যুবভারতী স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁর গোলে। একটা ম্যাচ নায়ক বানিয়ে দিল সাদউদ্দিনকে।
ফিরে আসা বোধহয় একেই বলে! বছর খানেক আগে এক পথ দুর্ঘটনায় মহম্মদ সাদউদ্দিনের ফুটবল জীবনে নেমে এসেছিল অন্ধকার। বল পায়ে আর মাঠে নামতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন সবাই।
মঙ্গলবার তাঁর বিষাক্ত ‘ছোবল’ ভারতের জালে আছড়ে পড়তেই নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন। বিশাল স্টেডিয়ামে একটা পিন পড়লেও তখন যেন তার শব্দ পাওয়া যেত। পদ্মাপাড়ে তখন অন্য ছবি। সেখানে সাদউদ্দিনকে নিয়ে তখন আবেগের প্রবল সুনামি। দেশের সবুজ জার্সিতে প্রথম গোল করে যেন জাতীয় নায়ক হয়ে গিয়েছেন আবাহনী ক্রীড়াচক্রের এই ফুটবলার।
কলকাতার বারুদে ঠাসা ভারত-বাংলাদেশ বিশ্বকাপের যোগ্যতা পর্বের ম্যাচে পয়েন্ট নষ্ট করার যন্ত্রণায় সুনীল ছেত্রীর ভক্তদের হৃদয় যখন ক্ষতবিক্ষত, সাদউদ্দিনের মনে তখন অদ্ভুত এক প্রশান্তি। মাঠে নেমে তিনি যে অনেককে জবাব দিতে পেরেছেন, এটা ভেবেই তৃপ্ত সলমন খানের ভক্ত। বুধবারও যেন ঘোরের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের গোলদাতা। আনন্দবাজার ডিজিট্যালকে সিলেটের ফুটবলার বলছিলেন, “বছর খানেক আগে এক পথ দুর্ঘটনায় আমার ফুটবল জীবনে নেমে এসেছিল প্রশ্নচিহ্ন। বাঁ পায়ে প্রচণ্ড চোট লেগেছিল। মাঠের বাইরে বসে অনেকগুলো ম্যাচ আমাকে দেখতে হয়েছিল। একজন ফুটবলারের মাঠের বাইরে বসে থাকা যে কতটা যান্ত্রণার, তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। চোট সারিয়ে ফেরার পরে কত মানুষ কত রকমের কথা বলেছে। কঠিন সময়ে দাঁতে দাঁত চেপে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আমাকে ফিরে আসতেই হবে। নিজেকে প্রমাণ করতেই হবে। কলকাতায় এসে এ রকম একটা ম্যাচে গোল করতে পেরে আমার খুব ভাল লাগছে।” সাদউদ্দিনের ইংরেজ কোচ জেমি ডে তাঁর শিষ্য সম্পর্কে বলছেন, “দুর্ঘটনায় চোট পেয়ে বেশ কয়েক মাস সাদউদ্দিন খেলতেই পারেনি। কিন্তু, ওর প্রচণ্ড জেদ। মাঠে ফেরার জন্য প্রচুর খেটেছে। দারুণ ভাবে ফিরে এসেছে সাদউদ্দিন। ভাল খেলার তীব্র ইচ্ছা রয়েছে ওর। ওর খেলায় আমি সন্তুষ্ট।’’
আরও পড়ুন: অধিনায়ক কোহালির ব্যাট থেকে এসেছে দলের ১৮.৬৭% রান! আর অধিনায়ক ধোনির ব্যাট থেকে...
শুধু সাদউদ্দিন নন, বাংলাদেশের ফুটবল কলকাতার ফুটবলভক্তদেরও হৃদয় জিতে নিয়েছে। মঙ্গলবার সব অর্থেই যেন ফুটছিল যুবভারতী। শহরের সব রাজপথ এসে মিশেছিল বাঙালির বড় আপন এই স্টেডিয়ামে। সুনীলদের জন্য গলা ফাটাচ্ছে যুবভারতী। প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকানোর দায়িত্বে রয়েছেন গুরপ্রীত সিংহ সান্ধু। কাতারের বিরুদ্ধে যিনি দেশের পরিত্রাতা হয়ে দেখা দিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে নিজেদের সেরাটা বের করে আনার মতোই পরিস্থিতি ছিল সাদউদ্দিনদের। জামালের বাঁক খাওয়ানো ফ্রি কিকের ফ্লাইটটাই বুঝতে পারেননি ভারতের শেষ প্রহরী।
বাংলাদেশের গোলের দুই রূপকার। অধিনায়ক জামাল ও সাদউদ্দিন।
ডেড বল সিচুয়েশন থেকে ফুল ফোটানোর পরিকল্পনা করেই কি নেমেছিল বাংলাদেশ? সাদউদ্দিন বললেন, “প্রতিটি ম্যাচেই আমাদের কিছু পরিকল্পনা থাকে। ভারতের বিরুদ্ধেও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেই আমরা খেলতে নেমেছিলাম। তবে খারাপ লাগছে শেষ মুহূর্তে আমরা গোল হজম করে বসায়। না হলে ম্যাচটা জিতেই আমরা কলকাতা ছাড়তাম। তবে আমরা হোমওয়ার্ক করেই খেলতে নেমেছিলাম। ভারত-কাতার ম্যাচ আমি দেখেছি। গুরপ্রীতভাই ওদের ২৮টা শট বাঁচিয়েছিল। ওই রকম একজন গোলকিপারকে গোল দেওয়ার অনুভূতিটাই অন্যরকম। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি বল ফলো করে গিয়েছি।’’
আরও পড়ুন: ‘ভিভ রিচার্ডসের জন্যই লারা হতে পেরেছি’
সাম্প্রতিককালে ক্রিকেটের মাঠে ভারতকে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন শাকিব আল হাসানরা। যুবভারতীর ম্যাচের বল গড়ানোর আগে অতি বড় বাংলাদেশ ফুটবল ভক্তও আশা করেননি সুনীল-গুরপ্রীতদের বিরুদ্ধে এই রকম উজ্জীবিত ফুটবল খেলে ইগর স্তিমাচের ভারতকে থামিয়ে দেবেন জামাল-সাদউদ্দিনরা। র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের থেকে ৮৩ ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশ। নব্বই মিনিটের শেষে রেফারি বাঁশি বাজিয়ে দেওয়ার পরে বাংলাদেশের ইংরেজ কোচ জেমি ডে-র মুখে খেলা করছিল হাজার ওয়াটের আলো। সাদউদ্দিন বলছিলেন, ‘‘এই ম্যাচটা আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। বিশ্বকাপের যোগ্যতা পর্বের পরবর্তী ম্যাচগুলোয় আমরা আরও ভাল খেলব।’’
প্রতিবেশী দেশের মাঠে দুরন্ত পারফরম্যান্স করে ড্র আরও ভাল খেলার অক্সিজেন জোগাচ্ছে সাদউদ্দিনকে। থুড়ি, বলা ভাল গোটা বাংলাদেশ শিবিরকেই। কলকাতা এক অন্য বাংলাদেশ ফুটবল দলের জন্ম দিল।