Anju Bobby George

‘ক্ষমতা রয়েছে কিন্তু ভিতরের আগুনটা দেখতে পাচ্ছি না ওদের মধ্যে’

ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সের কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব অঞ্জু ববি জর্জ রবিবার দুপুরে বেঙ্গালুরু থেকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজার ডিজিটালকে।

Advertisement

সৌরাংশু দেবনাথ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২০ ১৭:৪৬
Share:

সাফল্যের হাসিতে উজ্জ্বল অঞ্জু ববি জর্জ। —ফাইল চিত্র।

ইতিহাস! নজির! দৃষ্টান্ত!

Advertisement

শব্দগুলো জড়িয়ে আছে, জড়িয়ে থাকবেও অঞ্জু ববি জর্জের সঙ্গে। অ্যাথলেটিক্সের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে তিনিই পদকজয়ী প্রথম ভারতীয়। ২০০৩ সালে প্যারিসে লংজাম্পে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন তিনি। ২০০৫ সালে মন্টে কার্লোয় আইএএফ ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিক্সের ফাইনালে জিতেছিলেন সোনা। অবসরের পর এখন নিজের অ্যাকাডেমি খুলেছেন তিনি। ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সের কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব রবিবার দুপুরে বেঙ্গালুরু থেকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজার ডিজিটালকে। টোকিয়ো অলিম্পিক্সে ভারতের সম্ভাবনা কতটা, এই প্রজন্মের সঙ্গে নিজের সময়ের তুলনা, সব প্রসঙ্গেই থাকলেন অকপট।

টোকিয়ো অলিম্পিক্স এক বছর পিছিয়ে যাওয়া ভারতীয় অ্যাথলিটদের চ্যালেঞ্জ কী বাড়িয়ে তুলল?

Advertisement

অঞ্জু ববি জর্জ: শুধু তো আমাদের অ্যাথলিটদেরই নয়, এটা বিশ্বজুড়েই অ্যাথলিটদের কাছে চ্যালেঞ্জ। কারণ, এটা অলিম্পিক্স। চার বছর পর হয়, সাধনা চলে চার বছর ধরে। মুশকিল হল, এখন আমাদের এখানে ট্রেনিংয়ের কথা ভাবা যাচ্ছে না। ঘরের বাইরেই বেরনো ঝুঁকির। প্রতিদিন এত কোভিড সংক্রমণের ঘটনা ঘটছে দেশজুড়ে। তবে আবার বলছি, বিশ্বের সব অ্যাথলিট করোনার কারণে সমস্যায়। আমাদের ক্ষেত্রে বলতে পারি, অধিকাংশ অ্যাথলিটই জুনিয়র। কমবয়সী। নীরজ চোপড়া, রিলে টিম যেমন। এদের ক্ষেত্রে খুব বেশি চাপের হওয়া উচিত নয়। বয়স বেশি হলে কঠিন হত। এরা বরং আরও এক বছর সময় পাচ্ছে তৈরি হওয়ার জন্য। অবশ্য, এঁদের একেবারে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। অনেক মাস হয়ে গেল, ট্র্যাকের সঙ্গে সম্পর্ক নেই একেবারে। এটা একটা সমস্যা। তবে আবার সেই কথায় ফিরতে হচ্ছে। এটা বিশ্বজুড়েই সবার কাছে চ্যালেঞ্জের। কে কত দ্রুত ছন্দে ফিরতে পারবে, সেটাই হয়তো তফাত গড়ে দেবে।

টোকিয়ো অলিম্পিক্সে ভারতের পারফরম্যান্স নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?

