এসেছিলেন সুভাষ ভৌমিকের হাত ধরে। সাফল্য না পেয়ে সমালোচিত হচ্ছিলেন। একটা সময়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ারও ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিল মোহনবাগান। কিন্তু এই মুহূর্তে বাগানের সফলতম ফুটবলার তিনিই।
পিয়ের বোয়া!
জিরো থেকে হিরো!
নিজে গোটা মাঠ জুড়ে খেলছেন। একই সঙ্গে সতীর্থদের তাতাচ্ছেন। সোজা কথা— এই ক্যামেরুনিয়ান উইথড্রন ফরোয়ার্ডই এখন বাগানের লিডার।
কী ভাবে সম্ভব হল এই পরিবর্তন?
তাঁর দলের মার্কি ফুটবলারের যে সাফল্য-রহস্য কোচ সঞ্জয় সেন এ দিন ফাঁস করলেন, তার নির্যাস চৌম্বকে এ রকম— ১) বোয়ার ঘনঘন জায়গা পরিবর্তন করার ক্ষমতাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া এবং ২) তাঁকে পুরো টিমকে স্কিম করার দায়িত্ব দেওয়াই না কি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলার পিছনে।
যা ভরা চৈত্রেও বসন্ত এনে দিয়েছে বাগানে।
বাগান কোচ কখনও বলবন্ত কখনও জেজেকে এক স্ট্রাইকার রেখে বোয়াকে ব্যবহার করছেন একটু নীচ থেকে। প্র্যাকটিসের সময় বোয়ার মধ্যে সঞ্জয় নাকি কতগুলো গুণ আবিষ্কার করেছিলেন।
যেমন তাঁর বল কন্ট্রোল ক্ষমতা। প্রয়োজনে ম্যাচ স্লো করে দেওয়া। অনায়াসে সুইচ করতে পারা। প্রয়োজনে নীচে নেমে ডিফেন্ডারদেরও সাহায্য করা। ম্যাচে বোয়ার এই গুণগুলো কাজে লাগাতেই মাঠে তাঁর হাতে (না কি পায়ে!) টিমকে চালনার গুরুদায়িত্ব ছেড়ে দেন কোচ। ‘‘ওর মধ্যে একটা লিডারশিপ কোয়ালিটি আবিষ্কার করেছিলাম। আর সেটা ও এখন ব্যবহার করতে পারার আনন্দে আরও বেশি খোলা মনে খেলছে। আর তাতে লাভবান হচ্ছে টিমই,’’ বললেন কোচ।
বোয়া নিজেও কোচের সঙ্গে একমত। এ দিন ফোনে ধরা বলে দিলেন, ‘‘শুরুতে আমি এখানকার সিস্টেমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছিলাম না। বুঝছিলামই না কী ভাবে খেললে ভাল খেলব! হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। আমাদের টিমের তখনকার কোচ সুভাষ ভৌমিক আমাকে বোঝাতেন। সঞ্জয় সেন কোচ হয়ে আসার পর তিনি আমার কাছে পরিষ্কার জানতে চান, আমার কোথায় সমস্যা? কী সমস্যা? আর সেই সব যাতে কাটিয়ে উঠতে পারি তার উপায়ও বলে দেন।’’ না থেমেই বোয়া আরও যোগ করলেন, ‘‘এর মধ্যেই আমি এখানকার ফুটবল স্টাইলের সঙ্গেও অভ্যস্ত হয়ে উঠি। এই মুহূর্তে আমরা টিম গেম খেলছি, তাই আরও ভাল খেলছি। সাফল্য পাচ্ছি। আমি তো বলব কোনও এক জন ফুটবলারের কৃতিত্বে মোহনবাগান আই লিগে টানা দশ ম্যাচ অপরাজিত নেই, পয়েন্টে সবার আগে নেই। আর তাই আই লিগ জিততে হলে আমাদের এই টিম গেম খেলার ছন্দটাই ধরে রাখতে হবে। সেটা ধরে রাখাটাই এখন আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জের।’’
হয়তো চেতলার বঙ্গসন্তান কোচ সঞ্জয় সেনের স্ট্র্যাটেজিতে বোয়া সাফল্য পেয়েছেন।
তবে যাঁর হাত ধরে এই শহরে আসা তাঁর সেই নিউ আলিপুরের বাসিন্দা, অন্য বাঙালি কোচ সুভাষ ভৌমিককে এখনও মিস করেন ক্যামেরুনের বছর তিরিশের ফুটবলারটি। কলকাতার ক্লাবে তাঁকে খেলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সুভাষকে বারবার কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলছেন না বোয়া। একটা সময়ে এই বোয়াকে আনার জন্য অনেক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল সঞ্জয়ের পূর্বসুরি বাগান কোচকে। শনিবার অবশ্য সুভাষ বলে দিলেন, ‘‘এর আগেও ডগলাস, জুনিয়র, ওকোরো, বিলালদের আনার পরে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল আমাকে। ভারতবর্ষের ফুটবলে এ আর নতুন কী?’’ গর্ব-স্বস্তির পাশাপাশি যেন একরাশ অভিমানও ঝরে পড়ল সুভাষের গলা থেকে।
ময়দানে এমনও কথা উড়ছে যে, সুভাষের পোঁতা গাছের ফল খাচ্ছেন সঞ্জয়। অনেকে আবার দেখছেন ব্যপারটাকে এ ভাবে—সুভাষের হাতে গড়া স্বপ্নের টিমে সঞ্জীবনী শক্তি দান করেছেন সঞ্জয়। তবে আই লিগে মাত্র দশ ম্যাচ হয়েছে। আরও দশটা ম্যাচ খেলতে হবে বোয়াদের। তাই এখনই চ্যাম্পিয়নশিপের কথা না ভেবে মোহন কোচ ফুটবলারদের বলে দিয়েছেন, ‘‘এক নম্বর জায়গা ধরে রাখাই এখন আসল চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জকে উপভোগ করে খেলো। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য আলাদা চাপ নিও না।’’ উল্টো দিকে ফুটবলাররা কোচকে আশ্বস্ত করে বলছেন, ‘‘বাগানের অপরাজিত থাকার রেকর্ড ধরে রাখতে নিজেদের নিংড়ে দিতে আমরাও তৈরি।’’
সাফল্যের আবহেও অবশ্য টিমের মনোভাবে এতটুকু হালকা দিতে রাজি নয় বাগান কর্তৃপক্ষ। আগের ম্যাচে সালগাওকরের বিরুদ্ধে শেষ মিনিটে মাথা গরম করে লাল কার্ড দেখার জন্য সম্ভবত সোমবার শো-কজ করা হতে পারে ডিফেন্সিভ মিডিও বিক্রমজিৎ সিংহকে। এর আগে ডেম্পো ম্যাচে একই ভাবে উত্তেজিত হয়ে লাল কার্ড দেখেছিলেন শেহনাজ। তাঁকেও শো-কজ করা হতে পারে।