেক বুদ্ধি খাটিয়েও বোলিং করতে হবে। লায়নের মতো আর অশ্বিনও এই উইকেটে কার্যকরী হয়ে উঠতে পারেন। সেই অপেক্ষাতেই থাকতে হবে আমাদের।

Advertisement

কিন্তু বিদেশে গিয়েও দেশের মাঠের মতো ব্যাট করার এই প্রবণতা কেন? একের পর এক বাইরের বল খেলতে গিয়ে আউট হলেন আমাদের ব্যাটসম্যানরা। বিরাট কোহালি, অজিঙ্ক রাহানেরাও যখন শরীর থেকে অনেক দূরের বল খেলতে গিয়ে গালি, স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান, তখন হতাশ হতেই হয়।

কুকাবুরার লাল বল যে নতুন অবস্থায় ভাল সুইং করে ও ৫০-৬০ ওভারের পর থেকে রিভার্স সুইং হয়, এটা নিশ্চয়ই আমাদের দলের ক্রিকেটারদের কারও অজানা নয়। তা হলে প্রথম সেশনেই ও ভাবে বাইরের বল খেলতে গিয়ে আউট হওয়ার মানে কী? ক্রিজে অন্তত একটা সেশন টিকে থাকার মানসিকতা ও প্রস্তুতি নিয়ে নামলে বোধ হয় এ ভাবে শরীর থেকে অনেক দূরের বল খেলতে গিয়ে আউট হতেন না ভারতের বেশির ভাগ ব্যাটসম্যানরা। শুরুর দিকটা একদম তাড়াহুড়ো করে না খেলে, অযথা শট খেলতে না গিয়ে বরং ধৈর্য নিয়ে খারাপ বলের জন্য অপেক্ষা করে খেললেই পারতেন বিরাটরা। তা হলে আর শুরুর ধসটা দেখতে হত না।

ঠিক কেমন ব্যাটিং করা উচিত ছিল ওঁদের, সেটা দেখালেন পূজারা। অদম্য মানসিকতা, অসীম ধৈর্য, নিখুঁত টেকনিক ও উপস্থিত বুদ্ধি— এই সবের মিশ্রনে যে একজন আদর্শ টেস্ট ব্যাটসম্যান তৈরি হয়, তা পূজারার ব্যাটিং দেখেই বোঝা যায়। এই গুণগুলো ওর মধ্যে আছে বলেই ওকে দেশের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান বলা হয়। ওর মধ্যে একেবারে রাহুল দ্রাবিড়কে দেখতে পাওয়া যায় যেন। পরিসংখ্যানও একই কথা বলছে। যে ক’টি ইনিংসে ব্যাট করে পাঁচ হাজার রান করেছেন রাহুল, সে ক’টি ইনিংসেই পাঁচ হাজার ক্লাবে প্রবেশ করলেন পূজারাও। কাকতালীয় হলেও এটাই সত্যি। অথচ এই পূজারাকেই মাঝে মাঝে দল থেকে বাদ পড়তে হয়। যেমন তাঁকে রাখা হয়নি এজবাস্টন টেস্টের দলে। ওর মধ্যে যখন টেস্ট খেলার সব রকম প্রতিভাই রয়েছে, তখন কেন সবার আগে ওকে রেখে দল বাছা হয় না, সেটাই প্রশ্ন।

অস্ট্রেলিয়ার বোলিং, ফিল্ডিং নিয়ে অনেক চর্চা চলছে। কিন্তু এমন কিছু আহামরি বোলিং ওরা করেনি, যার জন্য ভারতীয় ব্যাটিংয়ে এতটা বিপর্যয় নেমে আসে। জায়গায় বল রাখা, প্রয়োজনীয় লাইন ও লেংথ ধরে রাখাটা তো ভাল টেস্ট বোলারের কাজ। মিচেল স্টার্ক, জশ হেজলউড, প্যাট কামিন্সরা চেনা মাঠে সেটাই করবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। তবে স্বীকার করতেই হবে উসমান খোয়াজার ক্যাচটা বা কামিন্সের রান-আউটটা অসাধারণ বললেও কম বলা হয়। অস্ট্রেলিয়া তো বরাবরই ভাল ফিল্ডিং করে। এও তো আর কারও অজানা নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement