হুঙ্কার: তিন গোলে পিছিয়েও ড্র করে চেলসির ফুটবলারদের উল্লাস। রয়টার্স
পেনাল্টিতে জোড়া গোল করলেন জর্জিনহো। আয়াখ্সের কাছে ১-৪ পিছিয়ে থেকেও স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে চেলসি ৪-৪ ড্র করে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে চমকে দিল। আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অ্যানফিল্ডে জেন্কের মতো দলকে কোনও রকমে ২-১ হারাল গত বারের চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল।
চেলসির বিরুদ্ধে আয়াখ্স জিতছে ধরে নেওয়া হয়েছিল একটা সময়। খেলার ২ মিনিটেই আত্মঘাতী গোল করে বসেন চেলসির ট্যামি আব্রাহাম। মাত্র ২ মিনিট যেতেই পেনাল্টিতে গোল করে ১-১ করে দেন জর্জিনহো। ২০ মিনিটে ডাচ দলের কুইন্সি প্রোমস ২-১ করেন। ৩৫ মিনিটে আবার আত্মঘাতী গোল করেন চেলসির কেপা আরিজ়াবালাগা। আয়াখ্স ৩-১ এগিয়ে যায়। ৫৫ মিনিটে ডনি ফান ডে বিক ৪-১ করে দিতেই মনে হয়েছিল আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের ক্লাব।
শেষ পর্যন্ত কিন্তু রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ছবি বদলে গেল চেলসির সিজ়ার আথপিলিকুয়েতা ২-৪ করে দিতেই। খেলার ৭১ মিনিটে দ্বিতীয় পেনাল্টি পায় ‘দ্য ব্লুজ’। আবার সেই জর্জিনহো গোল করেন। ফল হয়ে যায় ৩-৪ এবং ৭৪ মিনিটে কাজের কাজটি করে যান চেলসির উনিশ বছর বয়সি
রিস জেমস।
অবশ্য ডাচ দলের কাজটা কঠিন হয়ে যায় তাদের দু’জন ফুটবলার দালে ব্লিন্দ ও জোয়েল ভেল্টম্যান ১ মিনিটের ব্যবধানে লাল কার্ড দেখে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ায়। প্রায় পঁচিশ মিনিট চেলসি ন’জনের ডাচ ক্লাবকে পেয়ে যায়। সুবিধেও তোলে। শেষ মুহূর্তে আথপিলিকুয়েতার গোলমুখী শট আব্রাহাম হাতে না লাগালে ম্যাচটা জিতেও যেতে পারত চেলসি।
এক ঝাঁক তরুণকে খেলিয়েই চেলসি চার ম্যাচে সাত পয়েন্ট তুলে নিজেদের গ্রুপে (‘এইচ’) শীর্ষে রয়েছে। আয়াখ্সের পয়েন্টও সাত। তবে তারা গোল পার্থক্যে পিছিয়ে। এই গ্রুগে স্পেনের ক্লাব ভ্যালেন্সিয়া ও ফ্রান্সের লিল রয়েছে তিন ও চার নম্বরে। ভ্যালেন্সিয়া মঙ্গলবার ৪-১ হারিয়েছে লিল-কে।
এখনও পর্যন্ত যা অবস্থা, তাতে এই গ্রুপ থেকে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে চেলসি ও আয়াখ্সের খেলা এক রকম নিশ্চিত। ম্যাচের পরে চেলসি ম্যানেজার ল্যাম্পার্ড বললেন, ‘‘ম্যাচের কোনও বর্ণনা দিতে পারব না। এই রকম রুদ্ধশ্বাস ও আনন্দ দেওয়া ফুটবল শেষ কবে দেখেছি মনে করতে পারছি না। তবে আয়াখ্সকে সম্মান জানাচ্ছি। ওরাও ভাল খেলেছে।’’ যোগ করেন, ‘‘আমার দলের অনেকেই অনভিজ্ঞ। তবু ওরা যে লড়াইটা করছে তা দেখে আমি মুগ্ধ। ওদের ভুল নিয়ে তাই বেশি মাথা ঘামাতে চাই না।’’
