প্রত্যয়ী: বোলারদের উপরে আস্থা রাখছেন অরুণ। নিজস্ব চিত্র
সেমিফাইনাল শেষ না হতেই ফাইনালের পরিকল্পনা শুরু বাংলা শিবিরে। সোমবার কর্নাটকের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালের তৃতীয় দিনের শেষে বঙ্গ কোচ জানিয়ে দিলেন, ফাইনালে উঠলে দলে ফিরতে পারেন ঋদ্ধিমান সাহা। দিনের শেষে অরুণ লাল বলেন, ‘‘ফাইনালে ওঠার পরেই ঠিক করব কী করা যায়। তবে ঋদ্ধিকে যদি বোর্ড ছাড় দেয়, তা হলে বাংলা দলে ওর জন্য দরজা খোলা।’’
কিন্তু মহম্মদ শামিকে তিনি চান কি না বোঝা গেল না। বাংলার পেস-ত্রয়ী যথেষ্ট ভাল পারফর্ম করছেন। এই ছন্দ কি তিনি ভাঙতে চাইবেন? কোচের উত্তর, ‘‘আগে ফাইনালে উঠি। তার পর দেখা যাবে।’’ অবশ্য নিউজ়িল্যান্ড সিরিজের পরেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজ ভারতের। সেই দলে শামি সুযোগ পেলে, রঞ্জি খেলার কোনও প্রশ্নই নেই।
অন্ধ্রপ্রদেশের বিরুদ্ধে ২০০৫-০৬ মরসুমে ২৬৫ রান তাড়া করে জিতেছিল কর্নাটক। তাও আবার পাঁচ উইকেটের বিনিময়ে। তার পর থেকে চতুর্থ ইনিংসে সে ভাবে দাগ কাটতে পারেনি কে এল রাহুলদের রাজ্য। বাংলার বিরুদ্ধে চতুর্থ ইনিংসে ৩৫২ রান করতে হবে জেতার জন্য। হাতে এখনও সাত উইকেট। ক্রিজে রয়েছেন মণীশ পাণ্ডে ও দেবদূত পাড়িক্কাল।
কিন্তু বাংলার কোচ অরুণ লাল আত্মবিশ্বাসী। বলছিলেন, ‘‘ভয় পাওয়ার মতো এখনও কিছু হয়নি। এই পরিস্থিতি থেকে আমাদের জেতার সম্ভাবনা বেশি। কাল সকালের এক ঘণ্টা বোলারদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’ কোচ যদিও মানছেন, ১৯০ রানে এগিয়ে থাকার পরে বোর্ডে আরও বেশি রান যোগ করা উচিত ছিল বাংলার। অরুণের কথায়, ‘‘অন্তত একশো রান কম করেছি। এত রানে এগিয়ে থাকার পরে আমাদের উচিত ছিল আজ সারা দিন ব্যাট করার। বিপক্ষের সামনে ৫০০ রানের লক্ষ্য দেওয়ার মতো জায়গা ছিল। সেটা কিন্তু নষ্ট করেছে আমাদের ব্যাটিং লাইন-আপ।’’
কী করে বাংলার উপরের সারির ব্যাটসম্যানদের ছন্দে ফেরানো সম্ভব? অরুণ বলছিলেন, ‘‘অনেক কিছুই চেষ্টা করা হয়েছে। এর চেয়ে বেশি আমি কোনও উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। পেলে নিশ্চয়ই ওদের সাহায্য করতাম।’’
ঈশান পোড়েলের প্রসঙ্গ উঠতেই মুখ উজ্জ্বল বঙ্গ কোচের। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, ঈশানের এই উত্থান কি তাঁকে ভারতীয় দলে জায়গা করে দিতে পারে? অরুণ সাফ বলে দিলেন, ‘‘ও এখন ভারতীয় ক্রিকেটের তারকাদের উইকেট পাচ্ছে। হনুমা বিহারী এসেছিল। তাকে আউট করেছিল ঈশান। রাহুল এল। ওর উইকেটও ঈশানই পেল। আমার তো মনে হয় বিরাট কোহালিকেও আউট করার ক্ষমতা ওর রয়েছে। আশা করি, কয়েক দিনের মধ্যেই ভারতীয় দলের দরজা খুলে যাবে ওর জন্য।’’
আঙুলে চোট পেয়ে ফিল্ডিং করার সম্ভাবনাই শেষ হয়ে গিয়েছিল মনোজ তিওয়ারির। তবুও দলের স্বার্থে মাঠে নামেন। ডান-হাতের পরিবর্তে বাঁ-হাতে বল ধরেন ফিল্ডিংয়ের সময়। মনোজের এই প্রচেষ্টায় মুগ্ধ অরুণ। বললেন, ‘‘ও একজন চ্যাম্পিয়ন। এই মানসিকতা দেখেই আন্দাজ করতে পারবেন, জেতার জন্য দল কতটা মরিয়া।’’
অন্য দিকে কর্নাটক শিবিরেও ইতিবাচক মনোভাব। অফস্পিনার কৃষ্ণাপ্পা গৌতম বলছিলেন, ‘‘আমাদের ব্যাটসম্যানেরা হাল ছাড়বে না। প্রত্যেকে উইকেটের দাম দেবে। এই ম্যাচ জেতা সম্ভব। নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলে জিততে হলেও হাল ছাড়ব না।’’
চিন্তনের দাপটে চিন্তায় সৌরাষ্ট্র: রঞ্জি ট্রফি সেমিফাইনালে গুজরাতের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থেকেও চাপে সৌরাষ্ট্র। নেপথ্যে গুজরাত পেসার চিন্তন গাজার আগুনে বোলিং।
রাজকোটে ম্যাচের তৃতীয় দিন মাত্র ১৭ রানে পাঁচ উইকেট নেন তরুণ ডান-হাতি পেসার। প্রথম ইনিংসে ৩০৪ রান করে সৌরাষ্ট্র। জবাবে ২৫২ রানে অলআউট গুজরাত। ৫২ রানে এগিয়ে থাকা সৌরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫ রানের মধ্যে পাঁচ উইকেট পড়ে গিয়েছিল। সেই পরিস্থিতি থেকে দলকে ম্যাচে ফেরান চেতন সাকারিয়া ও অর্পিত বাসবদা। ৫১ রানের জুটি গড়েন দলের দুই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। চেতন অপরাজিত ৩২ রানে। ২৩ রানে ক্রিজে রয়েছেন অর্পিত। কিন্তু চিন্তনের ঝড় সামলে গুজরাতকে বড় রানের লক্ষ্যের সামনে সৌরাষ্ট্র ফেলতে পারে কি
না দেখার।
ব্যাট হাতেও গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন চিন্তন। রুজুল ভট্টের সঙ্গে দশম উইকেটে ৯৭ রান যোগ করেন এই পেসার। ১০৩ বলে ৬১ রান করে যান তিনি। চিন্তনের সৌজন্যেই আড়াইশো রানের গণ্ডি পেরোয় গুজরাত। বল হাতেও জ্বলে ওঠেন তরুণ পেসার।