ক্লিন বোল্ড হওয়ার পর আম্বাতি রায়াডু। সোমবার কটকে। ছবি: পিটিআই।
বরাবাটিতেই ফয়সালা হয়ে গেল টি টোয়েন্টি সিরিজের। কোনও রকম লড়াই ছাড়াই কটকে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ছ’উইকেটে হারল ভারত। ফলে ইডেনে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটি হয়ে দাঁড়াল নিয়মরক্ষার।
ধর্মশালায় প্রথম টি-টোয়েন্টির স্কোরের অর্ধেক স্কোরও এ দিন খাড়া করতে পারল না ভারত। কোহলি, ধোনি, রায়ুডুরা কেউই স্কোরারদের বিশেষ বিরক্ত করেননি। আর টপ, মিডল অর্ডারের দাদারা না পারলে লোয়ার অর্ডারই বা পারবে কেন? ফলে ৯২-তেই শেষ হল ভারতীয় ব্যাটিং। আর সে রান তুলতে একেবারেই পরিশ্রম করতে হল না ডুমিনিদের। ১৭ ওভারের মধ্যেই শে, হল একপেশে ম্যাচ।
সকাল থেকে অবশ্য টিকিটের জন্য হা হুতাশ ছিল কটকে। পাঁচশোর টিকিট বিক্রি হয়েছে দেড় হাজারে।
উদ্দাম সর্মথনের সিংহদরজার চাবি হাতে পাওয়ার অঙ্কটা খুব সহজ এখানে। চারশোরটা বারোশো, আর পাঁচশোর টিকিট মাত্র হাজার দেড়েক দিলেই চলবে!
অবস্থা এত ভীতিপ্রদক যে ওড়িশা ক্রিকেট স্টেডিয়াম কর্তারা জেনেবুঝেও কিছু করতে পারছেন না। মোটামুটি কিংকর্তব্যবিমূঢ় দশা! পারিপার্শ্বিক ঘুরে যা মনে হল, তাতে আটকানো সম্ভবও নয়। এমন নয় যে কটকে সোমবারই প্রথম কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামছে ভারত। অতীতেও নেমেছে, ভবিষ্যতেও নামবে। কিন্তু এ বার যেটা এখানে প্রথম হচ্ছে, তা হল দেশের জার্সিতে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের এটাই প্রথম আর্ন্তজাতিক টি-টোয়েন্টি। প্রতিপক্ষও খুব এলেবেলে নয়, ক্রিকেটটা তারা প্রবল দর্পের সঙ্গেই খেলে থাকে দক্ষিণ আফ্রিকা! এবং তার পর্রমাণ তারা রাখতেও শুরু করেছে।
এবং নেতাজির শহরের তাতে প্রায় অর্ধোন্মাদ অবস্থা!
বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ স্টেডিয়ামে ঢোকার সময় একটা অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গেল। প্রোটিয়া টিম বাস সবে তখন স্টেডিয়ামে ঢুকছে। হুটার বাজিয়ে একের পর এক পুলিশের গাড়ি নিরাপত্তার বজ্রআঁটুনিতে প্রায় অদৃশ্য করে ফেলেছে টিম বাসটাকে, আর তার পিছনে দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য হয়ে দৌড়োচ্ছে প্রায় শ’খানেক লোক। উদ্দেশ্য কী, কারণ কী, বোঝা এবং তা অনুধাবনের চেষ্টা অর্থহীন। ভারতবর্ষের ছোট শহরগুলোর এমন কোনও ক্রিকেট-যজ্ঞ হাতে পেলে এমনিই উত্তেজনায় থরহরিকম্প হয়। তার উপর রবিবার গোটা দিন ধরে কটকের মনন একটা কথা খুব ভাল ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে। বুঝিয়ে দিয়েছে যে, ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচ হলেও তারা দু’টো ভাগে বিভক্ত থাকবে। দক্ষিণ আফ্রিকার দশ জনের জন্য তাদের উন্মত্ত সমর্থনের ছিটোফোঁটাও বরাদ্দ থাকবে না। কিন্তু একজন ভারতীয় জার্সিতে না নামলেও সর্মথনে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের সঙ্গে সাড়ে তিন ঘণ্টার ম্যাচে পাল্লা দিয়ে যাবেন। তিনি আলাদা, তাঁর ব্যাপারস্যাপারও আলাদা।
ম্যাচ শুরু হওয়ার আধ ঘণ্টা আগে যে দৃশ্য পাওয়া গেল, তাতে ধারণাটা আরও সমর্থন পাবে। সামনের চুল পাতলা হয়ে আসা, ‘আমাকে দেখুন’ ব্যাপারস্যাপার না থাকা চেহারাটাকে দেখলেই গ্যালারির জালে (এখানে আছে) রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ক্রিকেট-জনতা। তিনি হাঁচলে চিত্কার, কাশলে লাফ, গাল চুলকোলে হাজার হাততালি। নামটা এর পরেও বলে দেওয়ার দরকার নেই। ওটা খুব সহজ আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডে’ভিলিয়ার্স। কিন্তু একটা খচখচানিও আছে। গাল চুলকোনো, হাঁচি-কাশি পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু আসলটা হলে? ব্যাটটা চললে?
তবে তাঁর ব্যাট চলার প্রয়োজনটাই হল না। পাঁচশোর টিকিট দেড় হাজারে— কলিঙ্গ রাজ্যের কাছে হিসেবটা অহেতুক অর্থব্যয় করে ফেললেন ধোনিরা।