অভিনব: ‘এইচ’ অক্ষরের আকারে হাঁটু মুড়ে চেলসির ফুটবলারেরা। ‘এইচ’ অর্থাৎ ‘হিউম্যান’। মঙ্গলবার। টুইটার
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুকে গিরে উত্তাল ক্রীড়া দুনিয়াও। ক্রিকেট থেকে ফুটবল, বাস্কেটবল, সর্বত্র প্রতিবাদে গর্জে উঠছেন খেলোয়াড়রা।
লিভারপুলের অভিনব প্রতিবাদের পরে মঙ্গলবার চেলসির প্রত্যেক ফুটবলার তাদের অনুশীলনে হাঁটু মুড়ে বসে পড়েন। এমন ভাবে তাঁরা বসেছিলেন যাতে ইংরেজি ‘এইচ’-এর মতো অক্ষর তৈরি হয়। ‘এইচ’ অর্থাৎ ‘হিউম্যান’। মানবিক হওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধেও গর্জে উঠেছেন চেলসির ফুটবলারেরা। গোলকিপার কেপা টুইট করেন, ‘‘অনেক হয়েছে। সকলে এক হয়ে আমরা শক্তিশালী হচ্ছি।’’ ইপিএলের আর একটি ক্লাব নিউক্যাসলও ট্রেনিংয়ের সময় হাঁটু মুড়ে বসে প্রতিবাদ জানিয়েছে। হ্যাশট্যাগ চালু হয়েছে ‘আমরা সকলে এক’ (ইউনাইটেড অ্যাজ ওয়ান)।
মিনিয়াপোলিসে জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির গলার উপরে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার তাঁর হাঁটু চেপে ধরে থাকেন আট মিনিটের উপর। শ্বাসরোধে মৃত্যু হয় ফ্লয়েডের। তার পরেই সারা বিশ্ব গর্জে উঠেছে প্রতিবাদে। খেলার দুনিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ থেকে জার্মানির বুন্দেশলিগা, সর্বত্র নৃশংস হত্যার প্রতিবাদ শুরু হয়ে গিয়েছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ বলে দিয়েছে, তারা খেলার মাঠে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু নিয়ে প্রতিবাদী বার্তা দেওয়ার অনুমতি দেবে। এমনকি, ফিফাও জানিয়েছে, ফ্লয়েড নিয়ে প্রতিবাদ জানালে যেন ফুটবলারদের শাস্তি না-দেওয়া হয়।
ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের দুই ফুটবলার পল পোগবা এবং মার্কাস র্যাশফোর্ডও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। করোনাভাইরাস অতিমারিতে নানা সমাজকল্যাণমূলক কাজে জড়িত র্যাশফোর্ড বলেছেন, ‘‘আমি কিছুতেই যেন বুঝে উঠতে পারছি না, এ সব হচ্ছেটা কী? যখন সকলকে এক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, তখন মনে হচ্ছে আমরা সব চেয়ে বেশি বিভক্ত। মানুষ উত্তর চায়। কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনেরও মূল্য আছে। কৃষ্ণাঙ্গ সংস্কৃতির মূল্য আছে।’’
পোগবা ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে এই ঘটনাটা নিয়ে অনেক ভেবেছি। আমার রাগ হচ্ছে, দুঃখ হচ্ছে, করুণা হচ্ছে। জর্জের জন্য দুঃখ হচ্ছে। সব কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের জন্য দুঃখ হচ্ছে, যাঁরা প্রতিনিয়ত বর্ণবেষ্যমের শিকার হন। তা সে ফুটবলে হোক কী কাজে, কী স্কুলে! বর্ণবৈষম্য বন্ধ হতেই হবে।’’ ইংল্যান্ডের তরুণ তারকা জাডন স্যাঞ্চো বুন্দেশলিগায় বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে গোল করে জার্সি খুলে ভিতরে পরা গেঞ্জি দেখান সকলকে। তাতে লেখা ছিল ‘‘জর্জ ফ্লয়েড হত্যার বিচার চাই।’’ জার্সি খোলার জন্য স্যাঞ্চোকে রেফারি হলুদ কার্ড দেখালেও ডর্টমুন্ড তাঁর মানবিকতার প্রশংসা করেছে। জর্জ ফ্লয়েডের গলার উপরে পুলিশ অফিসার হাঁটু চেপে ধরার সময়ে তিনি বলতে থাকেন, ‘‘নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।’’ মার্কিন মুলুক-সহ সারা বিশ্বে এখন অনেকে শুয়ে পড়ে প্রতিবাদ করে বলছেন, ‘‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।’’
খেলায় বর্ণবৈষম্যের প্রভাব এবং প্রতিবাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে যে কারণে দীর্ঘকাল নির্বাসিত করে রেখেছিল ক্রীড়াবিশ্ব। ফ্লয়েডকে নিয়েও প্রতিবাদের উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে। টাইগার উড্স বলেছেন, জর্জ ফ্লয়েড হত্যার ঘটনা স্তব্ধ করে দেওয়া এক বিপর্যয়। পাশাপাশি, তিনি সশস্ত্র প্রতিবাদ বন্ধ করে শান্তির ডাকও দিয়েছেন। উড্স বলেছেন, ‘‘পুলিশের প্রতি শ্রদ্ধা আছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই সীমানা ওরা পেরিয়ে গিয়েছে।’’ বক্সিং কিংবদন্তি ফ্লয়েড মেওয়েদার জুনিয়র জানিয়েছেন, তিনি জর্জের শেষকৃত্যের সব খরচ বহন করবেন।