সেঞ্চুরির হুঙ্কার স্মিথ এবং রজার্সের।
এক জন লর্ডস টেস্ট শুরু হওয়ার আগে টুইট করেছিলেন, ‘‘নতুন হেয়ারস্টাইল নিয়ে দ্বিতীয় টেস্টে যাচ্ছি। দেখা যাক কী হয়।’’
অন্য জনের হাত দিয়ে টেস্ট শুরুর আগে ‘পাঁচ মিনিটের বেল’ বেজেছিল।
দু’জনেই অস্ট্রেলীয় কিংবদন্তি। দু’জনের হাত ধরে অ্যাসেজে অনেক স্মরণীয় জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তা, সেই শেন ওয়ার্ন যখন ভাগ্য বদলের জন্য চুল ছাঁটেন আর রিকি পন্টিং যখন বেল বাজিয়ে টেস্টের সূচনা করেন, তখন ক্রিকেট দেবতা কি অস্ট্রেলিয়ার উপর আর অপ্রসন্ন হয়ে থাকতে পারেন?
পারেন না। ফলে লর্ডসে প্রথম দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান ৩৩৭-১। মাঠের বাইরের জোড়া কিংবদন্তি দিনের শেষে স্বস্তির হাসি হাসতে পারলেন মাঠের ভিতরের ‘জোড়া ডনের’ দাপটে।
ক্রিস রজার্স এর আগে সাতটা টানা হাফ সেঞ্চুরি করলেও সেঞ্চুরি কিছুতেই আসছিল না। লর্ডসে সেটা এল। স্টিভন স্মিথের স্বপ্নের ফর্ম ধাক্কা খেয়েছিল কার্ডিফে। লর্ডসে সেটা আবার ফিরে এল। দু’জনের জোড়া সেঞ্চুরি এবং অসমাপ্ত দ্বিতীয় উইকেটে আড়াইশো রানের উপর পার্টনারশিপ অস্ট্রেলিয়াকে এমন জায়গায় নিয়ে গেল, যেখান থেকে মাইকেল ক্লার্ক সিরিজ ১-১ করার স্বপ্ন দেখতেই পারেন।
স্মিথ (১২৯ ব্যাটিং) এবং রজার্স (১৫৮ ব্যাটিং)— দু’জনেই আজ কোনও না কোনও ভাবে ডন ব্র্যাডম্যানকে মনে করিয়ে দিয়েছেন। পরিসংখ্যান বলছে, ৩৫ বছরের উপর বয়সি অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে রজার্স হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি অ্যাসেজে এক হাজারের উপর রান করলেন। প্রথম জন ডন ব্র্যাডম্যান। রজার্সের আরও একটা রেকর্ড হয়ে গেল এ দিন। ৩৫ বছর বয়সি অস্ট্রেলীয় ওপেনারদের মধ্যে তাঁর সবথেকে বেশি সেঞ্চুরি হয়ে গেল। পাঁচটা। এর আগের রেকর্ড ছিল ম্যাথু হেডেনের।
ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে তুলনায় চলে আসছেন স্মিথও। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ইনিংসে স্মিথের গড় এখন ব্র্যাডম্যানেরই পরে।
লর্ডসের উইকেটে প্রথম কাজটা অবশ্য করে গিয়েছিলেন অধিনায়ক ক্লার্ক। ব্যাটিং পিচে টসটা জিতে। প্রথম উইকেট (ডেভিড ওয়ার্নার) ৭৮ রানের মাথায় পড়ে গেলেও তাই চিন্তার ভাঁজ পড়েনি অস্ট্রেলিয়া শিবিরে।
কার্ডিফে প্রথম টেস্টে শূন্য রানে জো রুটের ক্যাচ ফেলে ম্যাচ ফেলে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। বৃহস্পতিবার লর্ডসে স্মিথ এবং রজার্সকে যে একেবারে আউট করার সুযোগ পায়নি ইংল্যান্ড, তা নয়। স্মিথের ক্যাচ স্লিপে বেলের প্রায় হাতে পড়েছিল। রজার্সের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বেশ কয়েক বার দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্লিপের পাশ দিয়ে বল চলে গিয়েছে। ভাগ্য এ দিন অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেই ছিল।
দিনের শেষে স্মিথ বলছিলেন, ‘‘উইকেট ভালই। কিন্তু আশা করছি, যত সময় যাবে, শুকনো হবে। পরের দিকে ব্যাট করতে সমস্যা হবে।’’ রজার্সের কথায়, ‘‘এই সব উইকেটে আপনি যদি এক বার জমে যান, তা হলে বড় রান করে আসতে হবে। আমরা যেটা করার চেষ্টা করছি।’’
দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক পন্টিং বলছিলেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়ার এই টেস্টে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলা ছাড়া উপায় ছিল না। ওরা সেটাই করেছে।’’ এবং চিরপরিচিত মেজাজে ফিরে গিয়ে আবার পুরনো চেহারায় ফিরে আসছে অস্ট্রেলিয়া।
অ্যাসেজের তারাদের ছবি: এএফপি, টুইটার ও রয়টার্স।