অঞ্জু ববি জর্জ: অলিম্পিক্স হল বিশ্বের সবচেয়ে বড় মঞ্চ। আর আমাদের তো কোনও উসেইন বোল্টের মতো সিওর শট নেই যে পদক নিশ্চিত! বোল্ট থাকলে না হয় নিশ্চিন্ত হওয়া যেত। আমরা কারও উপর বাজি ধরতে পারি না যে পদক আনবেই। আমাদের প্রতিযোগীদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। এ বার সেরাটা দেওয়ার পর দিনটা নিজের হলে পদক আসবে। এখানে একটা কথা মাথায় গেঁথে নেওয়া দরকার যে, সেরাটাই মেলে ধরতে হবে। না হলে টোকিয়ো অলিম্পিক্সে পদকের স্বপ্ন অধরাই থাকবে।

ফাইটার অঞ্জু এ ভাবেই টপকে গিয়েছেন সব প্রতিকূলতা। —ফাইল চিত্র।

সেরাটা মেলে ধরার রসায়ন আপনি ভালই জানেন। বিশ্ব মঞ্চে পদকের জন্য নামার চাপ মারাত্মক। দেশবাসীর প্রত্যাশাও থাকে আকাশছোঁয়া। একজন অ্যাথলিটের প্রস্তুতির মেনুতে কী কী থাকতে হবে সাফল্যের জন্য?

অঞ্জু ববি জর্জ: দেখুন, শুধু ট্রেনিংয়ে কিছু হয় না। ট্রেনিংয়ে বড় জোর ৫০ শতাংশ হয়। দরকার পড়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নামার অভিজ্ঞতা। বিশ্বের সেরাদের বিরুদ্ধে নানা আসরে নামলে প্রয়োজনের সময়ে ঘাবড়ে যাওয়ার ব্যাপারটা থাকে না। চ্যাম্পিয়নশিপে নামার আগে একটা লম্বা সময় ধরে টপ-লেভেল অ্যাথলিটদের সঙ্গে কম্পিটিশনের স্বাদ নেওয়া মারাত্মক দরকার। এতে নামলে একটা আভাসও পাওয়া যায় যে আমরা কত দূর পৌঁছতে পারি। নিজের কাছে একটা ধারণা আসে যে আমার ক্ষমতা এতটা। একটা অভিজ্ঞতাও আসে এর থেকে। ওই আবহে নিজেকে স্বচ্ছন্দ মনে হয়। পরিবেশ চেপে বসে না মনের উপর। তখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিজেকে মেলে ধরতে আত্মবিশ্বাসী লাগে। মুশকিল হল, এই অভিজ্ঞতা আমাদের অ্যাথলিটদের কম।

এখন তো প্রতিযোগিতায় নামার ব্যাপারও নেই। মানে, টোকিয়োর ক্ষেত্রে ভারতীয় অ্যাথলিটদের কাজটা আরও বেশি কঠিন হয়ে উঠছে।

অঞ্জু ববি জর্জ: একটা কথা এখানে মাথায় রাখতে হবে যে সমস্ত প্রতিযোগীরা বড় আসরে নিজেদের মেলে ধরার লক্ষ্য নিয়েই খাটাখাটনি করে। উদ্দেশ্য থাকে সর্বোচ্চ আসরে উজাড় করে দেওয়া। বছরের পর বছর ধরে ট্রেনিং চলে সেই দিকে তাকিয়েই। তাই, আমাদের অ্যাথলিটদের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা না পাওয়া ইস্যু হওয়া উচিত নয়। বাকিরাও তা পাচ্ছে না। অবশ্য, একটা কথা মানতেই হবে বিশ্বের সেরাদের বিরুদ্ধে টক্করে নামার সময় অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। স্রেফ ট্রেনিং করেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে নামলে সাফল্য আসা মুশকিল। অভিজ্ঞতা অত্যন্ত জরুরি।

আপনার সময়ের পরিকাঠামো আর এখনকার পরিকাঠামো। সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে কতটা এগিয়েছে ভারতীয় অ্যাথলেটিক্স?

