বিধ্বস্ত: হারের পরে বিষণ্ণ এটিকে ফুটবলারেরা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
চলতি বছর নিয়ে তিন মরসুম এটিকে কোচের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি। আর এই তিনবারেই ইন্ডিয়ান সুপার লিগে সেমিফাইনালে গিয়েছে এটিকে। স্পেনীয় কোচ আন্তোনিয়ো লোপেজ হাবাস তাই ঘনিষ্ঠ মহলে প্রচ্ছন্ন গর্ব বোধ করেন। একই সঙ্গে তিনি জানেন, চেন্নাইয়িন তাঁর দলের কাছে একটি বড় গাঁট। প্রথম বছর হাবাস কোচ থাকার সময়ে এই দু’দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই জমেছিল। দ্বিতীয় বছরে কলকাতা ছেড়ে ফিকরু তেফেরা চেন্নাইয়িনে যোগ দেওয়ার পরে কলকাতা পর্বের সেমিফাইনালে জিতেও গোলপার্থক্যে ফাইনাল খেলা হয়নি হাবাসের এটিকের। হাবাসের মতে, এ বারের রয় কৃষ্ণ-ডেভিড উইলিয়ামসদের দলটা তুখোড়। তাঁর কথায়, ‘‘সবাই প্রকৃত পেশাদার। তাই দলে নেই সমস্যা।’’
এটিকের সেই পেশাদার দলের রবিবার হলটা কী? সেমিফাইনালে আগেই চলে যাওয়ায় এটিকের লক্ষ্য ছিল লিগে এক নম্বর হয়ে শেষ করা। তার জন্য রবিবার অভিষেক বচ্চনের দল চেন্নাইয়িনকে হারাতেই হত এটিকের। কিন্তু সেই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই যুবভারতীর হাজার সাঁইত্রিশ দর্শকের সামনে এটিকের মাঝমাঠ ও রক্ষণে একাধিক ভুলভ্রান্তি, গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্যের বলের ফ্লাইট বুঝতে না পেরে গোল খাওয়া, একাধিক বার গোলের সামনে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলার প্রদর্শনী। একই সঙ্গে দু’বার অফসাইডের জন্য গোলও বাতিল হল এটিকের। যার নিট ফল, চেন্নাইয়িনের কাছে একাধিক সুযোগ তৈরি করেও ঘরের মাঠে শেষ ম্যাচ ১-৩ হারল হাবাসের ছেলেরা। পাশাপাশি, এক নম্বর হয়ে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার
স্বপ্নও ধাক্কা খেল তাদের।
১৭ ম্যাচে ৩৩ পয়েন্ট নিয়ে এটিকে থাকল দু’নম্বরেই। সমসংখ্যক ম্যাচে ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে এফসি গোয়া। বুধবার জামশেদপুর এফসির সঙ্গে ড্র করলেই লিগে প্রথম হয়ে শেষ করবে গোয়া। ফলে সে দিন বড় কোনও অঘটন না হলে এটিকের এক নম্বর হওয়ার স্বপ্ন রবিবার কার্যত শেষ হয়ে গেল সেই চেন্নাইয়িনের হাতেই। অন্য দিকে, দলের মালিক অভিষেক বচ্চনের সামনে প্রয়োজনীয় তিন পয়েন্ট পেয়ে সেমিফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখল চেন্নাইয়িন। ১৬ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ২৫। ম্যাচ শেষ হাবাস বললেন, ‘‘রোজ রোজ একই ছন্দে খেলা যায় না। চেন্নাই আজ আমাদের দাঁড়াতেই দেয়নি।’’ অন্য দিকে, চেন্নাইয়িন কোচ আওয়েন কয়েল বললেন, ‘‘সেমিফাইনালে খেলার জন্য কাজ শেষ হয়নি আমাদের।’’
