—ফাইল চিত্র
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় হঠাৎ হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় বাংলা তো বটেই, সারা দেশ স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বিগ্ন। তবে এই উদ্বেগে এ বার নজর কেড়েছে বিজেপি শিবিরের বিশেষ তৎপরতা। দলের উঁচু তলা থেকে নির্দেশ দিয়ে একাধিক নেতাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাঁদের সেখানে দীর্ঘ ক্ষণ বসে থাকতে দেখা যায়। এ ছাড়াও বিজেপির শীর্ষ নেতাদের ফোন আসতে থাকে হাসপাতালে। পাশাপাশি অবশ্য সক্রিয়তার অভাব ছিল না তৃণমূলের দিক থেকেও। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সব মিলিয়ে এটা এখন নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ।
শনিবার দুপুরে সৌরভ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরেই তাঁর ‘মৃদু’ হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে টুইট করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্ধ্যায় তিনি হাসপাতালে গিয়ে সৌরভকে দেখেও আসেন। এ ছাড়া হাসপাতালে গিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, লক্ষ্মীরতন শুক্ল, রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত প্রমুখ।
অন্য দিকে, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ পেয়ে হাসপাতালে পৌঁছে যান রাজ্য বিজেপির সহ সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাকেশ সিংহ-সহ কয়েক জন। তাঁরা সেখানে দীর্ঘ ক্ষণ ছিলেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং মুকুল রায় ফোনে কথা বলেন সৌরভের দাদা স্নেহাশিসের সঙ্গে। সৌরভের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে টুইটও করেন দিলীপবাবু এবং শুভেন্দু অধিকারী। বার বার খোঁজ নিতে থাকেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্বয়ং।
আরও পড়ুন: সৌরভের করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ, ফের ‘স্টেন্ট’ বসানো নিয়ে সিদ্ধান্ত রবিবার
আরও পড়ুন: মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল আইএসএলের ফিরতি ডার্বি ম্যাচ ১৯ ফেব্রুয়ারি
কিছু দিন ধরেই সৌরভের নাম নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে জোর চর্চা চলছে। তিনি আগামী নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপির ‘মুখ’ হতে পারেন, এমন জল্পনা ধাপে ধাপে দানা বাঁধলেও প্রকাশ্যে কোনও পক্ষ থেকে একটি কথাও বলা হয়নি। তবে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সভাপতি সৌরভের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহের ‘ঘনিষ্ঠ’ সম্পর্কের কথা ইদানীং প্রকাশ্যেই শোনা যায়। সব মিলিয়ে তাই সৌরভের অসুস্থতার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি নেতাদের বিশেষ তৎপর হয়ে ওঠার যোগসূত্র খুঁজে পেতে চাইছে রাজনৈতিক মহল।
এ দিন মালদহে রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সৌরভের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত। দরকার হলে সৌরভকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দিল্লি নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলেছেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, সৌরভের জন্য যথাসম্ভব ভাল চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থা করতে হবে। দিল্লির কোনও চিকিৎসকের পরামর্শের প্রয়োজন হলে তারও ব্যবস্থা করা হবে।’’ রাজ্য বিজেপির নেতাদের যে হাসপাতালে পৌঁছে যেতে বলা হয়েছে, তা-ও জানান কৈলাস। তিনি নিজেও কথা বলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। সৌরভের স্ত্রী ডোনার সঙ্গেও বিজেপি নেতাদের কথা হয়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা অবশ্য সৌরভের চিকিৎসার বন্দোবস্ত দেখে খুশি। তিনি নিজেই সাংবাদিকদের সে কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘‘সৌরভ আমার সঙ্গে কথা বলেছে। ওকে দেখে, কথা বলে খুব ভাল লাগল। সেখানে ডোনা এবং ওর মেয়ে সানাও ছিল। চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানাই।’’ সৌরভকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীও।
চিকিৎসকদের মতে, সৌরভের স্বাস্থ্যের অগ্রগতি আশাপ্রদ। তবে তাঁদের অনেকেরই অভিমত, অভ্যস্ত জীবনচর্চার বাইরে কোনও বাড়তি ‘চাপ’ হয়তো সৌরভের এই হঠাৎ অসুস্থতার কারণ হতে পারে। সেখানেই প্রশ্ন, কী সেই ‘চাপ’? রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, তাঁকে রাজনীতিতে যুক্ত করার চেষ্টাই সম্ভবত সেই ‘চাপ’।
এখন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠে সৌরভ যদি আর কোনও বাড়তি ‘চাপ’ নিতে না চান, সে ক্ষেত্রে তাঁর রাজনীতির মাঠে নামার জল্পনারও অবসান হতে পারে। যার সহজ অর্থ, বিজেপি সত্যিই সৌরভকে নিয়ে কিছু ভেবে থাকলে সেই হিসাবও সম্ভবত গুলিয়ে যাবে এবং তাদের আবার নতুন করে অন্য কিছু ভাবতে হবে।