আটশো মিটারে সবার আগে মনজিৎ। পিটিআই
পুসারলা বেঙ্কট সিন্ধু নিজেকে যে জায়গায় নিয়ে গেলেন, সেখানে আজ পর্যন্ত কোনও ভারতীয় ব্যাডমিন্টন তারকা পৌঁছতে পারেননি। হতে পারে এশিয়ান গেমসের ফাইনালে তিনি বিশ্বের এক নম্বর চিনা তাইপেইয়ের সেই তাই জু ইং-এর কাছে মাত্র ৩৪ মিনিটে ১৩-২১, ১৬-২১ গেমে হেরেছেন। কিন্তু পুল্লেলা গোপীচন্দের তেইশ বছর বয়সি এই ছাত্রীই প্রথম কোনও ভারতীয় ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় যিনি এশিয়াডে রুপো জিতলেন।
এমনিতে অবশ্য এই তাই জু-র কাছে টানা ছ’বার হেরে গেলেন সিন্ধু। কিন্তু তাঁর দাবি, বিশ্বের এক নম্বরের বিরুদ্ধে খেলতে নামলে কখনও কোনও মানসিক প্রতিবন্ধকতা তাঁর মনে আসে না। এবং তাঁর মনে হচ্ছে, একটু ধৈর্য নিয়ে খেলতে পারলে তাই জু-কেও হারানো সম্ভব।
জাকার্তায় রুপো জিতে আপ্লুত সিন্ধুকে বলতে শোনা গেল, ‘‘মোটেই আমার আর তাই জু-র খেলায় বিরাট কোনও ফারাক নেই। আমাদের আসলে আর একটু প্রস্তুতি নিয়ে তৈরি হতে হবে। নিশ্চিত ভাবেই ওকে একদিন আমরা হারাতে পারব। মানছি কাজটা সহজ নয়। কিন্তু আমাদের কোথায় কোথায় ভুল হচ্ছে যদি ধরতে পারি, তা হলে সেটা অবশ্যই সম্ভব।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘ওর বিরুদ্ধে আমার কোনও মানসিক প্রতিবন্ধকতা নেই। কিন্তু মাঝে মাঝে ভুল করে ফেলি। যার ফলে ও অনেকটা এগিয়ে যায় আর সহজ পয়েন্ট পায়।’’
ফাইনালের বিশ্লেষণ করতে বসে সিন্ধুর আরও কথা, ‘‘যদি ধৈর্য ধরে শাটলগুলো কোর্টে রাখতে পারতাম তা হলে কিন্তু ফলটা অন্য রকম হলেও হতে পারত। তবে এটাও সত্যিই যে ওর রক্ষণ খুব ভাল। তাই ওর বিরুদ্ধে পয়েন্ট জেতা বেশ কঠিন।’’ শুধু তো সিন্ধু নন, তাই জু কিন্তু এখানে সাইনা নেহওয়ালকেও সেমিফাইনালে হারিয়েছেন এবং তাঁর দেশকে ব্যাডমিন্টনে প্রথম সোনা দিয়েছেন। ঘটনাচক্রে সিন্ধু, সাইনা মিলে মোট বাইশটি ম্যাচ তাই জু-র কাছে হেরেছেন।
সিন্ধু শেষ তাই জু-কে হারিয়েছিলেন রিয়ো অলিম্পিক্সে। ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের মহাতারকাকে প্রশ্ন করা হয়, এখন কি তাই জু রিয়োর চেয়েও ভাল খেলেন? তাতে জবাব, ‘‘অবশ্যই। প্রচুর উন্নতি করেছে। স্ট্রোক আগের চেয়েও ভাল হয়েছে। কী ভাবে কখন খেলবে বোঝা কঠিন। যদি এই ব্যাপারটা খেয়াল রেখে আমরা তৈরি হতে পারি, তা হলে হয়তো আগামী দিনে কখনও ছবিটা পাল্টাতে পারে। এমনিতে ওর খেলার সব চেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য, দুর্বোধ্য স্টাইল। আর একটা ব্যাপার হচ্ছে জাপানিদের মতো বেশি র্যালি করে না। তাই ও ওদের চেয়ে সব সময়ই আলাদা জাতের খেলোয়াড়।’’
সিন্ধুর জন্য খারাপ ব্যাপারটা হচ্ছে, এ’মরসুমে তিনি তিনটি বড় মঞ্চে ফাইনালে হেরে গেলেন। কমনওয়েলথ গেমস, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের পরে এশিয়ান গেমস। তা হলে কি ফাইনালে খেলার চাপ নিতে পারছেন না? সিন্ধুর জবাব, ‘‘না, না কোনও চাপ ছিল না। ফল যাই হোক আসল ব্যাপার নিজের সেরাটা দিতে পারছি কি না। সেটা পারলেই খেলার চরিত্র বদলে য়ায়। এমনিতে এখানে আরও একটা ভাল প্রতিযোগিতাই খেললাম।’’
ছাত্রী এই নিয়ে দশ বার নানা জায়গার ফাইনালে হারলেও তাঁর কোচ গোপীচন্দ কিন্তু হতাশ নন। উল্টে বললেন, ‘‘দিনের শেষে সবাই চায় সোনার পদকটা জিততে। সেটা না পারলেও সিন্ধুর কৃতিত্ব কম নয় বরং গর্বিত হওয়ার মতোই। চিরকালই আমরা সংশয়বাদী। ও ফাইনালে উঠলে সেটাই হয়। আশা করি আগামী দিনে এই ছবিটা বদলে যাবে। একদিন ফাইনালেও সিন্ধু জিতবে।’’