অঞ্জু ববি জর্জ: দেখুন, এই এগিয়ে যাওয়া স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। নরমাল গ্রোথ। ১৯৫০ সালে বাড়িতে বাড়িতে গাড়ি থাকা সম্ভব ছিল না। কিন্তু এখন অনেক বাড়িতেই গাড়ি রয়েছে। ভারতের ক্রীড়া পরিকাঠামোয় উন্নতি হয়েছে। ক্রীড়ামন্ত্রক সবসময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ক্রীড়াবিদদের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রয়োজনের সময়। তৃণমূলস্তরেও এখন অনেক কাজ হচ্ছে। প্রত্যেক রাজ্যে দুটো-তিনটের বেশি করে সিন্থেটিক ট্র্যাক, জিম রয়েছে। আমাদের সময়ে এটা স্বপ্ন ছিল। কিন্তু এখন এটা বাস্তব।

আরও পড়ুন: নেই ব্রড-রুট, নেই বিশেষজ্ঞ ওপেনার! বিশ্ব একাদশ গড়ে চমকে দিলেন চেতেশ্বর পূজারা​

আপনাকে তো মাইক পাওয়েলের কাছে কোচিংয়ের জন্য বিদেশে যেতে হয়েছিল।

অঞ্জু ববি জর্জ: আমাকে যেতে হয়েছিল, ট্রেনিংয়ে আরও সূক্ষ্মতা আনতে। তখন তুচ্ছাতিতুচ্ছ ইনফরমেশনও পাওয়া যেত না। ভারতে বসে ভাবতেই পারতাম না যে এটা এ ভাবে ঘটে বা ওটা ও ভাবে ঘটে। এ সব কারণেই মাইক পাওয়েলের কাছে যেতে হয়েছিল। কারণ, উনি বিশ্বরেকর্ডের মালিক ছিলেন। এমন মোটেই নয় যে আমার স্বামী ববির কোচ হিসেবে কোনও ঘাটতি ছিল। আমাদের দরকার ছিল অভিজ্ঞতা, অনুভব করতে হত বড় পর্যায়ের নামার খুঁটিনাটি সব দিক। সেরারা কী ভাবে তৈরি হয়, সেটা দেখতে হত। ভারতে বসে তা সম্ভব ছিল না। কিন্তু, এখন ইউটিউবেই অনেক কিছু দেখা যায়। ইন্টারনেটে সব কিছু হাতের নাগালে চলে এসেছে। তখন তা ভাবাই যেত না। সামান্য জিনিসের জন্যও হাপিত্যেশ হয়ে থাকতে হত। ইন্টারনেটের এই দাপট ছিল না সেই সময়ে।

মাইক পাওয়েলই তো ২০১৬ সালে আপনার অ্যাকাডেমির উদ্বোধন করেছিলেন?

অঞ্জু ববি জর্জ: হ্যাঁ।

প্রতিভার সন্ধান পাচ্ছেন? আপনার পর আর কেউ তো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পদক আনতে পারলেন না। লংজাম্পে আপনার ৬.৮৩ মিটার তো এখনও ভারতীয় রেকর্ড।

অঞ্জু ববি জর্জ: (হাসি) সত্যি কথাটা হল, ট্যালেন্ট সর্বত্র রয়েছে। কিন্তু তা আমরা কী ভাবে কাজে লাগাচ্ছি, ব্যবহার করছি, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি যে ভাবে করেছিলাম, সেটা ছিল আলাদা মেথডে। আমাদের অ্যাথলিটরা কিন্তু এখনও তা করার মতো অবস্থায় নেই বা সেই ক্ষমতা নেই। আমার সৌভাগ্য যে ববির মতো দারুণ কোচ পেয়েছিলামা।

কোচ-অ্যাথলিট কম্বিনেশন এক্ষেত্রে হিট রেসিপি হয়ে উঠেছিল।

অঞ্জু ববি জর্জ: (আবার হাসি) আমার কোচের প্রচুর জ্ঞান ছিল এই ব্যাপারে। সঙ্গে ছিল সাহসও। সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় কী দরকার, তা ম্যানেজ করত দারুণ ভাবে। আমি সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। কোনও কিছু নিয়ে ভাবতে হত না। আর ফেডারেশনেরও পুরো আস্থা ছিল ববির উপরে। আমরা নিজেদের মতো করে চলতাম। কারও অপেক্ষায় থাকতে হত না। আমেরিকায় যখন গিয়েছিলাম, তখন সেখান থেকেই যে কোনও ভিসা পেয়ে যেতাম। নিয়ম অনুসারে আমাদের দেশে ফিরে ভিসার ব্যবস্থা করতে হত। কিন্তু ববি সেখান থেকেই তা করিয়ে ফেলত। ও সাধারণত ক্রীড়ামন্ত্রকে যোগাযোগ করত, কখনও সরাসরি মন্ত্রীকেই ফোন করত। তিনি সাহায্য করতেন। এই বিষয়গুলো ববি দেখত বলে আমাকে পারফরম্যান্সের বাইরে কোনও কিছু নিয়ে ভাবতে হয়নি।

