এবার কলকাতা লিগের ডার্বির দৃশ্য। ফাইল চিত্র
কলকাতা লিগের ইতিহাসে প্রথম ভারতীয় দল হিসেবে খেতাব জেতার কৃতিত্ব মহমেডান স্পোর্টিংয়ের। সেটা ১৯৩৪ সালের ঘটনা। তার পরে গত ৮৫ বছরে তিন প্রধানের বাইরে মাত্র একবার অন্য কোনও দল লিগ ঘরে তুলতে পেরেছে। ইস্টার্ন রেল। ১৯৫৮ সালে।
ইস্টার্ন রেলের সেই লিগ জয়ী দলে ছিলেন প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, নিখিল নন্দী, প্রদ্যোৎ বর্মন, ভূপতি মিত্র, দীনু দাস, অসীম সোম, তাপস সোমের মতো ফুটবলারেরা। শেষ দু’জন বিখ্যাত কোচ বাঘা সোমের পুত্র। মোহনবাগানকে (২৮ ম্যাচে ৪৬ পয়েন্ট) মাত্র এক পয়েন্টে পিছনে ফেলে নাটকীয় ভাবে সে বার কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইস্টার্ন রেল (২৮ ম্যাচে ৪৭ পয়েন্ট)। শেষ ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ওয়াকওভার পেয়েছিল তারা। প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ১২ গোল করে দলের একমাত্র লিগ জয়ে সে বার বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন।
তার পরে কেটে গিয়েছে ৬০ বছর কিন্তু তিন প্রধানের বাইরে আর কোনও লিগ চ্যাম্পিয়ন এখনও পাওয়া যায়নি। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডানের বাইরে এই ছয় দশকে রানার্স হয়েছে পাঁচটি দল। আর খেতাবের কাছাকাছি পৌঁছতে পেরেছিল দু’টি দল। ২০০৯ সালে ইউনাইটেড স্পোর্টস আর ২০১৪ সালে টালিগঞ্জ অগ্রগামী। দশ বছর আগে ২০০৯ সালে ইউনাইটেড স্পোর্টস যদি শেষ ম্যাচে মোহনবাগানের কাছে পেনাল্টি গোলে না হারত, তা হলে লিগ চ্যাম্পিয়ন হত তারাই। আবার, ২০১৪ সালে শেষ ম্যাচে টালিগঞ্জ অগ্রগামী যদি জয় পেত ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে তা হলে, লিগ জয়ীর তালিকায় উঠে আসতে পারত তাদের নাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে রকম কিছু ঘটেনি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেও টালিগঞ্জ তৃতীয় হয়।
কিন্তু এ বার সেই ১৯৫৮ সালের ইস্টার্ন রেলের মতোই তিন প্রধানের বাইরে লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। রেল দলের মতোই পিয়ারলেস একটি অফিস দল। গতবার পিয়ারলেস রানার্স হয়েছিল। চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগানের চেয়ে চার পয়েন্ট পিছনে থেকে।
এ বার, এখনই লিগ টেবলের শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছে তারা ৬ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট তুলে নিয়ে। সর্বাধিক ১৭টি গোলও করে ফেলেছে পিয়ারলেস। সব চেয়ে বড় ব্যাপার, প্রথমে মোহনবাগান, তার পরে ইস্টবেঙ্গলকেও হারিয়েছে জহর দাসের দল। সাম্প্রতিক কালে এক লিগ মরসুমে দুই বড় দলকে হারানোর কৃতিত্ব রয়েছে দু’টি দলের। ২০১০ সালে এরিয়ান ও ২০০৪ সালে ইউনাইটেড স্পোর্টস (তখন নাম ছিল এভাররেডি)। পিয়ারলেসের পরে এই মুহূর্তে লিগ টেবলে ৭ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট ও গোল পার্থক্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভবানীপুর। ৭ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে ইস্টবেঙ্গল। ৬ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ জর্জ টেলিগ্রাফ। গত বছরের চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগানের স্থান এখন পঞ্চম। আর মহমেডান আরও এক ধাপ পিছনে— ষষ্ঠ স্থানে। লিগ টেবল দেখেই বোঝা যাচ্ছে সাম্প্রতিক অতীতে এমন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে কখনও পড়েনি তিন প্রধান। লিগ জয়ের দৌড়ে পিয়ারলেস তো রয়েছেই। সঙ্গে রয়েছে ১৯৫২ সালের কলকাতা লিগে রানার্স ভবানীপুর এবং জর্জ টেলিগ্রাফ। কাজেই ৬০ বছর আগে কলকাতা লিগের পুনরাবৃত্তি এ বার দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।