লিভারপুলের তিন পয়েন্ট: লিভারপুল গ্রুপে প্রথম লেগে বাইরের মাঠে জেন্ক-কে হারিয়েছিল ৪-১ গোলে। মঙ্গলবার অ্যানফিল্ডে ১৪ মিনিটে ১-০ করে ফেলায় মনে হয়েছিল আবার য়ুর্গেন ক্লপের ক্লাব সহজেই জিতবে। লিভারপুলের প্রথম গোল জর্জিনিয়ো উইজ়নালডামের। কিন্তু ৪০ মিনিটে জেন্কের মোয়ানা সামাত্তা ১-১ করে দেন। ক্লপ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে আগামী রবিবারের ম্যাঞ্চেস্টার সিটির সঙ্গে ম্যাচটির কথা মাথায় রেখে প্রথম দলের অনেককেই বিশ্রাম দেন। কিন্তু তাতে ‘দ্য রেডস’-এর কাজ একটা সময় বেশ কঠিন হয়ে যায়। জেন্ক বেশ কয়েক বার গোল করে দিচ্ছিল। আবার শেষরক্ষা করেন লিভারপুলের অ্যালেক্স অক্সলেড চেম্বারলেন। গোল হয় ৫৩ মিনিটে। যে ভাবেই জয় আসুক, জেন্কের সঙ্গে ম্যাচ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না ক্লপ। জার্মান কোচের কথায়, ‘‘আমাদের একটাই কাজ ছিল। যে ভাবে হোক জেতা। সেটা পেরেছি। এর বেশি ভাবতে রাজি নই।’’ রবিবার ম্যান সিটির সঙ্গে খেলা বলেই কি প্রথম দলের অনেককে বিশ্রাম দিলেন? ক্লপের জবাব, ‘‘অবশ্যই। এটা তো যে কেউ বুঝবে। ওই ম্যাচটা নিয়ে আমাকে আলাদা প্রস্তুতি নিতেই হচ্ছে। গতবার আমরা লিগ খেতাব পাইনি। এ বার তাই কোনও সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না।’’
ড্র নাপোলির: ‘ই’ গ্রুপে শীর্ষে আছে লিভারপুলই। চার ম্যাচে পয়েন্ট ৯। টেবলে দু’নম্বরে থাকা নাপোলির পয়েন্ট চার ম্যাচে আট। মঙ্গলবার তারা স্যালজ়বুর্গ রেড বুলের সঙ্গে ১-১ ড্র করেছে। এই ম্যাচটা জিততে পারলে ইটালির ক্লাবের নক-আউটে খেলা এক রকম নিশ্চিত হয়ে যেত। নাপোলিতে এখন রীতিমতো ডামাডোল চলছে। প্রেসিডেন্ট অয়োরেলিয়ো দে লরেন্তিসের বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ করলেন ফুটবলারেরা। খোদ প্রেসিডেন্টের একটি নির্দেশ অমান্য করেছেন দিয়েগো মারাদোনার পুরনো ক্লাবের ফুটবলাররা। এই ক্লাবের কোচ এখন কার্লোস আনচেলত্তি। তিনিও ফুটবলারদের সঙ্গে আছেন। মঙ্গলবার রেড বুলের সঙ্গে ম্যাচের আগে তিনি একেবারে সরাসরি প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। ইটালির লিগ সেরি আ-য় এ বার খুব খারাপ খেলছে নাপোলি। টেবলে তারা সাত নম্বরে। শীর্ষে থাকা জুভেন্টাসের থেকে ১১ পয়েন্ট পিছনে। অথচ গত বার লিগে দ্বিতীয় হয়েছিল আনচেলোত্তির ক্লাব।