অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ট্রফি হাতে উচ্ছ্বসিত ওজনিয়াকি। ছবি: রয়টার্স
স্বপ্নপূরণ!
জীবনের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়। তাও আবার বিশ্বের এক নম্বর সিমোনা হালেপকে হারিয়ে। ছয় বছর পর মহিলাদের সিঙ্গলসে শীর্ষ স্থান পুনরুদ্ধার। রড লেভার এরিনায় শনিবার দু’ঘণ্টা ৪৯ মিনিটে ৭-৬, ৩-৬ ও ৬-৪ ফলে জয়ের পরে আর নিজেকে সামলাতে পারেননি ডেনমার্কের ২৭ বছর বয়সি টেনিস তারকা। কাঁদতে কাঁদতেই দু’হাতে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়লেন কোর্টের মধ্যে। গত তেরো বছর ধরে এই দিনটার অপেক্ষাতেই যে ছিলেন তিনি।
ওজনিয়াকির বাবা পিয়ত্র পেশাদার ফুটবলার ছিলেন। মা আনা পোল্যান্ডের জাতীয় ভলিবল দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ওজনিয়াকির জন্মের আগেই তাঁরা পোল্যান্ড ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে ডেনমার্কে চলে যান। ফুটবল বা ভলিবল নয়, শৈশবেই ওজনিয়াকি আকৃষ্ট হন টেনিসে। ২০০৫ সালে প্রতিযোগিতামূলক টেনিসের আসরে তাঁকে প্রথম দেখলেন বিশ্বের টেনিসপ্রেমীরা। ২০০৬ সালে এই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেই জুনিয়র বিভাগে শীর্ষ বাছাই ছিলেন ড্যানিশ তারকা। চার বছরের মধ্যেই দখল করেন বিশ্বের এক নম্বর স্থান।
নাটকীয় উত্থান। অথচ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের স্বপ্ন কখনও পূরণ হয়নি ওজনিয়াকির। দু’বার যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের ফাইনালে উঠেও রানার্স হয়ে কোর্ট ছেড়েছেন। উইম্বলডন, অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও ফরাসি ওপেনের মতো টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই যন্ত্রণার বিদায়। সেরিনা উইলিয়ামস-ময় টেনিস বিশ্বে ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছেন তিনি।
ঝড় বয়ে গিয়েছে ওজনিয়াকির ব্যক্তিগত জীবনেও। গল্ফ তারকা রোরি ম্যাকিলরয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে মহিলা সিঙ্গলসের ফাইনালে হালেপের বিরুদ্ধে ম্যাচটা যেন তাঁর কাছে নিজেকে প্রমাণের লড়াই ছিল।
রড লেভার এরিনায় প্রচণ্ড গরমে রুদ্ধশ্বাস প্রথম সেট ৭-৬ জিতে শুরু করেন ওজনিয়াকি। কিন্তু দ্বিতীয় সেটে দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়ান হালেপ। ৬-৩ হারিয়ে দেন ড্যানিশ তারকাকে। কিন্তু এ বার শোকগাথা লিখতে দেননি ওজনিয়াকি। অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে তৃতীয় সেট জেতেন ৬-৪ ফলে। সেই সঙ্গে প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের স্বপ্নও পূরণ হল ওজনিয়াকির। প্রায় ৪০ ডিগ্রি গরমে ম্যাচ চলাকালীন অসুস্থও হয়ে পড়েন হালেপ। কোর্টের মধ্যেই তাঁর রক্তচাপ পরীক্ষা করেন চিকিৎসকরা। অথচ আশ্চর্যরকম শান্ত ছিলেন ওজনিয়াকি। উচ্ছ্বসিত ড্যানিশ তারকা বলেছেন, ‘‘বছরের পর বছর ধরে এই দিনটার স্বপ্নই দেখতাম। অবশেষে স্বপ্নপূরণ। প্রচণ্ড মানসিক চাপে ছিলাম।’’ হালেপ বলেছেন, ‘‘ওজনিয়াকিকে অভিনন্দন। অবিশ্বাস্য খেলেছে। আমাকে ও খেলতেই দেয়নি।’’ উচ্ছ্বসিত সেরিনা উইলিয়ামসের টুইট, ‘আমিও উৎকণ্ঠিত ছিলাম। ওজনিয়াকি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন চ্যাম্পিয়ন ও এক নম্বর হওয়ার জন্য আমি গর্বিত। আর কান্না? এক বছর আগে এই দিনটায় আমিও কেঁদে ফেলেছিলাম।’