চেজের সেঞ্চুরিতে আটকে ভারত

গেট আপ, স্ট্যান্ড আপ, স্ট্যান্ড আপ ফর ইওর রাইট, গেট আপ, স্ট্যান্ড আপ, ডোন্ট গিভ আপ দ্য ফাইট— বুধবার সকালে ড্যারেন ব্র্যাভো, মার্লন স্যামুয়েলসদের ড্রেসিংরুমে বেজে উঠেছিল এই বিখ্যাত গান?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৬
Share:

সেঞ্চুরি করে পাল্টা লড়াই চেজের । ছবি: এপি

গেট আপ, স্ট্যান্ড আপ

Advertisement

স্ট্যান্ড আপ ফর ইওর রাইট

গেট আপ, স্ট্যান্ড আপ

Advertisement

ডোন্ট গিভ আপ দ্য ফাইট—

বুধবার সকালে ড্যারেন ব্র্যাভো, মার্লন স্যামুয়েলসদের ড্রেসিংরুমে বেজে উঠেছিল এই বিখ্যাত গান?

উপরের লাইনগুলোর বাংলা তরজমা করলে দাঁড়ায়, ‘জেগে ওঠো, উঠে দাঁড়াও, উঠে দাঁড়িয়ে নিজের অধিকার বুঝে নাও, লড়াই ছেড়ো না’। যা গাওয়া কালজয়ী রেগে শিল্পী বব মার্লের।

তাঁর জন্মভিটেতেই যখন হচ্ছে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় টেস্ট, তখন ক্যারিবিয়ানরা তাঁর গানে তেতে উঠলেও অবাক হওয়ার নেই।

কিংসটনের ঝলমলে দিনে জারমেইন ব্ল্যাকউড, রস্টন চেজদের ঘুরে দাঁড়ানো দেখে প্রশ্নটা তুলে দিলেন স্বয়ং সুনীল গাওস্কর।

কিংসটনের আকাশের এ দিনের ভোলবদলের মতো ক্যারিবিয়ানদের পারফরম্যান্সেও অদ্ভুত পরিবর্তন। যার নেতৃত্বে দেখা গেল বল হাতে পাঁচ উইকেট তুলে নেওয়া রস্টন চেজকে। অবশ্য শুরুটা করেছিলেন ব্ল্যাকউড (৬৩)। তাঁকে অশ্বিন ফেরানোর পর চেজ প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করে দ্বিতীয় টেস্টের শেষ দিন শুধু দলকে ইনিংসে হারের হাত থেকে বাঁচালেন তাই নয়, সিরিজে ক্যারিবিয়ান ব্যাটিংকেও যেন দেখালেন নতুন দিশা। বিরাট কোহালিদের একই সিরিজে জোড়া টেস্ট জয়ের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করার জন্য যেন মরিয়া হয়ে উঠতেই নেমেছিলেন চেজ-ব্ল্যাকউড। পরে শেন ডোরিচও (৭৪)। আগের দিন যারা শেষ করেছিল ৪৮-৪-এ, সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান বুধবার শেষ দিন চা পানের বিরতির পর শেষ খবর ৩৬২-৬। চেজ অপরাজিত ১২৮ রানে। সঙ্গে ব্যাটিং করছেন জেসন হোল্ডার ৪৭ রানে। লিড ৫৮।

হাফ ডজন উইকেট ফেলা, কী এমন ব্যাপার। ম্যাচ শুরুর আগে আত্মবিশ্বাসী উমেশ যাদবের টিভি সাক্ষাৎকার দেখে ভারতীয় শিবির সম্পর্কে সে রকম ধারণা হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ব্ল্যাকউড-চেজ ৯৩ পার্টনারশিপ যেন সেই আত্মবিশ্বাসই গুঁড়িয়ে দিতে চাইল।

আগের দিন ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানদের অসহায় আত্মসমর্পণ দেখে যাঁরা কমেন্ট্রি বক্সে নিজেদের কষ্ট চেপে রাখতে পারেননি, সেই ভিভিয়ান রিচার্ডস, সুনীল গাওস্করও এ দিন একেবারে অন্য মেজাজে। গাওস্করই তুললেন সেই প্রশ্ন, ‘‘মনে রাখবেন, আমরা কিন্তু বব মার্লের দেশে আছি। বিরাট কোহালিরা বোধহয় আজ সকালে শুনতে পায়নি, ওদের উল্টোদিকের ড্রেসিংরুমে কী গান বাজছিল। ওটা বোধহয় মার্লের সেই গানটা, ‘গেট আপ, স্ট্যান্ড আপ...।’’

