মহড়া: বাংলাদেশ কোচের ভরসা অভিজ্ঞ মামুনুল (বাঁ দিকে)। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
বিনয়ের চাদরে নিজেদের মুড়ে রেখেছেন আগাগোড়া। ভারতীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা শুরু হলেই বিপক্ষকে এগিয়ে রাখছে বাংলাদেশ শিবির। বার বার উল্লেখ করা হচ্ছে সুনীল ছেত্রীর নাম। মামুনুল ইসলামরা বলছেন, ‘‘একা সুনীল ছেত্রীই দু’দলের মধ্যে ফারাক গড়ে দিতে পারে।’’ যদিও ভিতরে ভিতরে বাংলাদেশ শিবির তৈরি হচ্ছে মঙ্গলবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের ম্যাচে ভারতকে হারিয়ে অঘটনের জন্য।
কলকাতায় পা দেওয়ার পরে শনিবারই যুবভারতী সংলগ্ন মাঠে প্রথম অনুশীলনে নেমেছিলেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। বাইপাসের ধারে যে হোটেলে রয়েছে বাংলাদেশ, সেখানেই রয়েছেন আইএসএলে মামুনুলের প্রাক্তন দল এটিকের বেশ কয়েক জন সদস্য। পাঁচ বছর আগে ২০১৪ সালে প্রথম আইএসএলে মামুনুল যখন খেলতে এসেছিলেন এটিকে-তে, তখন সেই দলের কোচের নাম ছিল আন্তোনিয়ো লোপেজ় হাবাস। কিন্তু একটি ম্যাচও খেলার সুযোগ পাননি বাংলাদেশের এই ফুটবলার। সেই হাবাস এ বারও কোচ এটিকের। প্রাক্তন ক্লাব-কোচের সামনে কি মঙ্গলবার জাতীয় দলের হয়ে নিজেকে চেনানোর ম্যাচ?
হাবাসের নাম শুনেই চোয়াল শক্ত হয়ে যায় গত ১৩ বছর ধরে বাংলাদেশের জাতীয় দলে খেলা মামুনুলের। বলেন, ‘‘কলকাতায় সুখের সঙ্গে দুঃখের স্মৃতিও রয়েছে। তা আর ব্যাখ্যা করতে চাই না। কোচ খেলালে নিজের সেরাটাই নিংড়ে দেব।’’ যোগ করেন, ‘‘মঙ্গলবার স্টেডিয়ামে ভারতীয় সমর্থকেরা বেশি থাকলেও আমাদের দেশ থেকে অনেকে খেলা দেখতে আসবেন। বাংলাদেশের সমর্থকেরা যাতে ম্যাচ শেষে হাসি মুখে মাথা উঁচু করে স্টেডিয়াম ছাড়তে পারেন, সেটা নিশ্চিত করাই লক্ষ্য।’’
এ দিন সকালে বাংলাদেশ অনুশীলনে দেখা যাচ্ছিল তাদের কোচ জেমি ডে মাঝমাঠ থেকে ছোট ছোট পাসে আক্রমণের সূচনা করে তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন দুই প্রান্তে। সেই বল ধরে দুই প্রান্ত থেকে মাটিতেই বিপক্ষ বক্সে ক্রস রাখছিলেন জ়ামাল ভুঁইয়ারা। যা লক্ষ্য করে ছুটে এসে সেই বল গোলে পাঠাচ্ছিলেন দুই স্ট্রাইকার। যে প্রসঙ্গে মামুনুল বলছেন, ‘‘রক্ষণ পোক্ত করে প্রতি-আক্রমণেই খেলব আমরা। আমাদের শেষ ‘টাচ’টা ঠিক হচ্ছে না। ভারতের বিরুদ্ধে সেই কাজটা নিখুঁত ভাবে করলে ফল ভাল হবেই।’’ ভারতীয় রক্ষণে সন্দেশ ঝিঙ্গন না থাকায় কি আপনাদের সুবিধা? মামুনুলের উত্তর, ‘‘সুবিধা তো ভারতের। কারণ, স্টপারে যে খেলবে সে নিজের সেরাটা দিয়ে দলে জায়গা পাকা করার জন্য জান লড়িয়ে দেবে।’’ ভারতকে তাদের ঘরের মাঠে বেকায়দায় ফেলতে বাংলাদেশ শিবির গোপনে সুনীল ছেত্রীকে বোতলবন্দি করার যে পরিকল্পনা নিচ্ছে সেই ইঙ্গিতও মিলেছে এ দিন অনুশীলনে। মামুনুল বলছেন, ‘‘ভারতের আসল লোক তো সুনীল ছেত্রী। ও-ই গোল করে পার্থক্যটা গড়ে দেয়।’’ দলের সহকারী কোচ স্টুয়ার্ট ওয়াটকিসও বলছেন, ‘‘সুনীল যেমন দুর্দান্ত ফুটবলার, তেমন গোলটাও ভাল চেনে। ওকে আটকানোই আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ। সুনীলের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সেটা এখন বলতে পারছি না। তার মহড়া চলছে।’’
বাংলাদেশের সহকারী কোচ ব্রিটিশ নাগরিক ওয়াটকিস ২০১৪ সালে আই লিগের দল ভারত এফসি-তে কোচিং করিয়ে গিয়েছেন। তাই সুনীল ছেত্রী, উদান্ত সিংহদের ভাল করেই চেনেন। বলছেন, ‘‘ওদের স্ট্রাইকার, মিডফিল্ডাররা গোল করতে পারে। সেট পিসেও সমান দক্ষ ভারত। এ রকম শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেই তো নিজেদের সেরা ম্যাচটা খেলতে হবে। আমরা সেই প্রস্তুতিই নিচ্ছি।’’ যোগ করেন, ‘‘কাতারের বিরুদ্ধে ভারত ড্র করলেও আমরা পশ্চিম এশিয়ার দেশটির বিরুদ্ধে কিন্তু ভারতের চেয়েও বেশি সুযোগ তৈরি করেছিলাম। সে দিনের মতো খেললে আমরা জিততেও পারি। তা হলেই গ্রুপ ‘ই’-তে তিন নম্বরে চলে যাব।’’
বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার সত্যজিৎ দাশ রুপু সাতাশির সাফ গেমসে যুবভারতীতে খেলে গিয়েছেন। এগারো বছর বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলা এই প্রাক্তন ফুটবলারও মানছেন সুনীল ছেত্রীর মাহাত্ম্য। তবে সঙ্গে এটাও বলছেন, ‘‘গত নয় বছরে ভারতের কাছে হারিনি আমরা। সুনীলের জন্য ভারত এগিয়ে থাকলেও ওরা অপ্রতিরোধ্য নয়। কাতার ম্যাচের স্মৃতি ভুলে ছেলেরাও বিশ্বাস করতে শুরু করেছে এই ভারতকে হারানো সম্ভব।’’