চেন্নাইয়িনকে হারানোর জন্য এ দিন মাঝমাঠ মজবুত করে ৩-৫-২ ছকে নেমেছিল এটিকে। চেন্নাইয়ের ব্রিটিশ কোচ আওয়েন কয়েল জানতেন এটিকের শক্তি তাদের ফরোয়ার্ডেরা। তাই রয় কৃষ্ণ, এদুয়ার্দো গার্সিয়া ও পরিবর্ত হিসেবে নামা ডেভিড উইলিয়ামসদের নিষ্প্রভ করতে রক্ষণ মজবুত করে ৪-২-৩-১ ছকে প্রতি-আক্রমণভিত্তিক রণনীতি নিয়েছিলেন তিনি। আর সেই লক্ষ্যে তিনি সফল।
খেলা শুরুর সাত মিনিটেই পিছিয়ে গিয়েছিল হাবাসের দল। মাঝমাঠ থেকে চেন্নাইয়িন স্টপার এলি সাবিয়া ফিলহোর বাড়ানো বল রাফায়েল ক্রিভেলারোকে যখন ধরলেন, তখন তাঁর মার্কার আর্মান্দো সোসা পেনা কোথায়? ক্রিভেলারো শেষ পর্যন্ত বলের কাছে গেলেও ট্যাকল করলেন না। সেই সুযোগে বাঁ পায়ের প্লেসিংয়ে চেন্নাইয়িনকে এগিয়ে দেন ক্রিভেলারো। আশা করা গিয়েছিল, এই গোলের পরে এটিকে জেগে উঠবে। কিন্তু এই গোলটির পরে উল্টে আরও চাপে পড়ে গেলেন হাবাসের ফুটবলারেরা। যা আরও প্রবল হয় কিছু পরেই ডিফেন্ডার আনাস এডাথোডিকা চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ায়। বাকি সময়টা এটিকে রক্ষণ ও মাঝমাঠে দাপালেন চেন্নাইয়িনের
আন্দ্রে শেম্ব্রিরা।
৩৯ মিনিটে চেন্নাইয়িনের দ্বিতীয় গোলের সময়ে এটিকে গোলকিপার অরিন্দম বলের ফ্লাইট বুঝতে ভুল করেছিলেন। অবিনাশ থাপার কর্নারে মাথা ছুঁইয়ে ২-০ করেন শেম্ব্রি। এই গোলের পরের মিনিটেই ব্যবধান কমিয়ে ফেলেছিল এটিকে। বাঁ দিক থেকে হাভিয়ের হার্নান্দেসের বাড়ানো বল ধরে প্রতিযোগিতায় নিজের ১৪ নম্বর গোলটি করে যান রয় কৃষ্ণ। আক্রমণে আরও ঝাঁঝ বাড়াতে এটিকে কোচ দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামিয়েছিলেন ডেভিড উইলিয়ামসকে। কিন্তু ততক্ষণে নিজেদের রক্ষণ আরও আঁটসাঁট করে ফেলেছে চেন্নাইয়িন। অন্তিম লগ্নে প্রতি-আক্রমণ থেকে তাদের হয়ে হাল্কা চিপে ৩-১ করেন নেরিয়াস ভাল্সকিস।
এটিকে: অরিন্দম ভট্টাচার্য, প্রীতম কোটাল, ভিক্টর মনজিল, আনাস এডাথোডিকা (সুসাই রাজ), সুমিত রাঠি, প্রবীর দাস, আর্মান্দো সোসা পেনা, এদুয়ার্দো গার্সিয়া মার্তিন, ফ্রান্সিসকো হাভিয়ের হার্নান্দেজ (ডেভিড জোয়েল উইলিয়ামস), গঞ্জালেস, জয়েশ রানে (রেজিন মার্টিন), রয় কৃষ্ণ।
চেন্নাইয়িন, বিশাল কাইথ, জেরি লালরিনজ়ুয়ালা, এলি সাবিয়াল ফিলহো, লুসিয়ান গইয়ান, লালডিনলিয়ানা আর, লালিয়ানজ়ুয়ালা ছাংতে, এডুইন সিডনি বংশপাল হেনরি (দীপক টাংরি), অনিরুদ্ধ থাপা, রাফায়েল ক্রিভেলারো, নেরিয়াস ভাল্সকিস, আন্দ্রে শেমব্রি
(দ্রাগোস-পেত্রুত ফার্তুলেস্কু)।