জয়োল্লাস: অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চতুর্থ টেস্ট জয়ের পরে কে এল রাহুল। মঙ্গলবার ধর্মশালায়। ছবি: পিটিআই।
যুদ্ধ শেষ, গোলাগুলি নয়। দলাই লামার শহরে হালফিলের সবচেয়ে তিক্ত ক্রিকেট সিরিজে যবনিকা পড়ল ভবিষ্যতের রাস্তায় আরও অগ্ন্যুৎপাতের আতঙ্ক জিইয়ে রেখে।
মঙ্গলবার ধর্মশালায় সিরিজ জিতে সাংবাদিক বৈঠকে বিরাট কোহালি জানিয়ে দিলেন, তাঁর সঙ্গে আর কখনও অস্ট্রেলীয়দের বন্ধুত্ব হবে না। মাঠের মধ্যে কোনও দিনই ছিল না। মাঠের বাইরেও হবে না। ভারত অধিনায়ক সাফ বললেন, ‘‘না, আর সম্ভব নয়। ভেবেছিলাম মাঠের বাইরের বন্ধুত্বটা আছে। কিন্তু সব পাল্টে গিয়েছে।’’
কে বলবে, এই কোহালিই সিরিজ শুরুর আগে মুক্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘আমি ওদের অনেককে ভাল চিনি। মাঠের বাইরেও বন্ধুত্ব আছে ওদের সঙ্গে। কিন্তু আমি জানি, ক্রিকেট মাঠের দ্বৈরথে কোথায় সেই বন্ধুত্বের বাউন্ডারিটা শেষ করতে হবে।’’ এক মাসেরও কম সময়ের একটা টেস্ট সিরিজ তাঁর অস্ট্রেলীয় দর্শনই পাল্টে দিয়ে গেল!
শুধু কোহালি নন, তিক্ততার রেশ ছড়িয়ে পড়েছে অন্যদের মধ্যেও। অথচ কে এল রাহুল যখন উইনিং স্ট্রোক মেরে আট উইকেটে জিতিয়ে দিলেন, তখন বোঝাই যায়নি, বিস্ফোরণ ঘটতে চলেছে। রাহুল গর্জে উঠলেন জয়ের আনন্দে। ড্রেসিংরুমের বারান্দায় স্লিভলেস টি-শার্টে বাইসেপ্স বার করা কোহালি তাঁর বিখ্যাত সিংহগর্জন দিলেন। খুবই তীব্র জয়োল্লাস, সন্দেহ নেই। কিন্তু সিরিজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও তিক্ততা জিইয়ে রাখার রসদ তার মধ্যে ছিল না।
অতিথি অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ যখন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এলেন, তখনও তো বোঝা যায়নি। উল্টে শান্তির বার্তা দিলেন স্মিথ। বললেন, ‘‘দুর্ধর্ষ সিরিজ খেললাম। ভারতীয় দলকে অভিনন্দন। টানটান উত্তেজনায় যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। অনিচ্ছাকৃত ভাবে হয়তো মাঝে মাঝে সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছি। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’’ শুনেই উল্লাস গ্যালারিতে। মনে হয়েছিল, স্মিথের অস্ত্র সংবরণেই হয়তো ডেকে দেওয়া হল যুদ্ধবিরতি। কে জানত, এর পরেই পুরস্কার বিতরণীতে আসবেন ম্যাচ এবং সিরিজের সেরা রবীন্দ্র জাডেজা। এবং রবি শাস্ত্রীর মাইকের সামনে খুল্লমখুল্লা বলে দেবেন, ‘‘ম্যাথু ওয়েড সারাক্ষণ পিছন থেকে গালাগাল করে যাচ্ছিল। ওকে দেখানোর দরকার ছিল যে, আমরাই বিশ্বের এক নম্বর দল।’’
আসলে এটাই এখন টিমের মনোভাব। এ দিন কোহালি জানালেন, কাঁধের চোটের জন্য আইপিএলের প্রথম তিন-চারটে ম্যাচে খেলবেন না। কিন্তু বিশ্রাম নেই তাঁর আগ্রাসনের। অধিনায়ক হুমকি দিলেন, ‘‘খোঁচালে আমরাও ছেড়ে দেব না।’’ বেঙ্গালুরুতে স্মিথ ড্রেসিংরুমের দিকে তাকিয়ে ডিআরএস নিতে যাওয়ার পর ঘুরিয়ে তাঁকে প্রতারকই বলেন কোহালি। তার পর থেকে অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়া এবং প্রাক্তন ক্রিকেটারা আক্রমণ করে গিয়েছেন তাঁকে। সেই প্রসঙ্গ টেনে বললেন, ‘‘ঠান্ডা ঘরে বসে মন্তব্য করাই যায়। তাতে কিছু আসে-যায় না।’’ কারও কারও মনে হচ্ছে, আইপিএল ড্রেসিংরুমও কি আগের মতো থাকবে? কোহালির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরে আছেন অস্ট্রেলীয় শেন ওয়াটসন। তিনি তবু অবসৃত। কিন্তু পুণে দলে খোদ স্মিথই অশ্বিনের অধিনায়ক। এই সিরিজে তো বহু বার লেগেছে দু’জনের।
কে জানে! কোহালির ‘ওরা আর বন্ধু নয়’ কার্যত দু’দেশের মধ্যে অলিখিত নিয়ন্ত্রণরেখাই টেনে দিল। মাঠে ভারত-অস্ট্রেলিয়া কখনও তেমন বন্ধু হয়নি। সংঘাতের ইতিহাস দীর্ঘ। মেলবোর্নে গাওস্কর বনাম লিলি। সিডনিতে হরভজন বনাম সাইমন্ডসের ‘মাঙ্কিগেট’। কিন্তু তখনও সিরিজ শেষে এমন তীব্র শিঙা ফোঁকাফুঁকি শোনা যায়নি। কোহালি, ‘গব্বর’ জাডেজারা আসলে ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন টেমপ্লেট তৈরি করে দিলেন। সেটা ‘শোলে’র সেই সংলাপ— ‘তুম অগর এক মারোগে তো হম চার মারেঙ্গে!’