প্রস্তুতি: নাইটদের অনুশীলনে মগ্ন অধিনায়ক মর্গ্যান। বুধবার। টুইটার।
একটা দল শেষ ম্যাচে হারলেও টগবগ করে ছুটছে। অন্যটা শেষ ম্যাচে জিতলেও ঘষটাতে ঘষটাতে এগোচ্ছে। আদৌ যদি ‘এগোচ্ছে’ শব্দটা ব্যবহার করা যায়।
প্রথম দলটা যে দিল্লি ক্যাপিটালস আর দ্বিতীয়টা কলকাতা নাইট রাইডার্স, তা ধরতে পারার জন্য কোনও পুরস্কার নেই। দিল্লির ছ’ম্যাচ খেলে চারটি জিতেছে, ৮ পয়েন্ট। কলকাতার ছ’ম্যাচ থেকে মাত্র দু’টি জয়, ৪ পয়েন্ট। দিল্লি পয়েন্ট টেবলের তিন নম্বরে। প্লে-অফ দৌড়ে খুব ভাল মতোই রয়েছে। কলকাতা বুধবারের ম্যাচের আগে পর্যন্ত ছিল ছয় নম্বরে। তা-ও পঞ্জাব কিংস এবং রাজস্থান রয়্যালসের সঙ্গে তাদের পয়েন্ট ছিল সমান। নেট রানরেটে সামান্য এগিয়ে থাকায় ছ’নম্বরে ছিল তারা। তিনটি দল কলকাতা, পঞ্জাব এবং রাজস্থানের পয়েন্ট এক। প্রত্যেকেই দু’টি করে ম্যাচ জিতে ৪ পয়েন্টে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সেরও পয়েন্ট ৪, তবে রোহিত শর্মারা পাঁচটি ম্যাচ খেলেছেন। টেবলের এত নীচ থেকে প্লে-অফের দৌড়ে ফিরতে গেলে শাহরুখ খানের দলকে পর-পর ম্যাচ জিততে হবে। যাতে পয়েন্ট টেবলে উন্নতি হয় এবং সব চেয়ে জরুরি, দলের মধ্যে বিশ্বাস ফেরানো যায়।
অইন মর্গ্যানদের দলের যা ভঙ্গুর চেহারা, তাতে এই মুহূর্তে খুব বেশি কেউ তাঁদের উপর বাজি ধরবে না। তা সে যতই বলিউড বাজিগরের দল হোক। ব্যাটিং বিভাগ পুরোপুরি ব্যর্থ। তার চেয়েও বেশি করে বিভ্রান্ত, দিশেহারা। মর্গ্যান নিজে শেষ ম্যাচে রান পেয়েছেন কিন্তু কম স্কোর তুলতে হয়েছিল বলে সে ভাবে চাপের মুখেই পড়েননি। তার উপরে টিভিতে দেখা গিয়েছে, আগের ম্যাচে আমদাবাদে পঞ্জাব কিংস ফিল্ডিং করার সময় শিশিরে মাঠ পুরো ভিজে গিয়েছিল। বোলাররা বল ধরতেই পারছিলেন না। ফিল্ডারেরা পা পিছলে পড়ে গিয়েছেন। দড়ি দিয়ে যখন শিশির মোছা হচ্ছিল, তখনই বোঝা যাচ্ছিল মাঠ কী রকম ভিজে যাচ্ছে। ১২৪ রানের টার্গেট স্কোর তাতে আরওই সহজ হয়ে যায় নাইটদের জন্য।
আজ, বৃহস্পতিবারও আমদাবাদেই ম্যাচ এবং আশ্বাসের চেয়ে আশঙ্কাই বেশি নাইট শিবিরে। উপরের দিকের ব্যাটিংয়ে শুভমন গিলের মতো তরুণ ভরসা হয়ে ওঠার বদলে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ছয় ইনিংসে মাত্র ৮৯ রান করেছেন গিল। তাঁকে বসিয়ে কি সুনীল নারাইনকে দিয়ে ওপেন করিয়ে পাওয়ার প্লে ফাটকা খেলা হবে? নারাইন আমদাবাদের পিচে কে এল রাহুলদের বিরুদ্ধে ভাল বল করেছেন। এ বার অলরাউন্ডার নারাইনকে ফেরানো গেলে তিনি এবং আন্দ্রে রাসেল— ফের ক্যারিবিয়ান জুটি নাইট ভক্তদের স্বপ্ন দেখাতে পারে। নাইট কর্তাব্যক্তিরা ডাগআউটে গম্ভীর মুখ করে বসে যা-ই ভাবুন, এই দুই ক্যারিবিয়ানই এখনও বেগুনি জার্সিধারীদের সেরা অস্ত্র।
অতীতে নারাইনকে ওপেন করিয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাওয়া গিয়েছে। অদ্ভুত সব সিদ্ধান্তে চমক দিতে ভালবাসেন নাইট রাইডার্স দল পরিচালকেরা। এ বারেও ব্যতিক্রম নয়। নারাইনকে চার নম্বরে নামানোর ভাবনা যেমন হাস্যকর। যেটা বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানের জায়গা, সেখানে পিঞ্চহিটার নামাচ্ছেন মর্গ্যানরা। গরিষ্ঠ মত হচ্ছে, নারাইনকে হয় শুরুতে পাঠাও, নয়তো স্লগে ব্যবহার করো। উপরের দিকে নীতীশ রানা এবং রাহুল ত্রিপাঠী প্রতিশ্রুতি জাগিয়ে শুরু করলেও ধারাবাহিকতার অভাব স্পষ্ট। রানা পর-পর দু’টি হাফ সেঞ্চুরি দিয়ে শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ চার ইনিংসে মোট সংগ্রহ ৪৯ রান। রাহুল ত্রিপাঠীর শেষ ম্যাচে রান পাওয়া কিছুটা মনোবল ফেরাবে উপরের দিকের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে। আবার এমন প্রস্তাবও দিচ্ছেন কেউ কেউ যে, করুণ নায়ারকে চেষ্টা করা হোক। নাইটদের ব্যাটিংয়ে প্রধান ভরসা এখন তিন জন। আন্দ্রে রাসেল, দীনেশ কার্তিক এবং ফাস্ট বোলার হিসেবে বেশি পরিচিত প্যাট কামিন্স। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, এই তিন জনকে নামানো হচ্ছে সাত, আট এবং ন’নম্বরে। নাইট ব্যাটিংয়ে প্রথম ছ’জন আতঙ্কে রেখেছে ভক্তদের। তুলনায় বোলিং অনেক স্বস্তিতে রেখেছে। নারাইন সাফল্য পেয়েছেন, সিভি বরুণ চমক দেখাচ্ছেন। পেসারদের মধ্যে কামিন্স, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, শিবম মাভি। সব মিলিয়ে সমীহ করার মতো
বোলিং আক্রমণ।
অন্য দিকে, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের কাছে মঙ্গলবার রাতে মাত্র এক রানে হেরে গেলেও দিল্লি ক্যাপিটালসের ব্যাটিং গোলাবারুদে ভর্তি। শিখর ধওয়ন দুরন্ত ছন্দে। পৃথ্বী শ রান করেছেন। ঋষভ পন্থের অধিনায়কত্ব সমালোচিত হলেও, কোহালিদের বিরুদ্ধে জেতাতে না পারলেও বাঁ হাতির ব্যাটিংকে উপেক্ষা করার সাহস কেউ দেখাবে না। বড় শট নেওয়ার ব্যাটসম্যান শিমরন হেটমায়ারও রান করে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন। কাগিসো রাবাডা-আবেশ খানের গতি, অক্ষর পটেল-অমিত মিশ্রের স্পিনের মিশ্রণে দিল্লির বোলিং আক্রমণও আইপিএলের দলগুলির মধ্যে অন্যতম সেরা। অতীত রেকর্ড বলছে, লেগস্পিনার অমিত মিশ্রের বিরুদ্ধে খুব স্বচ্ছন্দে থাকেন না রাসেল। দক্ষিণ আফ্রিকার আর এক উচ্চগতিসম্পন্ন পেসার অনরিখ নখিয়াকেও খেলাতে পারেন পন্থরা।