এই সেই মুহূর্ত। বলের ফ্লাইট বুঝতে না পেরে গোল হজম করতে হয় গুরপ্রীতকে।
যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে বন্ধুত্ব আর হলই না ভারতের শেষ প্রহরী গুরপ্রীত সিংহ সান্ধুর। অতীতে এই স্টেডিয়ামেই ইস্টবেঙ্গলকে ডুবিয়েছিলেন পঞ্জাবতনয়। মঙ্গলবার তাঁরই ভুলে গোল হজম করে বসে ইগর স্তিমাচের ভারত। সুনীল ছেত্রীরা পড়ে যান প্রবল চাপে। ভাগ্য ভাল ছিল ভারতের। আদিল খানের হেডে মানরক্ষা হয় দেশের।
পরিচিত মাঠে শিষ্যের ভুল দেখে বিস্মিত এশিয়ান অলস্টার-খ্যাত গোলকিপার অতনু ভট্টাচার্য। যে গুরপ্রীত ভারতের বারের নীচে দাঁড়িয়ে কাতারের ঝড় থামিয়ে দিয়েছিলেন, যুবভারতীতে সেই তিনিই কি দাঁড়িয়েছিলেন ভারতের গোলে? অতনু বলছেন, ‘‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গুরপ্রীতের খেলা দেখে মনেই হয়নি, এই ছেলেটাই কাতারের বিরুদ্ধে অতিমানব হয়ে উঠেছিল। মঙ্গলবার কী ভাবে যে এ রকম একটা ভুল করে বসল বুঝতে পারলাম না।’’
গুরপ্রীত মানেই ধাঁধা। কখনও তিনি অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় প্রতিপক্ষের পা থেকে বল তুলে নেন। আবার কখনও এমন সব ভুল করে বসেন যার জন্য সবাই ‘হায় হায়’ করেন। লাল-হলুদের হয়ে খেলার সময়ে গোল করার নেশায় তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রতিপক্ষ ইউনাইটেড স্পোর্টসের পেনাল্টি বক্সে। তার পরিণাম হয়েছিল ভয়ঙ্কর। ইউনাইটেডের বিদেশি স্ট্রাইকার কেন ভিনসেন্ট নিজেদের পেনাল্টি বক্স থেকে বল ধরে দৌড়তে দৌড়তে ইস্টবেঙ্গলের জালে বল জড়িয়ে দেন। একই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কল্যাণীতে তাঁর পায়ের নীচ দিয়ে গলে যায় বল।
আরও পড়ুন-দুর্ঘটনায় শেষ হতে বসেছিল কেরিয়ার, এঁর গোলেই ভারতকে প্রায় হারিয়ে দিচ্ছিল বাংলাদেশ
মঙ্গলবারের যুবভারতীতে পুরনো গুরপ্রীতই যেন আবার ফিরে এলেন! শিষ্য সম্পর্কে অতনু বলছেন, ‘‘টেকনিক্যালি ভুল করেছিল গুরপ্রীত। ফ্রি কিক থেকে যে বলটা ভাসানো হয়েছিল, সে ধরনের বল ধরা সব চেয়ে সহজ। পেনাল্টি বক্সের ভিতরে জটলা ছিল। উড়ন্ত বলের গতিপথটা ও বুঝতে পারেনি। দেখে মনে হয়েছে, বলটা ধরার জন্য ঝাঁপাবে তা আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল। আদিল খানও ঠিক জায়গায় ছিল না। গুরপ্রীতের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পড়ে যায় আদিল। বাংলাদেশের স্ট্রাইকার সুযোগের সদ্ব্যবহার করে।’’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, গোলকিপার জায়গাটাই কঠিন। সবাই ভুল করলেও তা চোখে পড়ে না। কিন্তু গোলকিপার ভুল করলেই তা ধরা পড়ে। জাতীয় দলের প্রাক্তন গোলকিপার বলছেন, ‘‘ভুল থেকেই শিক্ষা নিতে হবে। আশা করি পরের ম্যাচগুলোয় গুরপ্রীত আর আগের ভুল করবে না। তবে একটা ভুল দিয়ে ওকে বিচার করাটা ঠিক হবে না। অনেক ভাল ম্যাচ ও খেলেছে। আগামী দিনে আরও ভাল ম্যাচ উপহার দেবে।’’
নিজের ফুটবল জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে অতনু বলছেন, ‘‘শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলা সহজ। তখন তো হারানোর কিছুই থাকে না। নিজের সেরাটা দেওয়া যায়। কিন্তু, প্রায় কাছাকাছি শক্তির দুটো দলের খেলা সব সময়েই কঠিন হয়।’’
সেটাই হয়েছে মঙ্গলবার। মোক্ষম সময়ে গোল হজম করে দলকে চাপে ফেলে দিয়েছেন। এক মুহূর্তের জন্যও আত্মবিশ্বাসী দেখায়নি তাঁকে। কেন যে নড়বড়ে দেখাল গুরপ্রীতকে, সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না একসময়ের কোচ।
আরও পড়ুন: অধিনায়ক কোহালির ব্যাট থেকে এসেছে দলের ১৮.৬৭% রান! আর অধিনায়ক ধোনির ব্যাট থেকে...