বেঙ্গালুরু স্টেডিয়ামের গ্যালারিকে চাইলে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। দুই পক্ষের ভ্ক্ত-সমর্থকরাই এক সঙ্গে গলা ফাটাচ্ছেন। কেউ সাকিব-সাকিব স্লোগানে; কেউবা আবার ম্যাক্সওয়েল-ম্যাক্সওয়েল স্লোগানে। বাঙালিদের বসবাস যেখানে, সেই কলকাতার ইডেনেও এত সমর্থন পাননি টাইগাররা। যা কিনা পেয়েছেন বেঙ্গালুরুর বাসিন্দাদের কাছ থেকে। ম্যাচের পুরো সময়জুড়েই বাংলাদেশকে সমর্থন জানিয়ে গেছেন তারা।
এই বাসিন্দাদের সঙ্গে গুটিকয়েক বাংলাদেশিও ছিলেন। টেক-সিটি বেঙ্গালুরুতে তারা বৃত্তি নিয়ে পড়াশুনা করছেন। এমন অনেকেই কাল লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে সাকিব-মুশফিকদের সমর্থন জানাতে গিয়েছিলেন। হেরে যাওয়ার এই ম্যাচটিতে বেঙ্গালুরু স্টেডিয়ামে উপস্থিতে আগত দর্শকদের সমর্থন আদায় করে নিয়েছে বাংলাদেশ। মূল পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ ৩ উইকেটে পরাজিত হয়েছে টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের ৬ নম্বরে থাকা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে।
এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ যতটুকু আধিপত্য দেখিয়েছে তাতে না পাওয়ার হতাশাও খুব কম! কেননা দুই টাইগারকে হারিয়ে এমনিতেই খর্বশক্তি বাংলাদেশ। এর মধ্যে ম্যাচের দিন হঠাৎ করেই অসুস্থ তুখোড় ফর্মে থাকা ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল। গুরুত্বপূর্ণ তিন টাইগারকে রেখেই অসিদের বিপক্ষে মাঠে নামতে হয়েছে টাইগারদের।
আরও পড়ুন-অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করেও হার সাকিবদের
এরপরও যেভাবে তাঁরা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়াই করেছেন, এর জন্য কিছুটা হলেও বাহবা পেতেই পারেন মাশরাফিরা। মুস্তাফিজের বিষে অসি ব্যাটিং শিবির নীল হয়নি ঠিকই তবুও এই বিস্ময়বালক কাঁপন ধরিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন-আপে। মুস্তাফিজের সঙ্গে জুটি বেঁধে উইকেট শিকার করেছেন সাকিবও।
মুস্তাফিজ যেভাবে বোকা বানিয়ে স্টিভেন স্মিথ ও মিচেল মার্শকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন, তা এই দুই অসি ব্যাটসম্যান সারাজীবন মনে রাখবেন।
বেঙ্গালুরু স্টেডিয়ামে প্রথম ইনিংসের গড় রান ১৭০। সেই হিসেবে বাংলাদেশ ১৪ রান কম করেছে। এই ১৪ রান হলে ম্যাচটি হয়তো বাংলাদেশ জিতে যেতেও পারত! ম্যাচের চিত্রনাট্যটা যেমন তাতে করে এমনটা দাবি করা যেতেই পারে।
বোলিং আক্রমণে গত কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশর মূল ভরসা আরাফাত সানি ও তাসকিন আহমেদ। বোলিং আক্রমণে তাদের অভাব স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। সানির বদলে খেলা সাকলাইন সজিবের অভিষেক হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। কিন্তু নিজের অভিষেক ম্যাচটাকে স্মরণীয় করে রাখার মতো কিছু করতে পারলেন না তিনি। তার করা ১৬তম ওভারেই মূলত ম্যাচটি জেতার পথে এগিয়ে নিয়ে যান অসিরা। ওই ওভারে সাকলাইন রান দেন ১৪। এরপর মুস্তাফিজের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক মাশরাফি। কিন্তু তার করা চতুর্থ ও শেষ ওভারটি ম্যাচের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ওভার। মুস্তাফিজ দুটি ছক্কায় রান দিলেন ১৪টি। ৪ ওভার বোলিং করে মুস্তাফিজ খরচ করেছেন ৩০ রান, বিনিময়ে নিয়েছেন ২টি উইকেট।
এই ম্যাচটি হারলে ওবাং লাদেশ আত্মবিশ্বাসের কিছু রসদ নিতে পেরেছে। যা কিনা বুধবার ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে কাজে দেবে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বিস্ফোরক ইনিংসটির কারণেই বাংলাদেশের স্কোর ১৫৬তে পৌঁছায়। এছাড়া সাকিব ও মুশফিক কার্যকরী ভূমিকা রেখেছেন। এই উইকেটে আরও ১৫-২০টি রান বেশি হলে ম্যাচটির ফল বাংলাদেশের পক্ষেই আসতে পারত।
তবে রেজাল্ট যাই হোক না কেন, এখান থেকে পরের ম্যাচে আরও ভালো করা সম্ভব। ভারতের বিপক্ষে তামিম ফিরলে ব্যাটিং লাইনআপ আরও শক্তিশালী হবে। এছাড়া মি. ফিনিশার খ্যাত নাসির সুযোগ পেলে হয়তো ইতিবাচক কিছুই ঘটবে! সব মিলিয়ে তাই এই ম্যাচ থেকে বাংলাদেশ অনেক রসদই পাচ্ছে।
সৌজন্যে বাংলা ট্রিবিউন