সম্বল বলতে দু’টি সুটকেস। তাই নিয়েই ১৯৯৪ সালে কানাডা চলে এসেছিলেন সস্ত্রীক নিকু আন্দ্রেস্কু। আদতে রোমানিয়ার বাসিন্দা নিকু ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। চাকরি নিয়ে এসেছিলেন কানাডায়।
পরে তাঁর স্ত্রী মারিয়াও চাকরি পেলেন টরন্টোর একটি সংস্থায়। কয়েক বছর পরে সংসারে এল নতুন অতিথি। ২০০০ সালের ১৬ জুন জন্ম হল আন্দ্রেস্কু দম্পতির কন্যার। নাম রাখা হল বিয়াঙ্কা।
এর পরও দোলাচল আন্দ্রেস্কু পরিবারে। রোমানিয়া, না কানাডা, কোথায় থাকবেন, স্থির করে উঠতে পারছিলেন না। সাত বছরের মেয়েকে নিয়ে রোমানিয়া ফিরে এলেন মারিয়া। কানাডায় থেকে গেলেন নিকু, একা।
রোমানিয়ায় ঠাকুমা ও দিদিমার কাছে শৈশবের একটা বড় সময় কেটেছে বিয়াঙ্কার। সে সময় একটা নতুন জিনিসের স্বাদ পেলেন তিনি। শিখলেন নতুন খেলা, টেনিস।
কিন্তু রোমানিয়ার পাঠ আবার চুকল। এবং এ বার তা বরাবরের জন্য। কয়েক বছর পরে মায়ের সঙ্গে বিয়াঙ্কা চলে গেল কানাডায়, বাবার কাছে। ওখানেই স্থায়ী ভাবে থাকবেন, তখন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন আন্দ্রেস্কু দম্পতি।
রোমানিয়া থেকে স্মৃতির সঙ্গে আর যা নিয়ে গেলেন বালিকা বিয়াঙ্কা, তা হল টেনিস খেলার নেশা। তখন তাঁর আদর্শ কিম ক্লিস্টার্স। পরবর্তী কালে তাঁর পছন্দের তারকার তালিকায় এসেছেন সিমোনা হালেপ এবং উইলিয়ামস বোনেরা। কিন্তু কিমের জায়গা কেউ নিতে পারেননি।
টরন্টোর টেনিস কানাডা-র প্রশিক্ষণে এগোতে থাকে বিয়াঙ্কার চর্চা। ২০১৪ সালে প্রথম জুনিয়র খেতাব। পরের বছর ইন্টারন্যাশনাল টেনিস ফেডারেশনে আত্মপ্রকাশ। তার পরের বছর আইটিএফ খেতাব।
চলতি বছরেই জয়ী হয়েছেন ইন্ডিয়ান ওয়েলস ওপেন এবং কানাডিয়ান ওপেনে। তবে সবথেকে বড় চমক অপেক্ষা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র ওপেন অবধি। ইতিহাস লিখলেন বিয়াঙ্কা।
২৪ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার মুখে এসেও ফের অধরাই থেকে গেল সেরিনার স্বপ্ন। তাঁকে ৬-৩, ৭-৫ স্কোরে হারিয়ে প্রথম কানাডীয় মহিলা হিসাবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতলেন বিয়াঙ্কা আন্দ্রেস্কু।
২০০৬ সালে মারিয়া শারাপোভার পর কনিষ্ঠতম মহিলা হিসাবে ১৯ বছর বয়সি আন্দ্রেস্কু নিজের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালেই জিতলেন। ছুঁয়ে ফেললেন মনিকা সেলেসকে। তাঁর খেলার মধ্যে কিম ক্লিস্টার্সের খেলার ঘরানা খুঁজে পান বিশেষজ্ঞরা।
১৯৯৯ সালে সেরিনা যুক্তরাষ্ট্র ওপেনেই খেলোয়াড় জীবনের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার সময় বিয়াঙ্কার জন্মই হয়নি। তারও এক বছর পরে জন্মান তিনি। টেনিসের ওপেন যুগে গ্র্যান্ড স্ল্যামের দুই ফাইনালিস্টের মধ্যে এত বেশি বয়সের পার্থক্য (১৮ বছর) এর আগে দেখা যায়নি।
চলতি মরসুমেই রজার্স কাপের ফাইনালে সেরিনার মুখোমুখি হয়েছিলেন বিয়াঙ্কা। কিন্তু চারটি গেম খেলার পরেই চোটের জন্য ম্যাচ ছেড়ে দিয়েছিলেন সেরিনা।
কেরিয়ারে একবার তাঁর বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ ম্যাচ খেলার স্বপ্ন ছিল বিয়াঙ্কার। খেতাব-লাভের মধ্যে সেই স্বপ্ন পূর্ণ হল তাঁর।
টেনিসের সব ধরনের কোর্টে লম্বা ম্যাচ খেলতে চান তিনি। সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে তাঁর ভরসা মেডিটেশন। মায়ের কাছ থেকে শেখার পরে ১২ বছর বয়স থেকে মেডিটেশনে অভ্যস্ত তিনি। খেলার মাঝে মনসংযোগ বাড়াতে মেডিটেশনেই ভরসা করেন তিনি।