ওয়ানডে ক্রিকেটে গত দুই দশকের সেরা ভারতীয় দল। এই কুড়ি বছরে একদিনের ক্রিকেট বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। জিতেছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি। আবার বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠে হেরে যাওয়ার ঘটনাও রয়েছে। এই সময়ে ভারতীয় ক্রিকেট সাক্ষী থেকেছে অনেক তারকার। তাঁদের মধ্যে থেকে সেরা ১১ বেছে নেওয়া রীতিমতো দুরুহ। একেবারেই পারফরম্যান্সের নিরিখে বেছে নেওয়া হল এই দল। দেখে নিন, আপনার দলের সঙ্গে এই দলের মিল আছে কি না।
ওপেনিংয়ে অবশ্যই সচিন তেন্ডুলকর। একবিংশ শতকে একদিনের ক্রিকেটে ৪৬.৭০ গড়ে ৯৮৫৫ রান করেছেন তিনি। যার মধ্যে ২৫ সেঞ্চুরি রয়েছে। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে ফরম্যাটে তিনি করেছেন ডাবল সেঞ্চুরি। জিতেছেন বিশ্বকাপও। ক্রিকেট ইতিহাসে ৫০ ওভারের ফরম্যাটে তাঁর চেয়ে বেশি রান কেউ করেননি।
সচিনের সঙ্গী সহবাগ হতেই পারতেন। কিন্তু, আমরা রোহিত শর্মাকেই রাখলাম। তিনিই প্রথম যিনি এই ফরম্যাটে আড়াইশো রান করেন। তাঁর ২৬৪ রানই এই ফরম্যাটে এখনও সর্বাধিক। ওয়ানডে-তে তিন বার ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। এটাও রেকর্ড। গত বছর বিশ্বকাপে তাঁর ব্যাটে আসা পাঁচ সেঞ্চুরি।
ওপেনিংয়ে জায়গা হচ্ছে না, তাই তিনে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তিন নম্বরে নেমে ৩২ ইনিংস রয়েছে তাঁর। গড় ওপেনিংয়ের (৪১.৫৭) চেয়ে অনেক বেশি, ৫২.৭১। একবিংশ শতাব্দীতে ১৭৯ ইনিংসে ৬৬৫৮ রান করেছেন তিনি। যার মধ্যে সেঞ্চুরির সংখ্যা ১৩। টিম ইন্ডিয়া গড়ে তোলার রূপকার সৌরভই দলের অধিনায়ক।
তিনে সৌরভ, তাই চারে বিরাট কোহালি। ‘চেজমাস্টার’ বলে পরিচিত কোহালির অভিষেক হয় ২০০৮ সালে। ২৪৮ ম্যাচে ৫৯.৩৩ গড়ে তিনি করেছেন ১১৮৬৭ রান। তাঁর সেঞ্চুরির সংখ্যা ৪৩। যা এই ফরম্যাটে সচিনের ৫১ শতরানের চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই। ৩১ বছর বয়সি কোহালি কোথায় থামবেন কে জানে।
পাঁচে অবশ্যই যুবরাজ সিংহ। ২০০০ সালে আইসিসি নকআউট ট্রফিতে সাড়া জাগানো আবির্ভাব তাঁর। ২০১৯ সালে অবসর নেওয়ার আগে ৩০৪ ম্যাচে ৮৭০১ রান করেন তিনি। গড় ৩৬.৫০। সঙ্গে ১১১ উইকেটও এসেছে বাঁ-হাতি স্পিনে। ২০১১ বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার হয়েছিলেন তিনি। করেছিলেন ৩৬২ রান, নিয়েছিলেন ১৫ উইকেট।
ছয়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ‘ফিনিশার’ হিসেবে যিনি প্রসিদ্ধ। দলের উইকেটকিপারও তিনি। এই ফরম্যাটে ১০ হাজারের বেশি রান রয়েছে তাঁর। গড় ৫০.৬০। ঠান্ডা মাথায় রান-তাড়া করে জয় ছিনিয়ে আনায় তাঁর সুনাম সর্বজনবিদিত। কিপার হিসেবে তাঁর শিকার সংখ্যা ৪৪৪। বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক তিনি, কিন্তু সৌরভ দলে থাকতে কী ভাবেই বা এমএসডি নেতা হন!
এর পর রবীন্দ্র জাডেজা। ১৬৫ একদিনের ম্যাচে ৩১.৮৮ গড়ে ২২৯৬ রান করেছেন তিনি। তুলে মারতে পারেন। স্ট্রাইক রেট ৮৫.৯৬। এর সঙ্গে বাঁ-হাতি স্পিনে নিয়েছেন ১৮৭ উইকেট। ইকনমি রেট ৪.৮৯। দ্রুত ওভার শেষ করে ব্যাটসম্যানদের উপর চাপ বাড়ানোয় সিদ্ধহস্ত। সঙ্গে দুর্দান্ত ফিল্ডিং। তিনি দলের থ্রি-ডি ক্রিকেটার।
ইরফান পাঠান থাকছেন অলরাউন্ডারের ভূমিকায়। ২০০৪ থেকে ২০১২ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ১২০ ম্যাচে বাঁ-হাতি পেসার নিয়েছেন ১৭৩ উইকেট। ব্যাটসম্যান হিসেবেও নির্ভরযোগ্য, পাঁচটি হাফ-সেঞ্চুরি সহ করেছেন ১৫৪৪ রান। চোট-আঘাতে ভুগতে না হলে পাঠানের পরিসংখ্যান আরও উজ্জ্বল দেখাত।
এর পর হরভজন সিংহ। গত দুই দশকে ২২৩ ম্যাচে জালন্ধরের অফস্পিনার নিয়েছেন ২৫১ উইকেট। অনিল কুম্বলের সাফল্য বেশি ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত আগের দশকে। আর রবিচন্দ্রন অশ্বিন এই সময়ে খেলেছেন হরভজনের চেয়ে কম ওয়ানডে। নিয়েছেন কম উইকেটও। ফলে, ভাজ্জিই থাকছেন দলে। তা ছাড়া বিশ্বকাপজয়ী দলেরও সদস্য তিনি।
জাহির খান শুরু করবেন নতুন বলে। ভারতীয় ক্রিকেটে অনেকের মতে তিনিই দেশের সর্বকালের সেরা বাঁ-হাতি পেসার। ২০০ একদিনের ম্যাচে ২৯.৪২ গড়ে জাহির নিয়েছেন ২৮২ উইকেট। ভারতীয় পেসারদের মধ্যে এই ফরম্যাটে জাহিরের চেয়ে শুধু দু’জন বেশি উইকেট নিয়েছেন। বিশ্বকাপজয়ী দলের হয়ে প্রতিযোগিতায় ১৮.৭৬ গড়ে ২১ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
এর পর জশপ্রীত বুমরাকে দলে না রেখে উপায় নেই। খেলেছেন মাত্র ৬৪ ওয়ানডে। ২৪.৪৩ গড়ে নিয়েছেন ১০৪ উইকেট। ইকনমি রেট ৪.৫৫। ডেথ ওভারে তাঁকে মারা কষ্টকর। গতির বৈচিত্রে, বাউন্সের হেরফেরে বুমরা অতিষ্ঠ করে তোলেন ব্যাটসম্যানকে। আর তাই আশিস নেহরা, অজিত আগরকর, মহম্মদ শামিদের থেকে এগিয়ে থাকছেন তিনি।