কুম্বলের বিবৃতিতে বিতর্ক তুঙ্গে

চাপের মুখে চরম সিদ্ধান্ত কুম্বলের

কুম্বলে যে এই রকম একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তার ইঙ্গিত আগে থেকেই ছিল। ভারতীয় টিমের ড্রেসিংরুমে কুম্বলে যে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছিলেন, তা আগেই বেশ কয়েক বার লেখা হয়েছিল আনন্দবাজারে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৭ ০৪:৩৫
Share:

মঙ্গলবার লন্ডন থেকে বিরাট কোহালির ভারত যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজগামী বিমানে উঠে বসল, এক জন অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি— অনিল কুম্বলে।

Advertisement

তখনই বোঝা গিয়েছিল, চরম কোনও সিদ্ধান্ত হয়তো নিয়ে ফেলবেন ভারতীয় কোচ। যদিও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে তখন বলা হচ্ছিল, আইসিসি মিটিংয়ে থাকতে হবে বলে টিমের সঙ্গে যাচ্ছেন না কুম্বলে। বোর্ডের এই নাটক অবশ্য বেশি সময় চলেনি। ভারতীয় সময় রাত আটটা নাগাদ কুম্বলে জানিয়ে দেন, তিনি কোচের পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন। এরও ঘণ্টা দু’য়েক পরে ভারতীয় বোর্ড সরকারি ভাবে স্বীকার করে নেয়, কুম্বলে সরে দাঁড়িয়েছেন।

কুম্বলে যে এই রকম একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তার ইঙ্গিত আগে থেকেই ছিল। ভারতীয় টিমের ড্রেসিংরুমে কুম্বলে যে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছিলেন, তা আগেই বেশ কয়েক বার লেখা হয়েছিল আনন্দবাজারে। এও লেখা হয়েছিল, পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে যে কুম্বলেকে হয়তো সম্মানরক্ষার খাতিরে নিজে থেকেই সরে যেতে হবে। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, সেটাই হল। তবে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটে নিজের বিবৃতি তুলে ধরে বিতর্ক আরও বাড়িয়ে দিলেন কুম্বলে।

Advertisement

আরও পড়ুন: আর কোনও রাস্তা ছিল না: কুম্বলে

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর আগে থেকেই ভারতীয় ক্রিকেটে কোচ নিয়ে অশান্তি শুরু হয়ে যায়। পরিস্থিতি যে ক্রমশ খারাপ হচ্ছে, তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যখন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড নতুন কোচ চেয়ে বিজ্ঞাপন দেয়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি চলাকালীন ভারতীয় কোচ এবং অধিনায়কের মধ্যে সম্পর্কটা ক্রমশ খারাপ হয়েছে। জল এতদূরই গড়ায় যে, কুম্বলের সঙ্গে প্র্যাকটিসে কথা বলতেও দেখা যায়নি বিরাট কোহালিকে।

কোচ নিয়ে তাঁদের অবস্থান কী, সেটা কোহালি আগেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। বোর্ডকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি আর কুম্বলের সঙ্গে সংসার করতে চান না। টিমের মনোভাবও সে রকমই ছিল। পরিস্থিতি যে ক্রমে জটিল হয়ে পড়ছে, সেটা বুঝে যান কুম্বলেও। এই অবস্থায় তাঁর ইস্তফা দেওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তা ছিল না। ভারতীয় টিমের অধিকাংশ সদস্যই মনে করছেন, রবি শাস্ত্রীর সময় ড্রেসিংরুমের যে খোলামেলা পরিবেশ ছিল, তা কুম্বলের আমলে হারিয়ে যায়।

কুম্বলে ইস্তফা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে প্রশ্নটা এখন উঠে আসছে, তা হল, পরবর্তী কোচ কে হতে পারেন। ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বললে তাঁদের পছন্দের নামটা পরিষ্কার হয়ে যাবে— রবি শাস্ত্রী। ক্রিকেটাররা মনে করেন, শাস্ত্রীর আমলে ড্রেসিংরুমের পরিবেশ অনেক খোলামেলা ছিল। শুধু তাই নয়, শাস্ত্রীর টেকনিক্যাল প্রজ্ঞাও ভারতীয় ক্রিকেটারদের অনেক উপকারে আসত। যেটা হালফিলে হচ্ছিল না। কুম্বলে কোচ থাকায় ভারতীয় দলে কোনও বোলিং কোচ রাখা হয়নি। টিমের পেস বোলারদের অভিযোগ ছিল, তাঁরা সমস্যায় পড়লে কারও কাছ থেকে সাহায্য পাচ্ছেন না।

