অশোক দিন্দার এই বিধ্বংসী মেজাজও জেতাতে পারল না বাংলাকে। শুক্রবার নাগপুরে। ছবি: পিটিআই।
এক দিন আগেই যে দুর্ধর্ষ লড়াইটা করেছিলেন বাংলার দুই ব্যাটসম্যান, বোলারদের ব্যর্থতায় তা পুরোপুরি বিফলে গেল। দিনের শুরুতে মুম্বই ব্যাটিংয়ে অশোক দিন্দার আগ্রাসনের আগুন লাগলেও সেই আগুন নিভিয়ে ম্যাচ বাঁচিয়ে নেয় তাদের মিডল অর্ডার। প্রজ্ঞান ওঝার বলের ঘূর্ণি সেই আগুন আর জ্বালাতে পারেনি।
জয়টা মুম্বইয়ের চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন ছিল বাংলার। নাগপুর থেকে ছ’পয়েন্ট পেলে মনোজ তিওয়ারির দল নকআউটের দিকে বেশ কিছুটা এগোতে পারত। আর মুম্বই তিন পয়েন্ট পেলেই নকআউটে চলে যেত। বৃহস্পতিবার মনোজ ও সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের ২৭১ রানের পার্টনারশিপ তাঁদের জেতার জায়গায় নিয়েও এসেছিল। এ দিন বাংলার দরকার ছিল দশ উইকেট, মুম্বইয়ের ৩০৮ রান। কিন্তু শেষ দিন সারাক্ষণ উইকেটে কামড়ে পড়ে থেকে ম্যাচ বাঁচিয়ে নিল মুম্বই। গত বারের চ্যাম্পিয়নরা রঞ্জি ট্রফির শেষ আটে জায়গা পাকা করে নিলেও বাংলার পথটা বেশ কঠিন হয়ে গেল। শেষ দুটো ম্যাচ থেকে অন্তত ৯ পয়েন্ট না এলে নকআউটে ওঠা কার্যত অসম্ভব।
অধিনায়ক মনোজ অবশ্য এখনও আশায়, তাঁরা পারবেন। এ দিন নাগপুর থেকে ফোনে বললেন, ‘‘খুবই হতাশ আমি। জেতার জায়গায় চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা খুব ভাল ব্যাট করেছে। আমরা বোলিংয়ের শুরুটা ভাল করেও তা ধরে রাখতে পারলাম না। আশা করি এই ম্যাচের রেশ ধরে শেষ দুটো ম্যাচ আমরা ভাল খেলব। দুই ম্যাচেই ফলাফল হতে পারে। শনিবার দিল্লি পৌঁছেই প্রস্তুতি শুরু করে দেব।’’
এ দিন সকালে আড়াই ওভার ব্যাট করে মুম্বইকে ৩০৮-এর টার্গেট দিয়ে অল আউট হয়ে যাওয়ার পর বাংলার জয়ের যথেষ্ট আশা ছিল। সকালের আর্দ্রতা কাজে লাগিয়ে দিন্দা বাইশ রানে বিপক্ষের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর যা ক্রমশ বাড়ে। লাঞ্চের পর মুম্বই ৬৭-৫ হয়ে যায়। এর পরেও একটা উইকেট পেতে পারতেন দিন্দা। কিন্তু অভিষেক নায়ারের বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউ-র জোরালো আবেদন নাকচ হয়ে যায়। বাংলা শিবিরের দাবি ওটা আউট ছিল। ওই সময়ে ১৫ রানে নায়ার ফিরে গেলে মুম্বই আরও বিপদে পড়ত। নায়ারই শেষে ৫১ করে শুভম রঞ্জনের (৭৬) সঙ্গে ১১২-র পার্টনারশিপ গড়েন। দুটো কঠিন ক্যাচও পড়ে।
দিন্দার এ দিনই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সাড়ে তিনশো উইকেট হয়ে গেল। সন্ধেয় ফোনে বলছিলেন, ‘‘সকালে পরপর তিনটে উইকেট ফেলে দিয়ে খুব চেষ্টা করেছিলাম। উইকেটে পারচেজও ছিল। কিন্তু ওরা একটা বলেও ঝুঁকি নেয়নি। অভিষেকের আউটটা দিলে হয়তো আমরাই জিততাম। তবে এই ম্যাচ বুঝিয়ে দিল ক্রিকেটে কখন কী হবে, কিছুই বলা যায় না। তাই নকআউটে ওঠা নিয়ে এখনও আমি আশাবাদী।’’
আর প্রজ্ঞান ওঝা? চলতি মরসুমে তাঁর স্পিন ম্যাজিক এখনও অদৃশ্য। সাত ইনিংসে ১০৬ ওভার করে মাত্র ন’উইকেট। এই পিচে চতুর্থ ইনিংসে যে ২৩০-ও তাড়া করা সোজা হবে না, আগের দিনই বলেছিলেন মনোজ। তার চেয়ে অনেক বড় টার্গেট মুম্বইকে দিয়েছিল বাংলা। সাড়ে তিন দিন পরেও কি নাগপুরের উইকেট স্পিন সহায়ক হয়নি, যাতে প্রজ্ঞান বাইশ গজ থেকে টার্ন পেতে পারতেন?
প্রজ্ঞানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা গেল না। তবে মনোজ ব্যাখ্যা দিলেন, ‘‘কোথায় আর সে রকম টার্ন পেল? উইকেট এ দিনও খুব কম টার্ন করেছে। ওঝির কিছু করার ছিল না। ওকে দোষ দেওয়া যাবে না। দিন্দাকে ঠিকমতো সাপোর্ট দিতে পারেনি অন্য পেসাররা। ওরা আর একটু ভাল বল করলে আমরাই জিততাম।’’ মুকেশ কুমার এ দিন ৪৮ রান দিয়ে এক উইকেট নেন। অমিত কুইলা এগারো ওভার বল করে উইকেটহীন।
বাংলার পরের ম্যাচ দিল্লির পালাম গ্রাউন্ডে মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে ৭ ডিসেম্বর থেকে। তার পর ১৫ থেকে বিশাখাপত্তনমে গুজরাত। দুটো ম্যাচই এখন মরণবাঁচন লড়াই মনোজদের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলা ৯৯ ও ৪৩৭
মুম্বই ২২৯ ও ২০৩ (রঞ্জনে ৭৬, নায়ার ৫১, দিন্দা ৪-৭৪)।