ফাইল চিত্র।
ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের প্রাক্তন উইঙ্গার স্টিভ কপেলকে বুধবার রাতে দেখে মনে হচ্ছিল বিশ্বের সবথেকে হতাশ ও অখুশি মানুষ। যুবভারতীতে এফ সি গোয়া ম্যাচের পরে ষাটোর্ধ্ব এটিকে কোচ চিন্তিত মুখে বলছিলেন, ‘‘আশাবাদী মানুষ হয়েও বলছি, শেষ চারে যাওয়ার রাস্তাটা আরও কঠিন হয়ে গেল। এর পর বাইরের মাঠে পর পর তিনটে ম্যাচ খেলতে হবে। গোলের সুযোগ নষ্ট করলে জিতব কী করে?’’ কথা বলার সময় কপালে বলিরেখা ফুটে ওঠার পাশাপাশি বারবার ডান হাতটা উঠছিল মাথায়।
ইন্ডিয়ান সুপার লিগে যে দল সর্বাধিক (২২) গোল করেছে, সেই গোয়াকে এ ভাবে মুঠোয় পেয়েও জিততে না পারার আক্ষেপ ঝরে পড়ছিল কপেলের গলায়। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে আট বছরে ৩২২টা ম্যাচ খেলে ৫৩ গোল আছে কপেলের। ইংল্যান্ডের হয়ে বিশ্বকাপ খেলেছেন। বেশ কিছু সাফল্য আছে মুকুটে। কিন্তু গত তিন বছর এই টুনার্মেন্টে বিভিন্ন দলে কোচিং করিয়েও চ্যাম্পিয়ন করতে পারেননি একবারও! এ বারও কি একই রাস্তা অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য? ‘‘আমি ম্যাচ ধরে ধরে এগোনোর ভাবনায় বিশ্বাসী। আমাদের পরের ম্যাচ চেন্নাইয়িনের সঙ্গে রবিবার। আপাতত ওটা জেতাই লক্ষ্য। কালু উচে চোট পেয়ে চলে যাওয়াটা আমাদের কাছে বড় ধাক্কা,’’ বলে দিলেন স্টিভ।
নয় ম্যাচ খেলে ১২ পয়েন্ট পেয়ে এটিকে এখন লিগ টেবলের ছয় নম্বরে। লিগে প্রতিটি দলকে খেলতে হবে ১৮ ম্যাচ। তার মধ্যে অর্ধেক খেলে ফেলেছে প্রায় সব দলই। পরিস্থিতি যা, তাতে বড় কোনও অঘটন না ঘটলে তিনটি দলের শেষ চারে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত। এরা হল বেঙ্গালুরু এফ সি (১৯), এফ সি গোয়া (১৭) এবং নর্থইস্ট ইউনাইটেড (১৭)। মজার ব্যাপার হল, এই তিনটি দলের সঙ্গেই এখনও বাইরের মাঠে গিয়ে খেলা বাকি আছে ম্যানুয়েল লানজারোতেদের। প্রায় দেড় মাসের একটি আন্তর্জাতিক বিরতি আছে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে। তখন আইএসএলের কোনও খেলা থাকছে না। তার আগে এটিকের খেলা রয়েছে চেন্নাইয়িন (২ ডিসেম্বর), নর্থ ইস্ট (৮ ডিসেম্বর) এবং বেঙ্গালুরুর (১৩ ডিসেম্বর) সঙ্গে। কপেলের টিম ম্যানেজমেন্টের যা হিসাব, তাতে এই তিনটি ম্যাচকেই ‘লাইফ লাইন’ হিসাবে ধরছে এটিকে। স্টিভ মুখে কোনও অঙ্কের কথা না বললেও, দু’বারের চ্যাম্পিয়ন দলের অন্দরের যা হিসাব, তাতে শেষ চারে যেতে হলে অন্তত ২৮ বা ২৯ পয়েন্ট পেতে হবে। ফলে বাকি নয় ম্যাচ থেকে অরিন্দম ভট্টাচার্য, প্রণয় হালদারদের পেতে হবে আরও অন্তত ১৬-১৭ পয়েন্ট। যা বেশ কঠিন। বাকি নয় ম্যাচের অন্তত চার-পাঁচটাতে জিততেই হবে। এটিকে-র সহকারী কোচ সঞ্জয় সেন বৃহস্পতি বার বলছিলেন, ‘‘ঘরের মাঠে দিল্লি, মুম্বই এবং জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ম্যাচ এখনও বাকি রয়েছে। এর মধ্যে দু’টো ম্যাচ জেতার লক্ষ্য নিয়ে নামতে হবে। ২৮ পয়েন্ট পেলে শেষ চারে যাওয়া সম্ভব। তাই এগোতে হবে অঙ্ক করে। কাজটা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়।’’ স্টিভ কপেল ও সঞ্জয় সেন-রা ধরেই নিয়েছেন, চার নম্বরে ওঠার লড়াইয়ে তাদের প্রতিপক্ষ মূলত জামশেদপুর ও মুম্বই। সঞ্জয় বলছিলেন, ‘‘ওই দুটি দলের সঙ্গে ম্যাচ বাকি। ওদের হারাতে পারলে সবথেকে বেশি লাভবান হব আমরা।’’ কিন্তু প্রশ্ন হল, গোল করে জেতাবেন কে? বলবন্ত সিংহ ব্যর্থ হওয়ার পর স্ট্রাইকারে খেলানো হচ্ছে এভার্টন স্যান্টোসকে। তিনিও গোল করতে ব্যর্থ। অধিনায়ক স্প্যানিশ তারকা লানজারোতের পায়েও যে গোল নেই।