সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়
প্রত্যাশা মতোই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হচ্ছে আজ, বুধবার। তাঁর সমস্ত রিপোর্ট সন্তোষজনক বলে জানানো হয়েছে। খাওয়াদাওয়া, ঘুম কোনও বিষয়েই দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলে ডাক্তারেরা জানিয়েছেন। সৌরভের বাড়ির সদস্যদের সঙ্গেও ডাক্তারেরা বিস্তারিত আলোচনা করে জানিয়েছেন, এখন তাঁকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।
মঙ্গলবার বিশেষ বিমানে উড়ে এসে সৌরভকে দেখেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠি। অসংখ্য সৌরভ ভক্তদের চিন্তামুক্ত করে তিনিও জানিয়ে গিয়েছেন, প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক এখন সম্পূর্ণ বিপন্মুক্ত। সৌরভকে দেখে আসার পরে তিনি সাংবাদিকদের সামনে বলে যান, ‘‘সৌরভের হৃদ্যন্ত্রের বিন্দুমাত্র কোনও ক্ষতি হয়নি। কুড়ি বছর বয়সে যেমন শক্তিশালী ছিল, তেমনই আছে। সৌরভ এখনও প্লেন চালাতে পারেন, ম্যারাথন দৌড়তে পারেন, প্রয়োজন হলে আবার ক্রিকেটও খেলতে পারেন।’’ আরও বলেন, ‘‘সৌরভের করোনারি আর্টারিতে ব্লকেজ ধরা পড়েছে। যা যে কোনও মানুষেরই দেখা দিতে পারে জীবনের কোনও না কোনও সময়ে। সৌরভের হার্টের কি কোনও ক্ষতি হয়েছে? না। যা ঘটল, তার জন্য কি ভবিষ্যতে সৌরভের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হতে পারে? একেবারেই না।’’
তবে বুধবার বাড়ি ফিরে গেলেও এখন তাঁকে সম্পূর্ণ বিশ্রামেই থাকতে হবে। বাইরে খুব একটা বেরোনো চলবে না। তবে ডাক্তারেরা ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন। অর্থাৎ, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট যদি মনে করেন বোর্ডের বা আইসিসি-র কোনও সভায় বাড়ি থেকে যোগ দেবেন, তা তিনি পারবেন। কিন্তু খুব ধকলের কাজ থেকে এখন দূরেই থাকতে হবে। কারণ, সৌরভের তিনটি করোনারি আর্টারিতেই ‘ব্লকেজ’ রয়েছে। তার মধ্যে একটি ঠিক করা হয়েছে। বাকি দু’টির জন্যেও স্টেন্ট বসাতে হবে। সপ্তাহ তিনেকের মধ্যে সেই চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে ফের হাসপাতালে আসতে হবে সৌরভকে। সেই স্টেন্ট বসানোর প্রক্রিয়া যখন হবে, দেবী শেঠি উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়ে গিয়েছেন।
আরও পড়ুন: আগে কি লক্ষণ দেখা গিয়েছিল, সৌরভ সত্যিই কি চেক-আপ করাতেন না?
পাশাপাশি, এটাও ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক শারীরিক পরীক্ষা করানোর উপরে কখনও জোর দেননি। যে কারণে বিপদ অজান্তে এসে উপস্থিত হয়েছিল। জিম করতে গিয়ে তাঁর মাথা ঘুরে যায়, বুকে-পিঠে যন্ত্রণা হতে শুরু করে, মাথা ঝিমঝিম করছিল, হাতে চিনচিন ব্যথা হচ্ছিল। সে সবই হৃদ্রোগের লক্ষণ বলে হাসপাতালে ফোন করা মাত্র তাঁকে দ্রুত নিয়ে আসতে বলা হয়। হাতে সময় থাকতে থাকতে হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয়ে গিয়েছিল বলে আরও বড় বিপদ এড়ানো গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। দেবী শেঠির মুখেও শোনা গিয়েছে একই কথা। তিনি জানিয়েছেন, সৌরভের এই সমস্যাটুকুও হয়তো হত না যদি তিনি নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করাতেন। বলেছেন, ‘‘সৌরভের ঘটনা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, সৌরভের মতো এক জন খেলোয়াড় যাঁর বয়স ৪৮ বছর, কখনও ধূমপান করেননি, মদ্যপান করেননি, তিনি কী করে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হলেন? ঘটনা হচ্ছে, যে রকম জীবনযাপন আমরা করি তাতে যতই অ্যাথলেটিক হও না কেন, হৃদ্রোগ হতে পারে। সেই কারণেই মাঝেমধ্যে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো দরকার।’’ যোগ করেন, ‘‘সৌরভ যদি সিটি স্ক্যান বা সামান্য যে কোনও স্ক্যান, যা ভারতের রাস্তায় রাস্তায় এখন করা যায়, তা করাতেন, এই হৃদ্রোগের ঘটনা ১৫-২০ বছর আগে ধরা সম্ভব হত এবং এড়ানো যেত। প্রত্যেক ভারতীয়ের এটা মাথায় রাখা উচিত। বছরে অন্তত এক বার বা দু’বছরে এক বার শারীরিক পরীক্ষা করানো উচিত।’’ হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞের ইতিবাচক কথাবার্তায় সৌরভও মানসিক ভাবে অনেকটা স্বস্তি বোধ করছেন বলে খবর।
আরও পড়ুন: ‘হার্টের সুরক্ষায়’ সৌরভের করা তেলের বিজ্ঞাপন সরানো হল