লড়াই: আমিরশাহির বিরুদ্ধে ফ্রেন্ডলিতে মনবীর। ফাইল চিত্র
দুবাইয়ে আন্তর্জাতিক ফিফা ফ্রেন্ডলিতে ওমানের বিরুদ্ধে পিছিয়ে পড়েও দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছিল ভারতীয় দল। মনবীর সিংহের গোলে ১-১ হয়েছিল ম্যাচ। কিন্তু পরের ম্যাচেই বিপর্যয়। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিরুদ্ধে ০-৬ হারের লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়েন ভারতীয় দলের ফুটবলারেরা।
ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্তিমাচ গত সোমবার আমিরশাহির বিরুদ্ধে ম্যাচে প্রথম একাদশে আট জন ফুটবলার পরিবর্তন করেছিলেন। সন্দেশ জিঙ্ঘান না থাকায় রক্ষণের ছন্দটাই পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ম্যাচের পরেই অনেকে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন ইগরের পরিকল্পনা নিয়ে। তাঁদের মতে, ফ্রেন্ডলি ম্যাচ হলেও ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৭৪ নম্বরে থাকা আমিরশাহির বিরুদ্ধে সন্দেশ, বিপিন সিংহ, অমরিন্দর সিংহ-সহ আট ফুটবলার পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ভুল।
আমিরশাহি ম্যাচে বিপর্যয়ের পরে সরকারি ভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি জাতীয় কোচ। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক ফুটবলে কোন কোন ফুটবলার খেলার যোগ্য, তা দেখে নেওয়াই মূল উদ্দেশ্য ছিল তাঁর। ম্যাচের ফল নিয়ে তিনি খুব একটা চিন্তিত নন। তাঁর যুক্তি, একমাত্র ফ্রেন্ডলি ম্যাচেই দল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব। কোনও প্রতিযোগিতায় এই ধরনের ঝুঁকি নেওয়া যায় না। অভিজ্ঞতা অর্জন করার জন্য ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের চেয়ে এগিয়ে থাকা দলগুলির বিরুদ্ধে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ইগর। সূত্রের খবর, দ্রুত ফুটবলারদের সম্পর্কে তাঁর পর্যবেক্ষণ জানাবেন সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে।
ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা দুই তারকা ভাইচুং ভুটিয়া ও আই এম বিজয়নও ইগরের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বুধবার সিকিম থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে ভাইচুং বললেন, ‘‘আমার মতে আমিরশাহির বিরুদ্ধে ০-৬ হার নিয়ে গেল গেল রব তোলার কোনও কারণ নেই। ইগর ঠিক পথেই এগোচ্ছেন। মনে রাখতে হবে ম্যাচটা ফ্রেন্ডলি ছিল।’’ তিনি যোগ করলেন, ‘‘আইএসএল থেকে এ বার অনেক নতুন ফুটবলার জাতীয় দলে নিয়েছেন ইগর। ফ্রেন্ডলি ম্যাচই হচ্ছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সেরা মঞ্চ। ইগর কোনও ভুল করেননি।’’
সপ্তম আইএসএলে দুর্দান্ত খেলেছেন বিপিন সিংহ, লিস্টন কোলাসো, আকাশ মিশ্র, মাশহুর শেরিফ-সহ একঝাঁক ফুটবলার। জাতীয় দলে অভিষেক ম্যাচে বিপিন অসাধারণ খেললেও লিস্টন নজর কাড়তে ব্যর্থ। ভাইচুং বলছিলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক ফুটবল সম্পূর্ণ আলাদা। আইএসএলে ভাল খেলা ফুটবলারদের আদৌ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে টিকে থাকার যোগ্যতা আছে কি না, তা দেখা অত্যন্ত জরুরি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার জন্য শুধু দক্ষতা থাকলেই হয় না, মানসিক ভাবেও শক্তিশালী হতে হয়। জাতীয় দলে নতুন ডাক পাওয়া ফুটবলারদের তা আছে কি না, তা পরীক্ষা না করলে কোচ বুঝবেন কী করে? এই ধরনের পরীক্ষা করতে হয় ফ্রেন্ডলি ম্যাচেই।’’
ভাইচুংকে সমর্থন করে ত্রিশূর থেকে ফোনে বিজয়ন বললেন, ‘‘ভারতের বর্তমান দলে অধিকাংশই তরুণ ফুটবলার। ওদের অভিজ্ঞতা কম। সুনীল ছেত্রীকে ছাড়াই ওরা অসাধারণ খেলে ড্র করেছিল ওমানের বিরুদ্ধে। তখন সকলেই দারুণ প্রশংসা করেছিলেন ইগরের পরিকল্পনার। আমিরশাহির বিরুদ্ধে হারতেই সমালোচনা শুরু হয়ে গেল।’’ তিনি আরও বললেন, ‘‘ফ্রেন্ডলি ম্যাচই তো পরীক্ষা-নিরীক্ষার সেরা জায়গা। কেউ কেউ বলছেন, আমিরশাহির মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলার পরিকল্পনাই ভুল ছিল। আমি কিন্তু তাঁদের সঙ্গে একমত নই। ফ্রেন্ডলি ম্যাচে দুর্বল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলা অর্থহীন। ফুটবলারেরা কেমন তা বোঝা যায় না। শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেললেই বাস্তবটা পরিষ্কার হয়ে যায়।’’