ক্রিকেটারদের কথা শুনলে কোচের দায়িত্বে আসা উচিত শাস্ত্রীর। কিন্তু শাস্ত্রীকে নিয়ে সমস্যা হল, তিনি নিজে কোচের পদের জন্য আবেদন করেননি। শাস্ত্রীর বক্তব্য পরিষ্কার, তাঁকে কোচের দায়িত্ব দিতে হলে ক্রিকেট বোর্ডকে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে হবে।

আরও একটা নাম কোচের দৌড়ে খুব ভাল ভাবে আছে। সেটা হল, বীরেন্দ্র সহবাগ। ভারতীয় বোর্ডের কয়েক জন কর্তার কথায় সহবাগ কোচের পদে আবেদন করেছেন। যে ক’জন প্রার্থী এই পদের জন্য আবেদন করেছেন, তাঁদের মধ্যে আপাতত সহবাগই সবচেয়ে এগিয়ে।

মঙ্গলবার কুম্বলের ইস্তফা অবশ্য ভারতীয় ক্রিকেট মহলে বেশ আলোড়ন ফেলেছে। সুনীল গাওস্কর বলেছেন, ‘‘বিরাট কোহালি এবং অনিল কুম্বলের মধ্যে কী সমস্যা ছিল, তা আমি জানি না। আমি শুধু বলব, এটা ভারতীয় ক্রিকেটের পক্ষে একটা দুঃখের দিন। আমি ভেবেছিলাম, কুম্বলে সরে যাবে না।’’ গাওস্কর মনে করেন, এই অবস্থায় শ্রীলঙ্কা সফরের আগে অবশ্যই ভারতের কোচ বেছে ফেলা উচিত।

যখন দায়িত্ব নিলেন

২৩ জুন, ২০১৬। বোর্ডের ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটি এক বছরের জন্য ভারতীয় দলের কোচ হিেসবে বেছে নিল অনিল কুম্বলেকে।

কুম্বলের আমলে

ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট সিরিজ জয় (২-০)। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড (৩-০), ইংল্যান্ড (৪-০), বাংলাদেশ (১-০) ও অস্ট্রেলিয়ার (২-১) বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জয়। ওয়ান ডে-তে জয় ৮, হার ৫।

সম্পর্কে চিড়

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর আগেই অনিল কুম্বলে এবং বিরাট কোহালির সম্পর্ক নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায়। দু’জনের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে ইংল্যান্ডে। ভারতীয় টিমের নেট প্র্যাকটিসের সময় যা বার বার ধরা পড়েছে।

নতুন ছয় নাম

১ জুন, ২০১৭। বোর্ডের বিজ্ঞাপনের জবাবে আবেদন করলেন প্রার্থীরা। সেই তালিকায় ছিলেন কুম্বলে নিজে, বীরেন্দ্র সহবাগ, টম মুডিরা। সহবাগকে নাকি আবেদন করতে বলা হয়েছিল।

এ বার কে

ভারতীয় ক্রিকেটারদের পছন্দের নাম হল রবি শাস্ত্রী। ক্রিকেটারদের কথা শোনা হলে, শাস্ত্রীকেই কোচ হিসেবে দেখা যাবে। কিন্তু শাস্ত্রী সরকারি ভাবে আবেদন করেননি। দৌড়ে সহবাগও।

গত কয়েক সপ্তাহে ভারতীয় কোচকে নিয়ে নাটকের পরে এখন প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, নতুন কোচ নির্বাচনের সময় কেন ক্রিকেটারদের কথা শোনা হবে না। ভারতীয় দল ওয়েস্ট ইন্ডিজে উড়ে যাওয়ার পরেও বিভ্রান্তি থেকে গিয়েছিল, কুম্বলের ভাগ্যে কি আছে? সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলেও সেটা এল অনেক নাটকের পরে। যার জেরে চিফ কোচ ছাড়াই ক্যারিবিয়ানে পাঁচটা ওয়ান ডে এবং একটা টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে গেলেন কোহালিরা।

কুম্বলে ইস্তফা দেওয়ার পরে এখন প্রশ্ন উঠছে, নতুন কোচ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কি এ বার ক্রিকেটারদের বক্তব্য শোনা হবে? কুম্বলেকে কোচ করার সময় ক্রিকেটারদের বক্তব্য শোনা নিয়ে দু’রকম মত আছে। কেউ বলছেন, ক্রিকেটারদের কথা একেবারেই শোনা হয়নি। কেউ আবার বলছেন, বক্তব্য শোনা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু মানা হয়নি।

সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নাটক শেষ হয়ে গেলেও ভারতীয় ক্রিকেটের নাটক শেষ হওয়ার কোনও চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement