ছন্দে: এটিকে রক্ষণের ত্রাস সুনীল ছেত্রী। —ফাইল চিত্র।
অ্যাশলে ওয়েস্টউড বনাম বেঙ্গালুরুর লড়াই! চমকপ্রদ এই মঞ্চ কখনও দেখেনি ভারতীয় ফুটবল। ইন্ডিয়ান সুপার লিগে শনিবার রাতে যুবভারতী দেখবে সেই ‘যুদ্ধ’।
দেড় বছর আগে কোচ থাকার সময় যে টিমের নাম ইতিহাসের পাতায় তুলে দিয়ে এসেছিলেন, সেই বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধেই মগজাস্ত্রে শান দিয়ে প্রথমবার রিজার্ভ বেঞ্চে বসবেন ব্রিটিশ কোচ। তবে ফেভারিট হিসাবে নয়, বিধ্বস্ত, ভঙ্গুর, নুইয়ে পড়া টিমকে অক্সিজেন দিতে।
বর্তমান এটিকে কোচ অ্যাশলে এ দেশে আসার পর প্রথম কোচিং করার সুযোগ পেয়েছিলেন সুনীল ছেত্রী-উদান্তা সিংহদের। বেঙ্গালুরু জন্মের তিন বছরের মধ্যেই দুটো আই লিগ এবং একটা ফেড কাপ জিতেছিল তাঁর সৌজন্যেই। কিন্তু এ দেশের ক্লাব কোচিংয়ে এ রকম চমকপ্রদ সাফল্য পাওয়ার পর নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়ায় তাঁকে ছেঁটে ফেলেছিল ‘দ্য ব্লুজ’। তার পর আর ভারতে কোচিং করার সুযোগ পাননি অ্যাশলে। মালয়েশিয়ায় কোচিং করতে গিয়েও টিঁকতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য টেডি শেরিংহ্যামকে কোচের পদ থেকে সরানোর পর কিছুটা কাকতালীয় ভাবেই এটিকের অস্থায়ী কোচ হয়েছেন অ্যাশলে।
‘‘পেশাদার ফুটবলে কোন ক্লাব ছেড়ে এলাম, কার বিরুদ্ধে খেললাম সেটা নিয়ে কেউ ভাবে না,’’ বলে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেও শুক্রবার বিকেলে অ্যাশলের মুখে ধরা পড়ে যায় হতাশা। সম্ভবত সেই হতাশা থেকেই পুরনো দলের বিরুদ্ধে হঠাৎ-ই দেগে দেন তোপও, ‘‘ওরা কর্নার, ফ্রি কিকে শক্তিশালী। কিন্তু এটাও ঠিক বেঙ্গালুরু বক্সের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি করে। ভাল রেফারিং দরকার সে জন্যই।’’
এটা কি হারের আগেই হেরে যাওয়ার ঢাল তৈরির চেষ্টা অ্যাশলের? হয়তো। কারণ এটিকে তো এ বার ডুবন্ত জাহাজ। আইএসএল শুরুর পর গত তিন বছরে লিগ টেবলে এত হতশ্রী দশা কখনও হয়নি এটিকে-র! শেষ চারে যাওয়ার আশাও তাদের নেই আর। রবি কিনদের কোচের হাত কামড়ানো, গর্জে ওঠা তাই স্বাভাবিক।
লিগ টেবলের শীর্ষে থাকা বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে এটিকে-র অবস্থাটা ঠিক কেমন? পয়েন্টের বিচারে কলকাতার (১২) দ্বিগুণ পয়েন্ট (২৪) সংগ্রহ করে ফেলেছে সুনীল ছেত্রীদের টিম। শুধু তা-ই নয়, বারো ম্যাচের পর এটিকে-র প্রায় তিনগুণ গোল (২৩) করেছে বেঙ্গালুরু। ওই ২৩ গোলের মধ্যে সতেরোটিই করেছেন বেঙ্গালুরুর দুই স্ট্রাইকার সুনীল ছেত্রী (৮) এবং নিকোলাস ফেডোর ফ্লেরেস বা মিকুর (৯)। টিমের দুই স্ট্রাইকার পাল্লা দিয়ে গোল করছেন এটা তো বাড়তি অ্যাডভান্টেজ? প্রশ্ন শুনে বেঙ্গালুরুর স্প্যানিশ কোচ আলবের্তো রোকা প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বলে দেন, ‘‘আমরা এই টুনার্মেন্টে এখনও পরপর তিনটে ম্যাচ জিততে পারিনি। সেটা করার সুযোগ সামনে।’’
গত দু’বারের চ্যাম্পিয়ন এটিকে-র হাল এমনিতে খুবই খারাপ। লিগ টেবলে আট নম্বরে আছে তারা। রবি কিনের চোট। তাঁর প্রথম একাদশে খেলার সম্ভাবনা নেই। চোটের তালিকায় ঢুকে পড়েছেন টিমের দুই বঙ্গসন্তান দেবজিৎ মজুমদার, প্রবীর দাশ। টম থর্প, রায়ান টেলরেরও চোট সারেনি। এই অবস্থায় মরসুমে প্রথমবার বিদেশি কিপার নিয়ে নামবেন অ্যাশলে। যা টিমের ভারসাম্যে আঘাত করবেই।
এ রকম কলকাতাকে সামনে পেয়েও বাংলার জামাই বেঙ্গালুরু অধিনায়ক সুনীল বলছেন, ‘‘কাউকে ছোট করে দেখতে নেই। দু’ম্যাচ জেতার আগে দিল্লির কাছেও হেরে গিয়েছিলাম। এটিকে-কে তাই খাটো করে দেখছি না। ম্যাচটা আমাদের জিততেই হবে।’’ তিন বছর আগে উদান্তাকে টি এফ এ থেকে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে এসেছিলেন অ্যাশলে। সেই কোচের বিরুদ্ধে নামার আগে আপনি কি একটু নস্টালজিক? টিম হোটেলে বসে মণিপুরের মিডিও-র মন্তব্য, ‘‘না, না এ রকম ব্যাপার নেই।’’
সুনীল-উদান্তারা যতই পুরনো কোচের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান, বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, অ্যাশলের কলকাতাকে হারানোর জন্য মরিয়া বেঙ্গালুরু টিম ম্যানেজমেন্ট ইতিমধ্যেই নাকি ফুটবলারদের চাঙ্গা করতে ইনসেনটিভ ঘোষণা করেছে।
অ্যাশলেও নিশ্চয়ই খবরটা পেয়ে গিয়েছেন। না হলে ব্রিটিশ কোচকে কেন এমন চিন্তিত দেখাচ্ছে?