দায়িত্ব: সঞ্জয়ের সামনে এ বার নতুন চ্যালেঞ্জ। ফাইল চিত্র
পদত্যাগের পরে সবে আট দিন কেটেছে। ফের কোচিংয়ে ফিরছেন সঞ্জয় সেন। এটিকে-তে যোগ দিচ্ছেন মোহনবাগানের গত সাড়ে তিন বছরের কোচ। তাঁর সঙ্গে এক বছরের চুক্তি করছেন দু’বারের ইন্ডিয়ান সুপার লিগ চ্যাম্পিয়ন টিমের কর্তারা। ফেব্রুয়ারির শুরুতেই লাল-সাদা জার্সিতে মাঠে দেখা যাবে তাঁকে।
বারো মাসের চুক্তি হলেও আপাতত টেডি শেরিংহ্যামের টিমের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করা হচ্ছে না সঞ্জয়কে। এটিকে-র সব বয়সভিত্তিক যুব দলের উন্নতির দায়িত্ব নিচ্ছেন সনি নর্দে-দের আই লিগ দেওয়া কোচ। পরের মরসুমে তাঁকে যুক্ত করা হবে মূল দলের সঙ্গে। যা খবর, তাতে পরামর্শদাতা বা টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের মতো কোনও পদ দেওয়া হতে পারে তাঁকে। শোনা যাচ্ছে, আইএসএলের পরের মরসুমে এটিকের স্বদেশী ফুটবলার নির্বাচনের দায়িত্ব পেতে চলেছেন সঞ্জয়। যা আগে করেছেন ভাইচুং ভুটিয়া এবং এ বার করেছেন অ্যাশলে ওয়েস্টউড। সঞ্জয় অবশ্য পরের মরসুমের কথা এখনই ভাবছেন না। এটিকের তৃণমূল স্তরের ফুটবলারদের নিয়ে কাজ করার ভাবনা ঘুরছে তাঁর মাথায়। বলে দিলেন, ‘‘আমি তো ভারতীয় যুব দলের কোচ ছিলাম অনেক দিন। জেজে, প্রীতম, প্রবীর, প্রণয়রা ছিল সেই দলে। তৃণমূল স্তরে কাজ করতে ভালই লাগে। সে জন্যই এটিকে প্রস্তাব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে গিয়েছি। পরের বার কী হবে সেটা এখনই ভাবছি না। এখন এই কাজটা মন দিয়ে করতে চাই।’’
গত মঙ্গলবার চেন্নাই সিটি এফসি ম্যাচের পরেই মোহনবাগান কোচের পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন সঞ্জয়। পরের দিনই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে এটিকে। আইএসএলের আরও দু’টো ক্লাব জামশেদপুর এবং দিল্লি ডায়নামোজও চাইছিল বঙ্গসন্তান কোচকে। কেউ তাঁকে পরামর্শদাতা, কেউ টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসাবে। কিন্তু স্বয়ং এটিকে প্রধান সঞ্জীব গোয়েন্কা তাঁকে ডেকে সরাসরি প্রস্তাব দেওয়ায় আপ্লুত সঞ্জয় সিদ্ধান্ত নেন, তিনি এটিকে-তেই যোগ দেবেন। বললেন, ‘‘ওঁর আন্তরিকতা এবং আগ্রহ আমার ভাল লেগেছে বলেই অন্য টিমগুলোর প্রস্তাব নিয়ে আর মাথা ঘামাইনি। কথাবার্তা চূড়ান্ত। শনিবার সই করে দেব।’’
আরও পড়ুন: বিরাট কোহালিকে সাফল্যের নতুন মন্ত্র দিলেন সহবাগ
শোনা যাচ্ছে, সঞ্জয় কী ভাবে এটিকে-র সঙ্গে যুক্ত হবেন, সেটা তাঁর উপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল আলোচনার সময়। তাঁকে প্রথমে টিমের পরামর্শদাতা হিসাবে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু পরে সেই চিন্তার বদল হয়। সঞ্জয় নিজেও চাননি লিগের মাঝপথে টেডি এবং অ্যাশলে ওয়েস্টউডের সঙ্গী হয়ে মাঠে নামতে। তাঁর সমসাময়িক আই লিগ কোচ ডেরেক পেরিরা বা থাংবোই সিংতো যথাক্রমে আইএসএলের ক্লাব গোয়া এবং কেরল ব্লাস্টার্সের সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করছেন। কিন্তু সঞ্জয় সেই রাস্তায় হাঁটতে চাননি। আলোচনার সময় তিনি নাকি এটিকে-র প্রধান কর্তাকে বলে দেন, ‘‘এখন লিগ চলছে। টিমের সঙ্গে মাঠে নামা ঠিক হবে না। সেটা হলে ফুটবলার বা কোচেদের উপর খারাপ প্রভাব পড়বে।’’ কর্পোরেট কর্তা সঞ্জীববাবু তাতে সহমত হন। লিগ টেবলে টিমের বর্তমান অবস্থায় এটিকে কর্তারা হতাশ হলেও বর্তমান কোচ টেডি ও টি়ডি ওয়েস্টউডের উপর শেষ দিন পর্যন্ত আস্থা রাখতে চান তাঁরা। শোনা যাচ্ছে, বেঙ্গালুরুর সফল প্রাক্তন কোচ ওয়েস্টউডের কাছে মোহনবাগানের কোচ হওয়ার প্রস্তাব এসেছে। ওয়েস্টউড সেটা দু’একজন এটিকে কর্তাকেও নাকি ইঙ্গিতে বলেছেন। তা মাথায় রেখেই সঞ্জয়কে তড়িঘড়ি চুক্তিতে সই করানো হচ্ছে। তা ছাড়া গত তিন বছরে সঞ্জয়ের মোহনবাগান যা পারফরম্যান্স সেটা ওয়েস্টউড ছাড়া দেশের কোনও কোচের নেই। এটিকে কর্তারা মনে করছেন, ওয়েস্টউড অন্য দলে গেলে পরিবর্ত হিসেবে সঞ্জয়ই যোগ্য।
দেবজিৎ মজুমদার, প্রবীর দাশদের পর তাঁদের সফল কোচকে তুলে নিয়ে এটিকে কর্তারা বড় চমক দিলেন কলকাতার ফুটবলে। শুধু তা-ই নয়, আই লিগের মাঝপথে কোনও দলের কোচ আইএসএলের ক্লাবে সই করছেন এটাও তো নজিরবিহীন।