অনুশীলনে অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে জানা সবার আগে দরকার, শিখিয়েছিলেন ঠাকুরদা। সেই শিক্ষা থেকেই ছোটবেলায় হাত-পা ছুড়ে অনুশীলন শুরু। কাটোয়ার বিজয়নগর গ্রামের বছর দশের অনিকেত চট্টোপাধ্যায় এরই মধ্যে জিতে ফেলেছে দেশ-বিদেশের নানা প্রতিযোগিতা। এখন তার পাখির চোখ বিশ্বকাপ ও অলিম্পিক।
ঠাকুরদা বলাইগোপাল চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে কাটোয়ার শোতোকান ক্যারাটে অ্যাকাডেমিতে হাতেখড়ি অনিকেতের। পরে বলাইগোপালবাবুই নাতিকে কলকাতায় কেষ্টপুরে একটি ঘরভাড়া নিয়ে ওডোকাই ক্যারাটে অ্যাসোসিয়েশনে ভর্তি করেন। সল্টলেকে স্কুলে পড়ার পাশাপাশি চলতে থাকে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ। সেই সময়ে জেলার প্রতিযোগিতাগুলিতে সে প্রথম স্থান পায়। আচমকা দাদু মারা যাওয়ার পরেই নেমে আসে বিপর্যয়। বাড়ি ভাড়া দিতে না পারায় কেষ্টপুর ছাড়তে হয়।
তবে স্বপ্ন দেখা ছাড়েনি অনিকেত। কিছু দিন পরে আত্মীয়দের সহায়তায় একটি এক কামরার ঘর ভাড়া নিয়ে ফের প্রশিক্ষক রাজু শিকদারের তত্ত্বাবধানে অনুশীলন শুরু করে। সাত বছর বয়সে প্রথম সুযোগ আসে জাতীয় স্তরে খেলার। বিশাখাপত্তনমে মেলে স্বর্ণপদক। এর পরে গুজরাত ও মহারাষ্ট্রে দু’টি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সোনা ও রুপো জেতে সে। ২০১৬ সালে শ্রীলঙ্কায় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পঁচিশ কেজি বিভাগে ফের সোনা জেতে। সম্প্রতি গ্যাংটকে ১৯তম সর্বভারতীয় ওডোকাই চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা ও রুপো জিতেছে সে। চলতি বছরে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক মুক্ত ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপ ও ১৪তম উইকি ইন্টারন্যাশানাল চ্যাম্পিয়নশিপেও সফল হয়েছে ‘ব্ল্যাক বেল্ট’ অনিকেত।
অনুশীলন করতে করতে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র অনিকেত বলে, ‘‘সেনসেই (প্রশিক্ষক) যা শিখিয়েছেন সেটুকু ঠিকঠাক করে আসতে পারলে মেডেল পাবই।’’ অনিকেতের বাবা জানান, ছেলের লক্ষ্য এখন ২০১৮ সালে জাপানে বিশ্বকাপ ও ২০২০ সালে টোকিও অলিম্পিক। অনিকেতের বাবা, কাটোয়ার সার্কাস ময়দানে কম্পিউটারের ব্যবসায়ী শুভময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘‘বাজারে ধার রয়েছে প্রচুর। জানি না কী ভাবে ছেলেকে অলিম্পিক পর্যন্ত নিয়ে যাব!’’ প্রশিক্ষক রাজুবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘ওকে অলিম্পিকে নিয়ে যেতেই হবে। যে ভাবেই হোক টাকার বন্দোবস্ত করতে হবে।’’