হেরে যাওয়ার ভয় তাড়ালেই আসবে সাফল্য, টিপস দিলেন অঞ্জু। —ফাইল চিত্র।

অর্থাৎ, সাফল্যের জন্য ট্যালেন্টের পাশাপাশি কোচের গাইডেন্স অত্যন্ত দরকারি। ভাল কোচ পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। এক্ষেত্রে কি ভারতীয় কোচদের উপর আস্থা রাখা যায়, নাকি বিদেশি কোচের দরকার রয়েছে?

অঞ্জু ববি জর্জ: বিদেশি কোচদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই সবসময় তাদের উপর ভরসা করা যায় না। আর তা করলে আমাদের পরিকাঠামো এগোবে না। আমাদের নিজস্ব কোচেদের উপর আস্থা রাখতেই হবে।

হালফিল ভারতীয় অ্যাথলিটরা সাফল্য পাচ্ছেন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়। অলিম্পিকেও কি সেই রেখা ঊর্ধ্বমুখী থাকবে?

অঞ্জু ববি জর্জ: আমাদের রেখা অবশ্যই ঊর্ধ্বমুখী। তবে তা অত্যন্ত ধীরগতির। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে আমি যখন পদক জিতলাম তার পর আশা করেছিলাম অনেক উন্নতি দেখা যাবে। বাট নাথিং হ্যাপেন্ড। তবে তরুণরা উঠে আসছে। জুনিয়র লেভেল অনেক শক্তিশালী। ওরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়শিপে পদক আনছে। কিন্তু জুনিয়র পর্যায় থেকে সিনিয়র পর্যায়ে বিশাল ফারাক রয়েছে। পদক পাওয়া অনেক কঠিন। এই পর্যায়ে অনেক পরিকল্পনার দরকার হয়। সিস্টেমও বদলাতে হয়।

নীরজ চোপড়া সম্প্রতি বলেছেন যে অলিম্পিকে সাফল্যের জন্য তিনি সোশ্যাল মিডিয়া ত্যাগ করবেন। স্টেডিয়ামে পরিবারের কারওর উপস্থিতি তিনি চান না। মনঃসংযোগের জন্য আপনি কী করতেন?

অঞ্জু ববি জর্জ: একবার স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়লে বাইরের কোনও সাপোর্ট সিস্টেম কাজ করে না। তখন পুরোটা নিজেকেই সামলাতে হয়। এ ক্ষেত্রে যেটাতে নিজের সুবিধা মনে হবে সেটাই করতে হবে। এটায় একজন অ্যাথলিটের স্বাধীনতা রয়েছে। সে নিজের ফোকাসের জন্য নিজেই ব্যবস্থা নেবে। মাথায় রাখতে হবে এই পর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন মনঃসংযোগের প্রয়োজন। ফোকাস সম্পূর্ণ একদিকেই রাখতে হয়। কোনও ভাবেই যেন তা বিচ্ছিন্ন না হয়। আমাদের নিজেদের ম্যাক্সিমামটা দিতে হয় ঠিক সময়, বের করে আনতে হয় সর্বোত্তম পারফরম্যান্স।

আরও পড়ুন: মোহনবাগানের প্রাক্তন অধিনায়ক মণিতোম্বি প্রয়াত, ময়দানে শোকের ছায়া​

আপনার রুটিন কী থাকত?

অঞ্জু ববি জর্জ: আগেই বলেছি, একবার স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়লে কোচ কিছু করতে পারে না, বন্ধুরা কিছু করতে পারে না, পরিবার কিছু করতে পারে না। তখন পুরোটাই নিজের উপর এসে যায়। বিশ্বাস করতাম যে দেশের জন্য নিজের বেস্ট তুলে ধরা কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আর আমি গুড ফাইটার। লড়াইয়ের ময়দানে ঢুকে পড়লে আমি হাল ছাড়তাম না। নিজের সেরাটা মেলে ধরতে প্রাণপাত চেষ্টা করতাম। ফল তো হাতে থাকে না। লড়াই থাকে, প্রচেষ্টা থাকে। সেটাই করতাম। মেডেল না মিললে ভাবতাম কপালে নেই বলেই আসেনি। কিন্তু লড়াইয়ে ঢিলে দিতাম না। ফাঁকি থাকত না কোথাও।

সেটাই কি আপনার উপদেশ হবে পরের প্রজন্মের জন্য যে হাল ছেড়ো না?

অঞ্জু ববি জর্জ: একটা ঘটনা বলি। প্যারিসের পরে হেলসিঙ্কিতে দ্বিতীয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিন মেডেল হারিয়েছিলাম কয়েক সেন্টিমিটারের জন্য। চতুর্থ হয়েছিলাম। প্রথম গেমের পর খুব বৃষ্টি হয়েছিল। তার মধ্যেই নিজের সেরাটা দিয়েছিলাম। সর্বাধিক প্রচেষ্টা করেছিলাম। ওই প্রতিযোগিতার আগে ভারতে আমি লাফিয়েছিলাম ৬.০৯ মিটার। সেখান থেকে এক মাসের মধ্যে বিশ্বের চতুর্থ হয়েছিলাম। এটাই আমার সাহস! এটা ভাবিনি যে ভারতে কেমন করেছি চ্যাম্পিয়নশিপের আগে। বিশ্বাস ছিল ঠিক সময়ে আমি মেলে ধরতে পারব নিজেকে।

মানে সাফল্যের জন্য দরকার নিজের উপর অনন্ত বিশ্বাস এবং ভিতরের শক্তি।

অঞ্জু ববি জর্জ: আর একটা জিনিসও দরকার। নিজের ভিতরে জ্বলতে থাকা আগুন। নিজের দক্ষতায় আস্থা তো রাখতেই হবে।

এই বৈশিষ্ট্য কি এখনকার অ্যাথলিটদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছেন?

অঞ্জু ববি জর্জ: (হাসি) আমাদের অধিকাংশ অ্যাথলিটদের মধ্যে ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু তাঁরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সেই ক্ষমতা মেলে ধরতে পারছে না দুর্ভাগ্যবশত।

সেটা কি ভিতরের আগুনের অভাবে?

অঞ্জু ববি জর্জ: হ্যাঁ, তা বলতে পারেন। ভিতরে আগুন না থাকা একটা কারণ। আর একটা কারণ হল হেরে যাওয়ার ভয়। যদি হেরে যাই, এই ভয় তাড়া করছে। ফিয়ার অফ লুজিং। আর একটা ভয় আছে। যদি সেরাটা দিতে না পারি, সেই ভয়। বিশ্বের সেরাদের বিরুদ্ধে লড়ার ভয়ও থাকছে।

মানে, সেই আগের কথা। যথেষ্ট পরিমাণ প্রতিযোগিতায় নামতে না পারা আনছে হীনমন্যতা।

অঞ্জু ববি জর্জ: ইয়েস। ভারতে বসে বলতেই পারি যে অলিম্পিক সোনা জিতব বা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পদক আনব। কিন্তু, একবার স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়লে পাশে কেউ থাকে না। তখন নিজেকেই যা করার করতে হয়। তখন নিজের মধ্যেই জন্ম নেয় প্রশ্ন, এ বার কী করব রে বাবা (হাসি)!

আপনার মেয়ের গলা ভেসে আসছে মোবাইলে। আর একটা চ্যাম্পিয়ন অ্যাথলিট কি পেতে পারে দেশ?

অঞ্জু ববি জর্জ: ইয়েস, ডেফিনিটলি। ইচ্ছে তেমনই আছে। তবে অ্যান্দ্রিয়ার বয়স মাত্র ছয়। দেখা যাক কী হতে চায় ও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement