মেসির বাঁ-পায়ের ম্যাজিক ফ্রি-কিক। ছবি: টুইটার।
আর্জেন্তিনা-৩ (মেসি, প্রাতো, দি’মারিয়া)
কলম্বিয়া-০
ভাগ্যিস অবসর ভেঙে মেসি ফিরেছিল।
সারা বিশ্ব কেন আবার মেসিকে দেশের জার্সিতে দেখতে চেয়েছিল, কেন এত প্রতিবাদ জানিয়েছিল গোটা আর্জেন্তিনা, কেন আমাদের মতো ফুটবল ভক্তরা প্রতিদিন অপেক্ষা করত মেসির অবসর ভেঙে ফেরার খবরের জন্য— সেটার প্রমাণ বুধবার ভোরেই পাওয়া গেল।
উফ, মেসি আর ওর বাঁ পা। প্রতিবার অবিশ্বাস্য কিছু না কিছু বেরিয়ে আসে সেই পা-টা থেকে। যা ফের ফুটবলকে সুন্দর করে তোলে।
বুধবার ভোরের এই মেসি তো কোনও শিল্পীর থেকে কম কিছু ছিল না। প্রতিটা মুভমেন্ট নিঁখুত। অনবদ্য ফ্রি-কিক। ছবির মতো পাস। কমপ্লিট ফুটবল। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে হারের ধাক্কার পর এ রকম জবাবটাই আশা করেছিলাম মেসির থেকে। আর পেয়েও গেলাম।
সব সময় শুনে আসি বার্সেলোনায় নাকি মেসিকে বেশি মানায়। আর্জেন্তিনা জার্সিতে সে রকম কিছুই করতে পারে না। হ্যাঁ, অবশ্যই বার্সার মেসি অনেক বেশি ট্রফি তুলেছে। প্রায় প্রতিদিনই গোল করে। তাতেও বলব, আর্জেন্তিনার মেসি অনেক বেশি কমপ্লিট। যার পাশে ‘লিডার’ শব্দটা অনায়াসে বসানো যায়। যে একার হাতে দলকে টেনে তোলে। সাপোর্টের জন্য অপেক্ষা করে না। বরং নিজে মুভ তৈরি করে। প্রতিদিনই পাল্টাতে থাকা ফরোয়ার্ড লাইনের সঙ্গেও মানিয়ে নেয়। গোলও যেমন করে আবার পাসও তেমন দেয়।
ব্রাজিল ম্যাচের মতোই কলম্বিয়ার বিরুদ্ধেও ফ্রি-রোলে খেলল মেসি। কোনও নির্দিষ্ট পজিশন ছিল না। পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল মেসির ওপর। কলম্বিয়া ডিফেন্স একটা সামান্য ভুলই করে ফেলল। ম্যান মার্কিংয়ে গেল না। মেসিকে জায়গা দিল। আর তাতেই সেই চেনা দাপট।
দি’মারিয়া যেমন নেইমার নয়। লুকাস প্রাতো-ও কোনও সুয়ারেজ নয়। মেসি জানত বার্সার সাপোর্ট এই দলে ও পাবে না। তাই নিজেই ক্রিয়েটিভ দায়িত্বটা তুলে নেয়। ক্রমাগত উপরনীচ করতে থাকে। বল ডিস্ট্রিবিউটও করে। বল হারালে দ্রুত গিয়ে রিকভার করে। ওয়ান ম্যান টিম বলতে যা বোঝায়।
ফ্রি-কিকটা নিয়ে আর কী বা বলব। এখনও চোখে লেগে আছে। প্লেসমেন্টেই এত সুন্দর গোলটা করল মেসি। টিভিতে দেখে মনে হচ্ছিল আগেভাগেই মেসি মাথায় ছকে নিয়েছিল কোথায় বলটা রাখবে। টপ কর্নার ঘেষে বলটা রাখায় গোলকিপারেরও কিছু করার ছিল না।
প্লে-মেকার মেসিকেও দশে দশ দিতেই হবে। মাপা সমস্ত পাস। কোনও ভুল নেই। প্রাতো হেড দিয়ে গোল করল ঠিকই। কিন্তু মেসির মাপা ক্রস ছাড়া সেটা সম্ভব হত না। খুব সহজেই বলটাকে লব করে দিল। কলম্বিয়া ডিফেন্ডারদের মধ্যে দিয়ে ঠিক প্রাতোর মাথায় বসিয়ে দেওয়া যাকে বলে। দি’মারিয়ার গোলটাও তো মেসির পাসে। অনেকটা দৌড়ে এসে বিপক্ষ প্লেয়ারের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে সাইড দিয়ে উঠল। তার পর মাথা ঠান্ডা রেখে পাস। দি’মারিয়ার ফিনিশটাও ভাল ছিল।
কলম্বিয়ার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল মেসিকে বলের উপর সময় আর জায়গা দেওয়া। ব্রাজিল যেখানে শুরুর থেকেই মেসিকে কড়া মার্কিংয়ে রেখেছিল, কলম্বিয়া উল্টোটা করল। মেসির সাপোর্টগুলো বন্ধ করতে গিয়ে ওর উপরে কোনও নজর দিল না। আর তাতেই বলের উপর সময় পাচ্ছিল মেসি।
এই জয়ের পিছনে মেসির বাঁ পা ছাড়াও কিন্তু প্রশংসা করতে হবে কোচের মগজেরও। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ছন্নছাড়া ফুটবল খেললেও কলম্বিয়া ম্যাচেও একটা নির্দিষ্ট ছকে গোটা দলটা নেমেছিল। ম্যাচের অধিকাংশ সময় ডিস্টার্বিং ফুটবল খেলল। ‘ডিস্টার্বিং’ কেন বলছি কারণ মেসি আর প্রাতোর গোলের পর আর্জেন্তিনা ইচ্ছাকৃত ভাবে খেলার গতিটা স্লো করে দেয়। কলম্বিয়া একটু ছন্দ পেলেই ইচ্ছা করে ফাউল করে। যাতে সময় নষ্ট হয়। আবার ছোট ছোট পাসের থেকেও বেশি লং বলে খেলে। যাতে বিপক্ষ বক্সে বলটা বেশি থাকে। ফলে মুভ তৈরি করতে গেলেও সময় লাগবে কলম্বিয়ার।
বাকিদের কাছে এই স্ট্র্যাটেজি খারাপ মনে হতে পারে। কিন্তু দিনের শেষে সব সময় আমাকে আক্রমণের পর আক্রমণ করেই জিততে হবে এটার কোনও মানে নেই।
ফরোয়ার্ড লাইন দারুণ খেললেও ডিফেন্সকে এখনও উন্নতি করতে হবে আর্জেন্তিনার। মনে রাখতে হবে, প্রতিদিন তো আর মেসির বাঁ পা বাঁচাবে না।