অ্যালিস্টার কুকের ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দেওয়াটা কোনও আকস্মিক সিদ্ধান্ত নয়। গত দু’এক দিনের মধ্যে ভেবেও এই সিদ্ধান্তটা নেওয়া হয়নি। শেষ ভারত সফরের শোচনীয় ফলের পরেই কিন্তু কুক বুঝে গিয়েছিল, ওর সময় শেষ হয়ে এসেছে।
আর তাতে অবাক হওয়ারও কিছু নেই। ইংল্যান্ডের ক্যাপ্টেন হিসেবে কুকের যা রেকর্ড সেটার বারোটা বেজে যায় ভারতে এসে। এর পরে ইংল্যান্ড অধিনায়কের ভাগ্য কোন দিকে যাচ্ছে, সেটা আন্দাজ করা কঠিন কী!
কুক ইংল্যান্ড মিডিয়ার অত্যন্ত প্রিয়পাত্র। কিন্তু ভারত সফরে এসে ওকেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। মিডিয়া বার বার জিজ্ঞেস করছে, আপনি কি এ বার ক্যাপ্টেন্সি ছাড়বেন? কুকরা ভারত থেকে দেশে ফেরার পরও মিডিয়া ওদের ছিঁড়ে খাচ্ছিল। আগাম বলাবলি শুরু হয়ে গিয়েছিল কুকের জায়গায় রুটের আসাটা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। ঠিক সেটাই হল।
আসলে গত অক্টোবরে বাংলাদেশে প্রথম টেস্ট হারের পরেই কুকের শেষের সলতেটা পাকানো শুরু হয়ে যায়। ওর একমাত্র সুযোগ ছিল ভারত সফর থেকে ভাল কিছু করে নিজের অধিনায়কত্ব বাঁচানো। আর সেটাতেই কুক হেরে বসল ০-৪।
একটা দল আড়াই দশকে প্রথম বার এক বছরে আট আটটা টেস্ট হারলে তাঁর ক্যাপ্টেনের উপর তো বিশাল চাপ পড়বেই। তাও সেটা যদি দু’দশকে প্রথম বার হয় তা হলে চাপটা যে আরও বাড়বে তাতে আর আশ্চর্য কী। কুক শেষ পর্যন্ত এই চাপটাই আর রাখতে পারল না। যতদূর বুঝতে পারছি, অ্যান্ড্রু স্ট্রসের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলল ও।
শুধু ক্যাপ্টেন্সিই কিন্তু নয়। তার সঙ্গে কুকের ব্যাটসম্যান হিসেবে খারাপ পারফরম্যান্সও সরে যাওয়ার পিছনে বড় একটা কারণ। ইংল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান, সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি কুকের। এমন এক জন ব্যাটসম্যানকে গোটা টেস্ট সিরিজে জাডেজা-অশ্বিনরা রীতিমতো আতঙ্কে রেখে দিয়েছিল। ওর ১০টা ইনিংসের মধ্যে অশ্বিন-জাডেজা জুটি আউট করেছে ন’বার। তার মধ্যে ছ’বার জাডেজা। ‘মিশন কুক’ প্ল্যানটা জাডেজা আর অশ্বিন এত ভাল সামলেছে যে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং হিরোকে জিরোতে নামিয়ে এনেছিল। সেই রাজকোটে একটা সেঞ্চুরি ছাড়া গোটা সিরিজে এক বারও সেঞ্চুরির ধারে কাছে যেতে পারেনি।
প্ল্যানটা কী ছিল?
আমার মনে হয় ছকটা ছিল কুককে ‘এগেনস্ট দ্য স্পিন’ খেলানো। কুক অফ সাইডে শট খেলতে বেশি পছন্দ করে। কিন্তু জাডেজার বাঁ-হাতি স্পিন বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান অন সাইডে না খেলে অফ সাইডে খেললে সমস্যা তো বাড়বেই। এমনিতে জাডেজা বেশ ভাল টার্ন পাচ্ছিল উইকেট থেকে। ওই টার্নগুলোর বিরুদ্ধে খেলতে গিয়ে ব্যাট-প্যাডের মধ্যে ফাঁক থেকে যাচ্ছিল কুকের। ভিতরে ঢুকে আসা বল ফস্কালেই বোল্ড না হয় এলবিডব্লিউ হয়ে যাচ্ছিল ইংল্যান্ড অধিনায়ক। আর অশ্বিনের মতো অফ স্পিনারকে সামলানোটা বাঁ-হাতিদের কাছে বরাবরই কঠিন চ্যালেঞ্জ।
শুধু ব্যাটিংয়েই নয়। কুক ক্যাপ্টেন হিসেবেও অনেকগুলো ভুল করেছে ভারত সফরে। ঠিকঠাক টিম নামাতে পারেনি। ব্যাটিং অর্ডার ভুল বেছেছে। সব মিলিয়ে ফলটা এতটা খারাপ হল।
সিরিজ হারার পরপর হয়তো ঘোষণাটাও করে দিত। কিন্তু মানসিক ভাবে হয়তো প্রস্তুত ছিল না। তাই তখন বলেছিল, বাড়ি ফিরে ক্রিসমাসটা কাটিয়ে ইসিবি ডিরেক্টর স্ট্রসের সঙ্গে আলোচনার পর জানাবে শেষ সিদ্ধান্ত। যে স্ট্রস সরার পরেই ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব নিয়েছিল কুক। বছর পাঁচেক আগে। ৫৯টা টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়ার পরে ব্যর্থতা মাথায় নিয়েই সরতেই হল কুককে। যদিও ব্যাটসম্যান হিসেবে ও খেলে যাবে।
কুক জানত ভারত সফরটাই শেষ সুযোগ। কুকের কাছে ওয়াটারলু হয়েই থাকল সিরিজটা।