জয়ের উল্লাস অশ্বিন-জাদেজাদের।
অভিষেক মধুর হল না আফগানিস্তানের। রূপকথার ক্রিকেট সফর মুখ থুবড়ে গেল টেস্টের কঠোর বাস্তবতায়। দু’দিনও টিকল না ঐতিহাসিক টেস্ট।
প্রথম টেস্টে দ্বিতীয় দিনেই করতে হল ফলো-অন। এবং তারপর বরণ করতে হল লজ্জার, অপমানের পরাজয়। ইনিংস ও ২৬২ রানের হার কিছুটা হলেও প্রশ্নের মুখে ফেলল তাদের টেস্ট-স্ট্যাটাসকেই। দেখিয়ে দিয়ে গেল ধ্রুপদী আসরে তাদের ব্যাটিংয়ের ভঙ্গুরতা। বোঝাল কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে সাফল্যের থেকে পাঁচদিনের ক্রিকেট অনেক দূরের স্টেশন!
টেস্ট শুরুর আগে ভারতীয় স্পিনারদের কটাক্ষ করেছিলেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক আসগর স্ট্যানিকজাই। বলেছিলেন, তাঁর দলের স্পিনাররা ভারতীয়দের থেকে অনেক এগিয়ে। পালটা জবাব এসেছিল ভারতীয় শিবির থেকে। দীনেশ কার্তিক মনে করিয়ে দিয়েছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজার অভিজ্ঞতার কথা। অশ্বিন-জাদেজা অবশ্য যা জবাব দেওয়ার তা বাইশ গজেই দিলেন। দু’জনে মিলে দুই ইনিংস মিলিয়ে নিলেন মোট ১১ উইকেট!
আফগানদের প্রথম ইনিংস শেষ হয়েছিল ১০৯ রানে। টেস্টে প্রথমবার ব্যাট করতে নেমে ২৭.৫ ওভারের বেশি টেকেনি তারা। ফলো-অনের পর দ্বিতীয় ইনিংস অবশ্য আর একটু লম্বা হল। এবার ৩৮.৪ ওভার লড়লেন আফগানরা। তবে রান উঠল কম। দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৩ রানে শেষ টেস্টে অভিষেককারীরা।
আফগানদের প্রথম ইনিংসে ধ্বস নামালেন অশ্বিন। প্রথম ওভারেই বোল্ড করলেন আফগান অধিনায়ককে। যেন বোঝালেন, তাঁকে হেলাফেলা করা একেবারেই উচিত হয়নি আফগানদের। তাৎপর্যের হল, আসগরকে ফিরিয়েই অফস্পিনার ভারতীয়দের মধ্যে চতুর্থ সর্বাধিক উইকেট শিকারী হয়ে উঠলেন। টপকে গেলেন জাহির খানকে। ৯২ টেস্টে ৩১১ উইকেট নিয়েছিলেন বাঁ-হাতি পেসার জাহির। অশ্বিনের সামনে এখন রয়েছেন অনিল কুম্বলে (১৩২ টেস্টে ৬১৯ উইকেট), কপিল দেব (১৩১ টেস্টে ৪৩৪ উইকেট) ও হরভজন সিং (১০৩ টেস্টে ৪১৭ উইকেট)। ২৫০ ও ৩০০ টেস্ট উইকেটে বিশ্বের দ্রুততম ছিলেন অশ্বিন। প্রথম ইনিংসে তিনি ২৭ রানের বিনিময়ে নিলেন চার উইকেট। ১৮ রান দিয়ে জাদেজার দখলে দুই উইকেট।
আরও পড়ুনঃ ইতিহাসে গব্বর, শতরান বিজয়েরও, শেষ সেশনে লড়াইয়ে আফগানরা
দ্বিতীয় ইনিংসে আবার ঘাতক হয়ে উঠলেন জাদেজা। বাঁ-হাতি স্পিনার ১৭ রানে নিলেন চার উইকেট। শুরুতে অবশ্য ঝটকা দিয়েছিলেন উমেশ যাদব (৩-২৬)। প্রথম তিন উইকেটই তাঁর। ইশান্ত শর্মা (২-১৭) নিলেন দুই উইকেট। অশ্বিন নিলেন ইনিংসের শেষ উইকেট।
বৃহস্পতিবার টেস্টের প্রথম দিনের শেষ সেশনে আফগান বোলাররা লড়াইয়ে ফিরিয়েছিলেন দলকে। শিখর ধাওয়ান ও মুরলী বিজয়ের শতরানের পর তৃতীয় সেশনে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলছিল ভারত। শুক্রবার সকালে দুই ঘণ্টার মধ্যে ভারতের প্রথম ইনিংসে দাঁড়িও ফেলে দেয় তারা। অজিঙ্ক রাহানের দল থামে ৪৭৪ রানে। এদিন হার্দিক পান্ড্য (৭১) ছাড়া কোনও ব্যাটসম্যান কুড়ির ওপাশে যাননি। ইয়ামিন আহমাদজাই (৩-৫১) আফগানদের সফলতম বোলার। ওয়াফাদার (২-১০০), রশিদ খানও (২-১৫৪) এদিন উইকেট পান।
পরিসংখ্যান বলছে, টেস্টে এটাই ভারতের প্রথম দু’দিনে জয়। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে শুক্রবার পড়ল মোট ২৪ উইকেট। ভারতে এর আগে টেস্টে কোনও দিন এত উইকেট পড়েনি। আফগানিস্তানকেও তো আগে কখনও পায়নি ভারত!
পুরস্কার বিতরণের মঞ্চে ভারত অবশ্য মর্যাদা দিল আফগান ক্রিকেটের যাবতীয় প্রতিকূলতা টপকে উঠে আসাকে। অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে হাত ধরে ডেকে নিলেন আসগরকে। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে ট্রফি নিয়ে করলেন ফটোসেশন। ঐতিহাসিক টেস্ট শেষ হল সৌজন্যে। এর নামই তো ক্রিকেট।