অবিশ্বাস্য: ঠিক উনিশ দিন আগে আর্চারের বাউন্সারে ভূপতিত হয়েছিলেন (বাঁ দিকে)। চোটের ধাক্কায় তার পরের টেস্টে নামতে পারেননি। ফিরে এসেই ডাবল সেঞ্চুরি অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথের। বৃহস্পতিবার। ফাইল চিত্র ও এএফপি
অবিশ্বাস্য এক ক্রিকেট রূপকথা লিখে চলেছেন তিনি। ক্রিকেট মাঠ থেকে এক বছরের নির্বাসন তাঁকে দমিয়ে দিতে পারেনি। জোফ্রা আর্চারের বিষাক্ত বাউন্সারে লুটিয়ে পড়েছেন। আহত হয়ে ছিটকে গিয়েছেন এক টেস্টের জন্য। কিন্তু ফিরে এসে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁর শরীরে আঘাত করা যেতে পারে, কিন্তু মানসিকতায় সামান্য চিড় ধরানো যাবে না।
তিনি স্টিভ স্মিথ। লর্ডসে মাথায় চোট পেয়েছিলেন। হেডিংলে টেস্টে ছিটকে গিয়েছিলেন। আর ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ফিরেই টেস্টে নিজের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি করলেন। বৃহস্পতিবার চতুর্থ টেস্টের দ্বিতীয় দিনে স্মিথের ব্যাট থেকে পাওয়া গেল মহাকাব্যিক ২১১ রান। অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ডিক্লেয়ার করে আট উইকেটে ৪৯৭ রানে। দিনের শেষে ইংল্যান্ডের রান এক উইকেটে ২৩।
এ বারের অ্যাশেজ যেন কোনও না কোনও ভাবে মিশে যাচ্ছে অতীতের ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া দ্বৈরথের সঙ্গে। আর্চারের মারাত্মক বোলিংয়ে ফিরে এসেছে কুখ্যাত বডিলাইন সিরিজের ছায়া। আর স্মিথ ফিরিয়ে এনেছেন স্বয়ং ডন ব্র্যাডম্যানকে। চলতি সিরিজে তিন টেস্ট খেলে তিনটি সেঞ্চুরি করার পরে স্মিথের নামের পাশে বসে গিয়েছে ‘আধুনিক ডন’-এর তকমা।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সব চেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরি করার তালিকায় ঠিক ব্র্যাডম্যানের পরেই স্মিথ। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্র্যাডম্যানের ৬৩ টেস্ট ইনিংসে ১৯টি সেঞ্চুরি। সেখানে স্মিথের ৪৫ ইনিংসে ১১। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের মাঠে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করার ব্যাপারেও তিনি এখন ডনের পরে। ইংল্যান্ডে ব্র্যাডম্যানের ডাবল সেঞ্চুরির সংখ্যা পাঁচ, স্মিথের দুই।
স্মিথের ব্যাটিং দেখে টুইট করেছেন স্বয়ং সচিন তেন্ডুলকরও। মুগ্ধ সচিন লিখেছেন, ‘‘স্মিথের টেকনিক খুব জটিল। কিন্তু খুব গোছানো মানসিকতার মালিক। এটাই স্মিথকে আলাদা করে দিয়েছে। অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন!’’ মাইকেল ভনের টুইট, ‘‘এক জন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার সম্পর্কে এ রকম কথা বলতে একেবারেই ভাল লাগছে না। কিন্তু এ রকম দক্ষতা ও মনঃসংযোগ যার আছে, প্রশংসা তো করতেই হবে।’’
স্কোরকার্ড
অস্ট্রেলিয়া ৪৯৭-৮ ডি. (১২৬)
ইংল্যান্ড ২৩-১ (১০)
অস্ট্রেলিয়া (প্রথম ইনিংস)
হ্যারিস এলবিডব্লিউ বো ব্রড ১৩•২৪
ওয়ার্নার ক বেয়ারস্টো বো ব্রড ০•২
লাবুশানে বো ওভার্টন ৬৭•১২৮
স্মিথ ক ডেনলি বো রুট ২১১•৩১৯
হেড এলবিডব্লিউ বো ব্রড ১৯•২২
ওয়েড ক রুট বো লিচ ১৬•৪৫
পেন ক বেয়ারস্টো বো ওভার্টন ৫৮•১২৭
কামিন্স ক স্টোকস বো লিচ ৪•৯
স্টার্ক ন. আ. ৫৪•৫৮
লায়ন ন. আ. ২৬•২৬
অতিরিক্ত ২৯
মোট ৪৯৭-৮ ডি. (১২৬)
পতন: ১-১ (ওয়ার্নার, ০.৪), ২-২০ (হ্যারিস, ৬.৬) ৩-১৪৪ (লাবুশানে, ৩৯.২), ৪-১৮৩ (হেড, ৪৮.৪), ৫-২২৪ (ওয়েড, ৬০.৫), ৬-৩৬৯ (পেন, ১০১.১), ৭-৩৮৭ (কামিন্স, ১০৪.৬), ৮-৪৩৮ (স্মিথ, ১১৭.৫)।
বোলিং: স্টুয়ার্ট ব্রড ২৫-২-৯৭-৩, জোফ্রা আর্চার ২৭-৩-৯৭-০, বেন স্টোকস ১০.৫-০-৬৬-০, জ্যাক লিচ ২৬.১-৩-৮৩-২, ক্রেগ ওভার্টন ২৮-৩-৮৫-২, জো ডেনলি ৩-১-৮-০, জো রুট ৬-০-৩৯-১।
ইংল্যান্ড (প্রথম ইনিংস)
ররি বার্নস ব্যাটিং ১৫•২৫
জো ডেনলি ক ওয়েড বো কামিন্স ৪•২৪
ওভার্টন ব্যাটিং ৩•১২
মোট ২৩-১ (১০)
বোলিং: মিচেল স্টার্ক ২-২-০-০, জশ হেজলউড ৪-১-৩-০, প্যাট কামিন্স ৩-০-১০-০, নেথান লায়ন ১-০-১০-০।