ম্যাকালামকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন পাকিস্তানের ‘ফৌজি’

ফাইনালে দুরন্ত শতরান করে পাক ক্রিকেট জনতার চোখের মণি হয়ে উঠলেন উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের খাইবার পাখতুনওয়া এলাকার এই তরুণ তুর্কি ফখর জমান। উর্দুতে যে নামের অর্থ গর্ব। এই মুহূর্তে পাকিস্তানের গর্ব তিনি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৭ ০৪:১০
Share:

হুঙ্কার: রবিবার ওভালে সেঞ্চুরি করার পরে উচ্ছ্বাস পাকিস্তানের ওপেনার ফখর জমানের। ছবি: গেটি ইমেজেস

এ যেন মাঝ দরিয়ায় ডুবন্ত জাহাজকে ফের ভাসালেন তিনি।

Advertisement

চার বছর আগেও পাকিস্তান নৌবাহিনীতে চাকরি করতেন। অবসরে নৌবাহিনী-র আন্তঃ বিভাগীয় ক্রিকেট খেলে বেড়াতেন। এ বার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক। আর ফাইনালে দুরন্ত শতরান করে পাক ক্রিকেট জনতার চোখের মণি হয়ে উঠলেন উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের খাইবার পাখতুনওয়া এলাকার এই তরুণ তুর্কি ফখর জমান। উর্দুতে যে নামের অর্থ গর্ব। এই মুহূর্তে পাকিস্তানের গর্ব তিনি। রবিবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পরে ফখর জমানের বাবা ফকির গুলও বলছেন, ‘‘এতদিনে ফখর নাম রাখাটা সফল হল। আমার ছেলে এখন পাকিস্তানের ফখর।’’

নৌবাহিনী-তে চাকরি করতেন বলে শোয়েব মালিকদের ড্রেসিংরুমে তাঁকে ডাকা হয় ‘ফৌজি’ বলে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচেই ভারতের কাছে লজ্জাজনক হারের পর গোটা পাকিস্তান জুড়ে সমালোচনা হচ্ছিল তাদের কোচ মিকি আর্থারের। ব্যাটিং গভীরতা বাড়াতে এর পরেই ওপেনিং স্লটে আবির্ভাব বাঁ হাতি আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান ফখর জমানের। আর তার পরেই ডুবন্ত পাক ব্যাটিংকে টেনে তুলেছে খাইবারপাখতুনওয়ার এলাকার ব্যাটসম্যান।

Advertisement

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেক লগ্ন থেকেই রান বাড়ছে ফখরের ব্যাটে। দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে করেছিলেন ৩১। তার পরে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৫০। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে করেছিলেন ৫৭। আর ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিরুদ্ধে ১০৬ বলে ১১৪ রানের ঝকঝকে ইনিংস। আর তার সুবাদেই এই মুহূর্তে পাকিস্তান ক্রিকেটে নতুন তারকার আখ্যা পাচ্ছেন ফখর জমান। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর গত দু’বছরে ওপেনিং স্লটে এ পর্যন্ত ১২ টি ওপেনিং জুটি পরখ করেছেন পাক নির্বাচকরা। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এই জায়গায় আজহার আলি এবং ফখর জমানের ওপেনিং জুটি দেখার পর মুখে হাইভোল্টেজ হাসি পাক নির্বাচকদের।

আরও পড়ুন:

হারের যন্ত্রণার সঙ্গে অভিশপ্ত হয়ে রইল বুমরার নো-বল

যাকে নিয়ে এত কথা, সেই ফখর ‘ফৌজি’ জমান যদিও তাঁর এই উত্থানের পিছনে দেখাচ্ছেন প্রাক্তন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাকালামকে। যিনি পাকিস্তান সুপার লিগে ‘লাহৌর কলন্দরস’ টিমে ফখর-এর অধিনায়ক। পাক ক্রিকেটের নবাগত তারকা তাঁর কিউয়ি মেন্টর সম্পর্কে বলছেন, ‘‘প্রথম যখন দেখা হয়, ম্যাকালামের সঙ্গে তখন নেটে উনি আমার ব্যাটিং মন দিয়ে দেখছিলেন। কিছুক্ষণ পর এগিয়ে এসে বলেন, তোমাকে সব ম্যাচেই খেলাব, কিন্তু কথা দিতে হবে এ রকম আগ্রাসী মেজাজেই ব্যাট করবে।’’ তার পরেই লাহৌর কলন্দরস টিমে এক নম্বরে প্রতি ম্যাচ ম্যাকালাম নিয়ম করে খেলাতে শুরু করে দেন ফখরকে।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ধারাভাষ্য দিতে এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডে রয়েছেন ম্যাকালাম। যে কথা মাথায় রেখে এই পাক ব্যাটসম্যান বলছেন, ‘‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অনেক খুঁটিনাটি আমাকে হাতে ধরে শিখিয়েছেন ম্যাকালাম। এ বার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অভিষেকের পর বেশ কিছু মূল্যবান টিপস দিয়ে যান নিজের থেকেই। ইংল্যান্ডে যে পরামর্শ অনুযায়ী খেলে আমার কেরিয়ার উপকৃত হয়েছে।’’

পাকিস্তান কোচ মিকি আর্থারও বলছেন, ‘‘গত দু’বছর ধরে পাকিস্তান সুপার লিগ আয়োজন করার সুফল পাচ্ছে পাকিস্তান জাতীয় দল। যে কারণে ফখর জমান, আজহার আলির মতো ওপেনিং জুটি পাওয়া গিয়েছে।’’

খাইবার পাখতুনওয়ার কাতলাং মহল্লায় জন্ম ফখর-এর। ছোটবেলায় বাড়ি থেকে ক্রিকেট খেলতে দেওয়া হতো না পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটবে বলে। পাড়ায় লুকিয়ে-চুরিয়ে ক্যাম্বিস বলে ক্রিকেট খেলতেন। কিন্তু ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার পরেই পাক নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন ফখর জমান। তাঁর বয়স তখন মাত্র ষোলো। নৌবাহিনীতে থাকার সময়েই ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে গিয়ে চোখে পড়ে যান নৌবাহিনীর ক্রিকেট কোচ আজম খানের। তিনিই ফখরকে পাঠিয়েছিলেন ক্রিকেট মাঠে। তার পর চার বছর আগে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার ইউনুস খানের হাতে পড়েই ফৌজি থেকে ক্রিকেটার হয়ে যান ফখর।

আর সাগর পারে রবিবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পরে ফৌজি ফখর-র চওড়া ব্যাটেই নির্ভর করে এগোতে চাইছে টিম পাকিস্তান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement