পর্যবেক্ষণ: পরিস্থিতি বিচার করে এগোতে চান সৌরভ। ফাইল চিত্র
করোনাভাইরাস নিয়ে গোটা বিশ্বে তৈরি হওয়া জরুরি অবস্থার মধ্যে প্রায় সব দেশেই স্তব্ধ সব ধরনের খেলা। নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতেও পারছেন না, কবে আবার মাঠে ফিরতে পারবেন খেলোয়াড়েরা। বলাবলি শুরু হয়ে গিয়েছে, খেলার মাঠে বিশ্বযুদ্ধের সেই সময়ের স্তব্ধতা ফিরতে চলেছে।
যদিও করোনা-হানায় বছরের পর বছর ধরে খেলা বন্ধ থাকার আতঙ্ক দেখছেন না কেউ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় টেস্ট ম্যাচ বন্ধ হয় ১৯১৪-তে এবং ফের চালু হয় ১৯২০-তে গিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ১৯৩৯-এর অগস্ট থেকে ১৯৪৬-এর মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ছিল ক্রিকেট। তখনকার দিনে শুধু একটি ফর্ম্যাটই ছিল, টেস্ট ক্রিকেট। প্রায় সাত বছর পরে মাঠে ফিরে ডন ব্র্যাডম্যান ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্রিসবেনে প্রথম টেস্টেই করেন ১৮৭, এর পরে সিডনিতে দ্বিতীয় টেস্টে আর একটু বেশি— ২৩৪।
ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে সব চেয়ে বড় প্রশ্ন হতে পারে, আইপিএল কি এ বারে আর ফিরবে? ফাঁকা মাঠে হলেও করোনার হানায় গৃহবন্দি অবস্থায় যা আদর্শ বিনোদনের কাজ করতে পারত। নাকি অলিম্পিক্স এবং ইউরো ফুটবলের মতোই তা প্রবল অনিশ্চিত? ঘটনা হচ্ছে, ইউরো তা-ও জুনে হওয়ার কথা। এ দিনই ইটালি ফুটবল কর্তারা দাবি তুলেছেন, ইউরো পিছিয়ে দেওয়া হোক। এ বারে ইউরোপের অনেক শহর জুড়ে হওয়ার কথা ছিল ইউরো এবং ১৩ জুন শুরু হচ্ছিল ইটালিতেই। যেখানে করোনা অতিমারির আকার নিয়েছে। আর অলিম্পিক্স হওয়ার কথা টোকিয়োতে ২৪ জুলাই থেকে ৯ অগস্ট। দু’টো প্রতিযোগিতাই এখনও তিন-চার মাস দুরে। তুলনায় আইপিএল একদম ঘাড়ের কাছে। করোনাভাইরাস নিয়ে দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তা আয়োজন করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের শীর্ষ কর্তারা যদিও নানা রকম বিকল্পের কথা ভেবে রেখেছেন। যাতে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে ক্রীড়াপ্রেমীরা বিশ্বের এক নম্বর ক্রিকেট লিগের বিনোদন থেকে বঞ্চিত না হন। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় টুর্নামেন্ট করতে হলেও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়রা তৈরি থাকতে চান। তার জন্য একাধিক বিকল্প ফর্ম্যাট ভেবে রেখেছেন সৌরভরা। পুরো আইপিএলের সূচি ৬০ ম্যাচের। গ্রুপে প্রত্যেকটি দলের ১৪টি করে ম্যাচ। তিনটি প্লে-অফ এবং একটি ফাইনাল। এই পূর্ণ সূচি রেখে আইপিএল করা সম্ভব হবে যদি ১৫ এপ্রিলের পরেই স্থগিতাদেশ উঠে যায় এবং দু’তিন দিনের মধ্যে টুর্নামেন্ট চালু করা যায়। এই মুহূর্তে সেই সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ।
