পুনর্নির্বাচিত: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফের প্রেসিডেন্ট। বার্ষিক সভা সেরে গাড়িতে উঠছেন সৌরভ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
স্বার্থ-সংঘাত নিয়ে দেশের ক্রিকেটমহলে বহু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। শনিবার সিএবি-তে বার্ষিক সাধারণ সভা শেষেও ফিরে এল স্বার্থ-সংঘাত বিতর্ক। প্রাক্তন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের কোনও কমিটিতে নিয়োগ করার আগে প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখে নিতে হচ্ছে স্বার্থ-সংঘাতের শর্ত।
বাংলার প্রাক্তন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের মধ্যে অনেকেই অন্য কাজের সঙ্গে যুক্ত। কেউ কেউ সংস্থায় কর্মরত। যেমন অরুণ লাল বাংলার কোচ, উৎপল চট্টোপাধ্যায় স্পিন উপদেষ্টা, দীপ দাশগুপ্ত ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করছেন, লোপামুদ্রা ভট্টাচার্য জাতীয় নির্বাচক, এমনকি শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়ও একটি বাংলা চ্যানেলে ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করেন। তাঁরা কোনও কমিটিতে থাকতে পারবেন কি না প্রশ্ন থাকছে। কমিটিতে থাকলেও তাঁদের হয়তো অন্য কর্মস্থান থেকে পদত্যাগ করতে হবে। অ্যাপেক্স কাউন্সিল সদস্য স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়কেও হয়তো ধারাভাষ্যের পেশা ছাড়তে হতে পারে। সিএবি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার দিনে সাংবাদিকদের সৌরভ বললেন, ‘‘প্রত্যেকেই কোনও না কোনও দায়িত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু তার আগে দেখে নেওয়া হবে আদৌ কোনও স্বার্থ-সংঘাত হচ্ছে কি না।’’
শনিবারের গঠিত অ্যাপেক্স কাউন্সিলের অনেক দায়িত্ব। প্রত্যেকটি সাব-কমিটি তাদের গঠন করতে হবে। প্রাক্তন ক্রিকেটারদের একটি কমিটিও গঠন করবেন তাঁরা। ক্রিকেটারদের কমিটির উপরে দায়িত্ব থাকবে বাংলা ক্রিকেটের উন্নতি নিয়ে কাজ করার। যদি কোনও গাফিলতি থাকে, সে ক্ষেত্রে সদস্যরা অ্যাপেক্স কাউন্সিলকে জানাবেন। অ্যাপেক্স কাউন্সিলের সদস্যরা বিষয়টি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে কোচের সঙ্গে কথা বলবেন। প্রাক্তন ভারতীয় ব্যাটসম্যান অশোক মলহোত্র বলছিলেন, ‘‘প্রথম বার বার্ষিক সাধারণ সভায় আসতে পেরে খুবই ভাল লাগছে। এ বার থেকে একসঙ্গে বাংলার ক্রিকেটের উন্নতির কাজ করব।’’ প্রাক্তন ক্রিকেটারদের মধ্যে যদিও রোহন গাওস্কর, সৈয়দ সাবা করিম, অরুণ লাল ও দেবাং গাঁধী আসতে পারেননি।
এ দিন মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে গেল বার্ষিক সাধারণ সভা। বৈঠক শেষে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলেন সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সচিব অভিষেক ডালমিয়া ও যুগ্মসচিব দেবব্রত দাস। ভাইস প্রেসিডেন্ট নরেশ ওঝা ও কোষাধ্যক্ষ দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের নামও সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হল। সৌরভ জানিয়ে দিলেন, এ বার থেকে বিশেষ সদস্যপদ দেওয়া হবে সিএবি-তে। আড়াই লক্ষ টাকার বিনিময়ে পাঁচ বছরের সদস্যপদ পাওয়া যাবে। প্রত্যেকটি ক্লাব থেকে সাত জন সদস্য হতে পারবেন। কোনও ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও সদস্যপদ দেওয়া হবে। সিএবি-র ওয়েবসাইটে সদস্যপদ গ্রহণের ফর্ম পাওয়া যাবে।
রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার আর্থিক উন্নতির জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি আন্তর্জাতিক ও আইপিএল ম্যাচ দেখার সুযোগ পাবেন তাঁরা। ১৮০০ আসন বরাদ্দ থাকবে তাঁদের জন্য। ইডেনের গ্যালারির ‘এল’ ব্লক ছেড়ে দেওয়া হবে সদস্যদের। সৌরভ বলছিলেন, ‘‘আইপিএলের সময় কলকাতা নাইট রাইডার্সের থেকে ১৮০০ টিকিট কিনে নেওয়া হবে। আড়াই লক্ষ টাকা দিয়ে যারা সদস্য হবেন, আগামী পাঁচ বছর বিনামূল্যে তাঁদের খেলা দেখানোর জন্য কিনে নেওয়া হবে ‘এল’ ব্লক। প্রত্যেকে হসপিটালিটি বক্সের সুবিধেও পাবেন। টেস্ট ওয়ান ডে-র ক্ষেত্রেও একই সুবিধা দেওয়া হবে প্রত্যেককে।’’ এখান থেকে সিএবি-র কী লাভ? ‘‘নতুন মাঠ তৈরি হচ্ছে ডুমুরজলায়। তার একটা খরচ আছে। ইন্ডোর স্টেডিয়াম নতুন ভাবে তৈরি করা হচ্ছে, সেখানেও প্রচুর আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন। এই বিশেষ সদস্যপদ দিয়ে এ ধরনের খরচ মেটানোর চেষ্টা করা হবে।’’
চার বছর বার্ষিক সাধারণ সভা বন্ধ থাকায় ভারতীয় বোর্ড থেকে আর্থিক সাহায্য পাওয়া যায়নি। ফলে একশো কোটি টাকার উপর ঘাটতিতে চলছে সিএবি। এ বারের বার্ষিক সাধারণ সভার কয়েক দিন আগেই দশ কোটি টাকা এসেছে বোর্ডের পক্ষ থেকে। সৌরভের বিশ্বাস, বকেয়া থাকা টাকাও দ্রুতই তাঁরা পেয়ে যাবেন।
পরিকাঠামোও উন্নতি করার পরিকল্পনা রয়েছে সৌরভের। কিন্তু বাংলার ক্রিকেটের সুদিন ফেরানোর জন্য তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের দিকে। বলছিলেন, ‘‘শেষ চার বছরে কী হয়নি। বেশি করে প্রতিযোগিতা, ক্রিকেট লিগ সব কিছুই ওদের জন্য। কিন্তু ক্রিকেটারদেরও তো পারফর্ম করতে হবে। মাঠে নেমে জিততে হবে।’’
বাংলার নির্বাচকদের কমিটি ঘোষণা করার কথা ছিল এ দিনই। আগে থেকেই সে কমিটিতে ছিলেন চার জন সদস্য। এ বার আরও একজন বাড়ছে। কিন্তু সরকারি ভাবে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়নি। সৌরভ বলছিলেন, ‘‘সিনিয়র নির্বাচক কমিটিতে আসতে পারেন বরুণ বর্মণ। জুনিয়র নির্বাচক কমিটিতে আসতে পারেন জিতেন সিংহ। কিন্তু সরকারি ভাবে তা এখনও ঘোষণা করা হবে না। আসলে আগে এই নির্বাচকদের কমিটিকে স্ট্যান্ডিং কমিটি হিসেবে দেখা হত। এ বছর তা নাও হতে পারে।’’
সিএবি-র নতুন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচকদের কমিটিও ক্রিকেট কমিটির অংশ। সেখানে উল্লেখ করা আছে, কোনও সদস্যই পাঁচ বছরের বেশি কোনও পদে থাকতে পারবেন না। তাই বিষয়টি নিয়ে সিওএ কী নির্দেশ দেয়, তার উপরেই নির্ভর করছে নির্বাচকদের কমিটির ভবিষ্যৎ। এ দিনই ঠিক হল ওম্বাডসমান ও নীতি-নির্ধারক অফিসারের নাম। প্রাক্তন বিচারপতি শ্যামল কুমার সেন হলেন ওম্বাডসমান। নীতি-নির্ধারক অফিসার করা হল প্রাক্তন বিচারপতি অলোক চক্রবর্তীকে।