মেরি কম। —ফাইল চিত্র।
মেরি কম অবসর নেননি। বুধবার ঘোষণা করেছিলেন যে, তিনি আর খেলবেন না। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালেই জানিয়ে দিলেন যে, তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তিনি এখনও অবসর নেননি।
৪০ বছর বয়স পার হয়ে যাওয়ায় মেরি কম আর অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।সেই কারণে অবসর নিচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন বুধবার। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে মেরি কম বলেন, “আমি অবসর নিইনি। আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আমার যদি অবসর ঘোষণা করার হয়, তা হলে সংবাদমাধ্যমকে নিজে ডেকে জানিয়ে দেব।”
মেরি কম জানিয়েছেন যে, তিনি সংবাদমাধ্যম থেকেই জেনেছেন তাঁর অবসরের কথা। ২০১২ সালে অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন মেরি কম। এশিয়ান গেমস, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এবং কমনওয়েলথ গেমসে সোনাজয়ী বক্সার বলেন, “সংবাদমাধ্যম থেকেই জানতে পেরেছি যে, আমি অবসর নিয়েছি। কিন্তু সেটা সত্যি নয়। বুধবার আমি একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে বলেছি যে, আমার মধ্যে এখনও খিদে রয়েছে। কিন্তু অলিম্পিক্সে বয়সের বাধা রয়েছে, সেই কারণে অংশগ্রহণ করতে পারব না। এখন আমি নিজের ফিটনেসের উপর নজর দিয়েছি। অবসর নেওয়ার হলে নিজেই জানিয়ে দেব।”
আন্তর্জাতিক বক্সিং অ্যাসোসিয়েশনের নিয়ম অনুযায়ী, কোনও পুরুষ বা মহিলা বক্সারের বয়স ৪০ পেরিয়ে গেলে আর কোনও প্রথম সারির প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারেন না। মেরি কমের বয়স ৪১ বছর। তাই তাঁর পক্ষে এখন আর কোনও প্রথম সারির প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। বুধবার তিনি বলেছিলেন, “আমি এখনও ক্ষুধার্ত। কিন্তু বয়সজনিত নিয়মের কারণে আমি আর কোনও প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারব না। আরও খেলতে চাই, কিন্তু আমার বয়স আমায় থামতে বাধ্য করল। আমায় অবসর নিতে হল। আমি আমার জীবনে সব কিছু অর্জন করেছি।”
১৯৮২ সালে মণিপুরের কাঙ্গাথেই গ্রামে জন্ম মেরির। ১৮ বছর বয়সে পেনসিলভেনিয়ায় বক্সিং প্রতিযোগিতায় ৪৮ কেজি বিভাগে রানার-আপ হয়ে সকলের নজর কাড়েন। এর কয়েক বছর পরেই প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে বক্সিং বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক জেতেন। ২০০৫, ২০০৬, ২০০৮ এবং ২০১০ সালেও তিনি জেতেন এই পদক। ২০০৮ সালের পদক জেতার পর সন্তান প্রসবের কারণে নিজেকে বক্সিং থেকে সরিয়ে নেন তিনি। ২০১২ সালে অলিম্পিক পদকজয়ের পর নিজের তৃতীয় সন্তান প্রসবের জন্য ফের বিশ্রামে চলে যান মেরি।
মেরি বক্সিং ইতিহাসে প্রথম মহিলা বক্সার যিনি ছ’বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। পাঁচ বারের এশিয়ান চ্যাম্পিয়নও হয়েছেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় মহিলা বক্সার যিনি ২০১৪ সালে এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। ২০১৬ সালে তৎকালীন ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁকে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে মনোনীত করেন। ২০০৩ সালে অর্জুন পুরস্কার, ২০০৬-এ পদ্মশ্রী, ২০১৩-এ পদ্মভূষণ এবং ২০২০ সালে পদ্মবিভূষণে সম্মানিত করা হয় মেরিকে। ২০১৪ সালে মেরির জীবনের আধারে একটি হিন্দি ছবিও তৈরি হয়। ওই ছবিতে মেরির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া।