ইউএস ওপেন ট্রফি নিয়ে আরিয়ানা সাবালেঙ্কা। ছবি: এক্স (টুইটার)।
মহিলাদের সিঙ্গলসে নতুন চ্যাম্পিয়ন পেল ইউএসওপেন। জেসিকা পেগুলাকে সরাসরি সেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলেন আরিয়ানা সাবালেঙ্কা। দ্বিতীয় বাছাই বেলারুশের টেনিস খেলোয়াড় জিতলেন ৭-৫, ৭-৫ ব্যবধানে। এই নিয়ে নিজের তৃতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতলেন সাবালেঙ্কা।
২০২৩ এবং ২০২৪ পর পর দু’বার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন সাবালেঙ্কা। এ বার ইউএস ওপেন জিতলেন। ফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও পেগুলা জিততে পারলেন না। প্রথম বার কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে ওঠা আমেরিকার খেলোয়াড় হারলেন চাপ সামলাতে না পেরে। ম্যচের শেষ দিকে সাবালেঙ্কার আগ্রাসী টেনিসের সামনে পেরে উঠলেন না। টানা চার গেম হেরে ম্যাচ হাতছাড়া করলেন। পর পর দু’টি গেমে সার্ভিস ধরে রাখতে পারেননি পেগুলা।
গত বছর ফাইনালে উঠেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি বিশ্বের প্রাক্তন এক নম্বর সাবালেঙ্কা। ফাইনালে হারতে হয়েছিল কোকো গফের কাছে। এ বার আর ভুল করেননি প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় বাছাই। কোয়ার্টার ফাইনালে শীর্ষ বাছাই ইগা সিয়নটেককে হারানো পেগুলা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। তবু খেতাবি লড়াইয়ের চাপ সামলাতে পারলেন না। চাপের প্রভাব দেখা গেল তাঁর সার্ভিসে। ম্যাচে ছ’টি ‘এস’ সার্ভিস করলেও প্রথম সার্ভিসের ক্ষেত্রে তুলনায় দুর্বল দেখিয়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেননি সাবালেঙ্কা।
১২ মাস আগে হারের হতাশায় লকার রুমে ফিরে র্যাকেট ভেঙে ফেলেছিলেন সাবালেঙ্কা। ফাইনালে উঠেও ইউএস ওপেন জিততে না পারার হতাশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। এ বারও মাটিতে শুয়ে পড়লেন ম্যাচ শেষ হওয়ার পর। জয়ের আনন্দে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের পর ইউএস ওপেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ায়, হার্ড কোর্টে টানা ১৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম ম্যাচ জিতলেন সাবালেঙ্কা। জয়ের পর আনন্দে কথাই বলতে পারছিলেন না ২৬ বছরের খেলোয়াড়। সে কথা মেনেও নিলেন। সাবালেঙ্কা বললেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমি বাক্রুদ্ধ। সব সময় স্বপ্ন দেখতাম এই সুন্দর ট্রফিটা জেতার। অবশেষে জিততে পারলাম। ভীষণ গর্বিত মনে হচ্ছে। এমন কখনও বলি না। কিন্তু, সত্যিই খুব গর্বিত লাগছে।’’
টেনিসজীবনের তৃতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে সাবালঙ্কা কতটা উচ্ছ্বসিত, তা বোঝা গিয়েছে তাঁর কথাতেই। সাফল্যের আনন্দ নিয়ন্ত্রণ করতে চাননি। আবেগ লুকিয়ে রাখতে চাননি। ম্যাচের প্রতিটি মুহূর্ত যেমন উপভোগ করেছেন, ষষ্ঠ বাছাই পেগুলার সঙ্গে লড়াই করে যেমন প্রতিটি পয়েন্ট ছিনিয়ে নিয়েছেন, তেমন খেতাব জয়ের পরের মুহূর্তটাও চুটিয়ে উপভোগ করতে চেয়েছেন। আমেরিকার খেলোয়াড় হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামের সমর্থন বেশি ছিল ৩০ বছরের পেগুলার দিকে। শনিবারের ফাইনালে সাবালেঙ্কার প্রতিপক্ষ ছিল গ্যালারিও। অঘটনে ভরা বছরের শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে চাপ কম ছিল না তাঁর উপর। তবু ১ ঘণ্টা ৫৩ মিনিটে লড়াইয়ে খেতাব ছিনিয়ে নিয়ে পেগুলার গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অপেক্ষা আরও বাড়িয়ে দিলেন।
দ্বিতীয় সেটে একটা সময় ৫-৩ গেমে এগিয়ে ছিলেন পেগুলা। টেনিস প্রেমীরা যখন ধরে নিয়েছেন খেলা তৃতীয় সেটে গড়াবে, ঠিক তখনই আস্তিন থেকে নিজের সেরা টেনিস বের করে আনেন সাবালেঙ্কা। টানা চার গেম জিতে সেট, ম্যাচ এবং ইউএস ওপেন জিতে নেন। তার আগে হঠাৎ তাঁকে কিছুটা দিশাহীন মনে হচ্ছিল। দু’বার তাঁর সার্ভিস ভেঙে দেন পেগুলা। ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা সাবলেঙ্কা পিছিয়ে পড়েন ৩-৫ গেমে। তার পর আর এগোতে দেননি প্রতিপক্ষকে। ৭-৫ ব্যবধানে জিতে নেন সেট। দুই প্রতিপক্ষের নাছোড় লড়াইয়ে দ্বিতীয় সেটের আবহ বদলাল বার বার।
প্রথম সেটেও সাবালেঙ্কা দু’বার প্রতিপক্ষের সার্ভিস ভেঙে ৫-২ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার পর লড়াইয়ে ফেরেন পেগুলা। সাবালেঙ্কার একাধিক আনফোর্সড এরর এবং ডাবল ফল্ট কাজে লাগান আমেরিকার খেলোয়াড়। ৫-৬ করে ফেলেন পেগুলা। নিজের সার্ভিস ধরে রাখতে পারলে প্রথম সেট নিয়ে যেতে পারতেন টাইব্রেকারে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময় চাপে পড়ে গিয়ে সার্ভিস গেম খুইয়ে সেট হেরে যান।
গত বছর হারের অন্যতম কারণ হিসাবে দর্শকদের চিৎকারের (গফের প্রতি সমর্থন) কথা বলেছিলেন। পেগুলার মতো গফও আমেরিকার খেলোয়াড়। তাই ফাইনালে স্টেডিয়ামের আবহ কেমন হতে পারে, তার এটা আন্দাজ সাবালেঙ্কার ছিলই। তাও সামলেছেন সফল ভাবে।