দিনের তৃতীয় বল ফরোয়ার্ড শর্ট লেগের একটু বাইরে দিয়ে পাঠানোয় অল্পের জন্য বেঁচে যান ব্ল্যাকউড। তার পর যে ভাবে খোঁচা খাওয়া বাঘের মতো আগ্রাসী হয়ে উঠলেন জামাইকান তরুণ, তা অবাক করার মতোই। দিনের প্রথম বলেই যাঁর বিরুদ্ধে জোরদার আবেদন উঠেছিল, ব্ল্যাকউড-মন্ত্রে দীক্ষিত চেজ উদ্বুদ্ধ হয়ে যে ভাবে পরের লড়াইটা লড়লেন, তাও কম মুগ্ধ করার মতো নয়। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অবিশ্বাস্য জয়ের নায়ক ভিভিএস লক্ষ্মণ তাঁদের এই বিস্ময়কর পারফরম্যান্স দেখে টুইট করেন, ‘‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের তিন ব্যাটসম্যানের ফাইটিং স্পিরিট দেখে দারুণ লাগল। মানসিকতায় এই পরিবর্তনের পুরস্কার ওরা নিশ্চয়ই পাবে।’’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই লড়াই যে প্রকৃত ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য সত্যিই তৃপ্তিদায়ক, তা এই টুইটেই স্পষ্ট।

কী করে সম্ভব হল এই প্রত্যাবর্তন? ভিভ রিচার্ডসের ব্যাখ্যা, ‘‘এ কোনও রকেট সায়েন্স নয়, সিম্পল বেসিকস অব ক্রিকেট। বল দেখো, অপেক্ষা করো, যথাসম্ভব নিখুঁত ফুটওয়ার্ক আর তাড়াহুড়ো না করে সঠিক শট বাছাই। এগুলোই তো গত কয়েক দিন ধরে বলে যাচ্ছি। এত দিনে বোধহয় কানে ঢুকল।’’

রিচার্ডসের এই প্রেসক্রিপশনে ব্ল্যাকউড-চেজরা এ দিন যোগ করেন, আগ্রাসন। প্রথম ওভারেই অমিত মিশ্রকে মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারি। শামির পরের ওভারে তাঁর মাথার উপর দিয়ে ছয়ও। সঙ্গে দুটো বাউন্ডারি। আগের দিন রুদ্রমূর্তি ধরা ভারতীয় পেসারদের মাথায় চড়তে না দেওয়ার জন্যই এই ‘কাউন্টার অ্যাটাক’, ব্যাখ্যা রিচার্ডসের। বললেন, ‘‘অফেন্স যে মাঝে মাঝে ডিফেন্সের সেরা অস্ত্র হয়ে ওঠে, এ তারই দৃষ্টান্ত।’’

কিন্তু দিনের বারো নম্বর ওভারের আগে কেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে বল দেওয়া হল না? জয়-ড্র যাই হোক, দিনের শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে এই প্রশ্নটা শুনতে হতেই পারে কোহালিকে। যদিও ঘূর্ণি ম্যাজিকে প্রথম ইনিংসে বিপক্ষকে কাত করা অশ্বিনকে প্রথম ওভারেই ব্ল্যাকউড বাউন্ডারির বাইরে পাঠান লং অফ দিয়ে। আবার দ্বিতীয় ওভারেই প্রথম বল ব্ল্যাকউড অশ্বিনের মাথার উপর দিয়ে গ্যালারিতে উড়িয়ে দেন। তাঁর পরের ওভারেও ফের বাউন্ডারি। ওয়েস্ট ইন্ডিজে একই সিরিজে পরপর দুই টেস্ট জিততে না পারার দুঃস্বপ্ন কোহালিদের যে কাটাতে দেবেন না ভেবেই নেমেছেন, তা এই ব্যাটিংয়েই ছিল স্পষ্ট। যার জন্য কোহালিকে তাঁর দলের ছেলেদের উপর মাঝে মাঝে মেজাজ হারাতেও দেখা যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement