অতীতের অ্যালবাম থেকে। বার্সেলোনার জার্সি ধরে দাঁড়িয়ে আছেন বিদ্যানন্দ সিংহ। ফাইল চিত্র
দলবদলের বাজারে একের পর এক চমক দিয়ে চলেছে এটিকে মোহনবাগান। লিয়োনেল মেসির বার্সেলোনাতে ট্রায়াল দেওয়া ফুটবলার এ বার সবুজ-মেরুনে। চোট-আঘাতে জর্জরিত হয়ে মাঝের সময়টা খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন মণিপুর থেকে আসা এই ফুটবলার। তবে এহেন ২৩ বছর বিদ্যানন্দ সিংহ আসন্ন মরসুম থেকে সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে চাপিয়ে মাঠে নামবেন। সই পর্ব মিটে গিয়েছে। ফলে এই রক্ষণাত্মক ডিফেন্ডারকে অগস্ট থেকে শুরু হতে চলা কলকাতা লিগেই দেখা যেতে পারে।
ঠিক সাত বছর আগের কথা। মাত্র ১৬ বছরের বিদ্যা তখন এআইএফএফ এলিট অ্যাকাডেমি দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এমন সময় দোহার অ্যাসপায়ার অ্যাকাডেমিতে সুযোগ পান বিদ্যা। সেখান থেকে ওঁর গন্তব্য ছিল সোজা ক্যাম্প ন্যু। বার্সেলোনার জুনিয়র দলের সঙ্গে অনুশীলন করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
২০১৪ সালে মুম্বইতে এআইএফএফ-এর এলিট অ্যাকাডেমির মুখ্য প্রশিক্ষক ছিলেন সাজিদ ডার। কাশ্মীর থেকে আনন্দবাজার অনলাইনকে টেলিফোনে সাজিদ বলেন, “বিদ্যা আমার অধীনে দুই বছর ছিল। সেই সময় গোটা দেশে ওর চেয়ে ভাল উঠতি প্রতিভা কেউ ছিল না। বল ধরা, বল ছাড়ার ক্ষেত্রে ওর নৈপুণ্য ছিল দেখার মতো। খেলার সময় পায়ে বল না থাকলে ওর মেজাজ গরম হয়ে যেত। সেই সময় মুম্বইতে আই লিগ খেলিয়ে একাধিক দল ছিল। সেই দলগুলোর বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে বিদ্যা দারুণ খেলা দেখাত। সেই জন্য বার্সেলোনাতে গিয়ে অনুশীলন করার সুযোগও চলে এসেছিল।”
মুম্বই সিটি-র হয়ে গোল করার পর বিদ্যার উল্লাস। ফাইল চিত্র।
বার্সা যাওয়ার আগে ওঁর জীবনে একটা মজার ঘটনা ঘটে। সেই সময় এসি মিলানে দাপটের সঙ্গে খেলছেন জাপানের মিডফিল্ডার কেউসুকে হন্ডা। বার্সেলোনার স্পটাররা ‘বিদ্যা’ নামটা উচ্চারণ করতে পারতেন না। তাই ট্রায়ালে ডাকার সময় এই মণিপুরীকে ওঁরা ‘হন্ডা’ নামে ডাকতে শুরু করেন।
বিদ্যা হলেন ভারতের প্রথম জুনিয়র খেলোয়াড় যিনি দোহাতে গিয়ে ‘অল স্টার একাদশ’-এর হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। সে বার আয়াক্সের বিরুদ্ধে প্রদর্শনী ম্যাচে ৩-১ গোলে জিতেছিল ‘অল স্টার একাদশ’। একটি গোল বিদ্যার পা থেকে এসেছিল।
ওঁর ফুটবল সফরও শুরু হয়েছিল বড্ড অদ্ভুত ভাবে। মণিপুরের মইরাং গ্রামে বেড়ে ওঠা বিদ্যা মাত্র ১১ বছর বয়সে ঘর ছেড়েছিলেন। বাবা ছিলেন অসম রাইফেলসের জওয়ান। মা চালাতেন মুদি দোকান। ঘরে অর্থের অভাব ছিল না। কিন্তু ফুটবলের প্রতি টান ওঁকে ঘরে থাকতে দেয়নি। মণিপুরের মইরাং গ্রাম থেকে সেখানের সাই (স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া) -এর দূরত্ব প্রায় ৪৫ কিলোমিটার। প্রতি সপ্তাহে পরিবারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ মিলত না। তবুও ফুটবলকে ভালবেসে কষ্ট সহ্য করেছেন বিদ্যা। মাসের পর মাস সাই ছিল ওঁর ঠিকানা।
তবে সাজিদ ডার মনে করেন বিদ্যার প্রতিভার বিকাশ এখনও ঘটেনি। এর পিছনে অবশ্য দুটো কারণ তুলে ধরলেন। তিনি শেষে যোগ করেন, “চোট-আঘাত ওর কেরিয়ারে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই কারণে ওর সমসামিক অনেক ফুটবলার এগিয়ে গিয়েছে। এই চোটের জন্যই এর আগে এটিকে, বেঙ্গালুরু এফসি বি, মুম্বই সিটি দলে ও তেমন সুযোগ পায়নি। তবে সব কিছুর পরেও বিদ্যাকে এটিকে মোহনবাগান তুলে নিয়েছে। আশা করি ও এ বার সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারবে।”