অরবিন্দ সিংহ। নিজস্ব চিত্র
এ যেন উপেক্ষার জবাব। বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ষষ্ঠ স্টেট গেমসে ডিসকাসে ফের সোনা জিতে নিজেকে প্রমাণ করলেন পুরুলিয়ার অরবিন্দ সিংহ। ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়ায় জলপাইগুড়িতে অনুষ্ঠিত রাজ্যস্তরের এই প্রতিযোগিতায় সোনার মেডেল জিতলেন অরবিন্দ। ৪২.২০ মিটার ছুঁড়েছেন তিনি। এ নিয়ে এই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয়বার সোনা পেলেন অরবিন্দ।
প্রতি দু’বছর অন্তর বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ২০১৬ সালে এই প্রতিযোগিতাতেই ৪৪.২০ মিটার ছুঁড়ে সোনা জিতেছিলেন অরবিন্দ। তারপরে ২০১৭ সালে রাজ্য অ্যাথলেটিক মিটে ৪৩.৫৪ মিটার ছুঁড়ে ফের সোনা জেতেন তিনি।
পরের পর প্রতিযোগিতায় নিজেকে প্রমাণ করার পরেও জলপাইগুড়িতে সোনা জিতে হতাশ পুরুলিয়ার এই কৃতী। বছর বছর সোনার মেডেল ঘরে আনলেও ২০১৬ সালের পর থেকে তাঁর ছোঁড়া ডিসকাস আর বেশি এগোচ্ছে না। অরবিন্দ নিজেও জানেন, তাঁর পারফরম্যান্সের গ্রাফ খুব ধীরে হলেও গত কয়েক বছরে নেমে গিয়েছে। তাই জলপাইগুড়িতে সোনা জেতার পরেও সেই উচ্ছ্বাস তাঁর গলায় নেই।
তিনি বলেন, ‘‘কী করব? বাড়িতে কোনও রোজগার নেই। বাবা রেলে কাজ করতেন। অবসর নিয়েছেন। বাড়ির এই অবস্থায় অনুশীলনের পরে ন্যূনতম যে রকম পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন, তা জোটাতে পাচ্ছি না। এত দিন বাবা আমার পাশে থেকে উৎসাহ দিয়েছেন। কোনও দিন কোনও সমস্যার মুখোমুখি হতে দেননি। এখন অবসরের পরে বাবার কাছেও বাড়তি কিছু চাইতে পারি না।’’
আদ্রা রেল শহরের বাসিন্দা অরবিন্দের আক্ষেপ আরও রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে ভাল কোচের তত্ত্বাবধানে প্র্যাকটিসের সুযোগ নেই। কী ভাবে আরও উন্নতি করব?’’
টাকার অভাবে এ বার তাঁর জলপাইগুড়ির স্টেট গেমসে যাওয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। তিনি জানান, সেখানে যাবেন না বলেই একপ্রকার ঠিক করে ফেলেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আদ্রা থেকে জলপাইগুড়ির দূরত্ব কম নয়। যাতায়াতে খরচও অনেক। কিন্তু নিজে কিছু করি না। এই অবস্থায় সেই খরচের টাকাটুকুও জোগাড় করা কষ্টসাধ্য। শেষে বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ও আমার এক স্যার অর্থ সাহায্য করায় জলপাইগুড়ি যেতে পারি।’’ মানভূম ক্রীড়া সংস্থার অ্যাথলেটিক্স বিভাগের সম্পাদক গৌতম চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অরবিন্দ এই মুহূর্তে ডিসকাসে রাজ্যের সেরা অ্যাথলিট। ব্যক্তিগত ভাবে তাঁকে কিছুটা সহায়তা করা হচ্ছে। আমরা ওর অবস্থা জেনে চেষ্টা করছি কী করা যায়। আমরা রাজ্য সংস্থার সঙ্গেও কথা বলব।