করোনাভাইরাসের হানায় যদি গোটা এপ্রিল মাসেও মাঠে ফেরা না যায়, তখন কী হবে? পরিস্থিতির উন্নতি হলে আইপিএল যাতে তার পরেও করা যায়, তা-ও ভেবে রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে আটটি দলকে দু’টি গ্রুপে ভাগ করে মিনি আইপিএল করা হতে পারে। গরিষ্ঠ অংশের মত, হোম-অ্যান্ড অ্যাওয়ে প্রথা আইপিএলের সেরা আকর্ষণ। ধোনি খেলবেন বিরাটের বেঙ্গালুরুতে, আবার বিরাট যাবেন ধোনির চেন্নাইয়ে, শাহরুখের কলকাতা খেলবে মুম্বইয়ে, আবার রোহিত শর্মারা আসবেন ইডেনে খেলতে— শহরভিত্তিক এই দ্বৈরথেই আইপিএলের আসল জৌলুস। সেই কারণে ‘হোম-অ্যাওয়ে’ ফর্ম্যাট কেউ পাল্টাতে চাইছেন না। বরং ম্যাচের সংখ্যা কমাতে হলে গ্রুপে ভাগ করে দেওয়ার পক্ষপাতী সকলে। তাতে প্রত্যেক দল গ্রুপের বাকি তিন দলের সঙ্গে ঘরে-বাইরে খেলবে, আবার ম্যাচও কমবে। আইপিএলকে বাঁচানোর জন্য সংক্ষিপ্ততম টুর্নামেন্ট করার কথাও ভেবে রাখা হয়েছে।
মুম্বইয়ে শাহরুখ খান-সহ ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের সঙ্গে যে বৈঠক হয়েছিল, তাতে এ সব ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন বোর্ড কর্তারা। এ দিন আট দলের কর্তাদের মধ্যে টেলিকনফারেন্সও হয়। তাতে অবশ্য খুব সুরাহা কিছু মেলেনি কারণ করোনাভাইরাস নিয়ে পরিস্থিতিতে কোনও পরিবর্তন হয়নি। নতুন করে যা সিদ্ধান্ত হওয়ার, তা আবার ১৫ এপ্রিলের আশেপাশে গিয়ে হবে।
যদি আগামী পনেরো দিনে করোনাভাইরাস নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে, তা হলে আইপিএল আয়োজনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে। তাতে কাটছাঁট করে মিনি আইপিএল করতে হলেও তৈরি বোর্ড এবং আট দল। তবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বিদেশি ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণ। করোনা-আক্রান্ত দুবাই এবং সিঙ্গাপুরগামী উড়ান ধরতে ভয় পাচ্ছেন অনেকে। ভারতে বেশির ভাগ বিদেশি ক্রিকেটার খেলতে আসবেন উড়ানে এই দু’টি জায়গা হয়ে।
এই আতঙ্কের পরিবেশ স্বাভাবিক হতেও সময় লাগবে। ইতিমধ্যেই অনেকে বলতে শুরু করেছেন, ‘‘আগামী এক মাস কোনও খেলাতেই আর কোনও লাইভ কভারেজ দেখার সম্ভাবনা নেই। বাড়ি বসে দেখতে থাকো শুধু পুরনো ম্যাচের হাইলাইটস।’’ ফাঁকা মাঠে আইপিএলের মতো টুর্নামেন্ট করতে গেলেও অনেক লোকের হাজিরা এড়ানো সম্ভব নয়। টিভি সম্প্রচারের জন্যই দেশি-বিদেশি মিলিয়ে বেশ বড় সংখ্যক ‘টিভি ক্রু’ রাখতে হয়। এ দিন দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড জানিয়ে দিয়েছে, তারা ৬০ দিনের জন্য সমস্ত কার্যকলাপ বন্ধ রাখছে। ভারতে সব আইপিএল টিমের প্র্যাক্টিসও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ধোনি বাড়ি ফিরে গিয়েছেন, রায়না ‘মাস্ক’ পরা ছবি দিচ্ছেন, রোহিত বার্তা দিচ্ছেন করোনা নিয়ে সাবধান থাকার। করোনার সময়ে এটাই খেলার দুনিয়ার ছবি।
২০২০ আইপিএলের ভাগ্যে কী আছে? বিরাট কোহালি বা মহেন্দ্র সিংহ ধোনির লাইভ ইনিংস কি পাওয়া যাবে নাকি টিভিতে ব্রেন্ডন ম্যাকালাম বা বীরেন্দ্র সহবাগের হাইলাইট্স দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে? আগামী পনেরো দিনেই সম্ভবত
পরিষ্কার হয়ে যাবে!