পতন: প্রণয়ের সেই ট্যাকল যা ভারতের দৌড় থামিয়ে দিল। এএফপি
ভারত ০ • বাহরিন ১
বাহরিনের বিরুদ্ধে ভারতের প্রথম একাদশ দেখেই চমকে গিয়েছিলাম। অবিনাশ থাপার পরিবর্তে রওলিন বর্জেস! তা হলে কি প্রথম থেকেই জাতীয় কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনের লক্ষ্য ছিল ড্র। যদি তা না-হয়, তা হলে অবিনাশ বাইরে থাকবে কেন?
এএফসি এশিয়ান কাপে অবিনাশ দুরন্ত ফর্মে রয়েছে। সুনীল ছেত্রী ও উদান্ত সিংহের সঙ্গে জুটি বেঁধে ঝড় তুলেছে বিপক্ষের রক্ষণে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে হারলেও ভারতের আক্রমণাত্মক ফুটবল সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে। বাহরিনের বিরুদ্ধেই রাতারাতি রণনীতি বদলে ফেললেন স্টিভন। এর ফলে ভারতীয় দলের ছন্দটাই নষ্ট হয়ে গেল। বল না-পেয়ে অসহায় সুনীল বারবার মাঝমাঠে নেমে এল। ওকে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিল। এশিয়ান কাপের জন্য প্রায় এক বছর ধরে প্রস্তুতি চালিয়েছিল। তাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে জোড়া গোল করে টপকে গিয়েছে লিয়োনেল মেসিকে। আমার তো মনে হয়, জীবনের সেরা ফর্মে রয়েছে সুনীল। অথচ যে-ম্যাচের উপরে ভারতের কাপ-ভাগ্য নির্ভর করছিল, তাতে সতীর্থদের কাছ থেকে তেমন কোনও সাহায্যই পেল না ছেলেটা। আমি মনে করি, এর জন্য দায়ী স্টিভনের ভুল পরিকল্পনা।
এএফসি এশিয়ান কাপে ভারতের প্রথম দু’টো ম্যাচ আমি আবু ধাবির স্টেডিয়ামে বসেই দেখেছিলাম। ম্যাচের পরে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলাম স্টিভনের। আমিরশাহির বিরুদ্ধে হারের পরেও ওঁকে বলেছিলাম, ‘দুর্দান্ত খেলেছে আপনার ছেলেরা। জিততে না-পারলেও সুনীলদের আক্রমণাত্মক ফুটবলার চমকে দিয়েছে সকলকে।’ কলকাতায় ফেরার আগে বলেছিলাম, ‘এই ছন্দ ধরে রাখতে হবে বাহরিন ম্যাচেও।’
আরও পড়ুন: বিদায়ের পরেই ইস্তফা স্টিভনের
এ দিন কলকাতায় বন্ধুদের সঙ্গে বসে টেলিভিশনে ম্যাচটা দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, স্টিভন আমার পরামর্শকে গুরুত্বই দেননি। ভারতীয় দলের কোচের হয়তো মনে হয়েছিল, ড্র করলেই যখন এশিয়ান কাপের শেষ ষোলোয় পৌঁছে যাবে দল, তখন আর ঝুঁকি কেন নেব? ঝুঁকি নিলে হয়তো এ ভাবে ব্যর্থতার দায় নিয়ে ম্যাচের পরেই পদত্যাগ করতে হত না স্টিভনকে।
ফুটবল চরম অনিশ্চয়তার খেলা। আমার ফুটবল কেরিয়ারে বহু বার এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম। অর্থাৎ শেষ ম্যাচে ড্র করলেই চলবে। যত বার ড্রয়ের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছি, তত বার বিদ্ধ হয়েছি পরাজয়ের যন্ত্রণায়। ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের সেরা ফুটবলার ও কোচ প্রদীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় (পিকে) বলতেন, ড্র করার ভাবনা পালিয়ে যাওয়া মানসিকতার পরিচয় দেয়। যারা লড়াই করতে ভয় পায়, তারা কখনও জিততে পারে না। ড্রয়ের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামলে পরাজয় নিশ্চিত। বাহরিনের বিরুদ্ধে ঠিক সেটাই হল সোমবার।
অবশ্য এ দিন শুরু থেকেই মনে হচ্ছিল, জেতার সম্ভবনা কম। প্রথমত ভুল দল নির্বাচন। তার উপরে এক মিনিটের মধ্যে রক্ষণের অন্যতম ভরসা আনাস এথাদোডিকার অসুস্থ হয়ে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া। ভাগ্য ভাল যে, প্রথমার্ধে বাহরিন কোনও গোল করতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধেও এক ছবি। বাহরিন একের পর এক আক্রমণ করছে, আমাদের ন’জন ফুটবলার রক্ষণে নেমে এসে তা আটকানোর চেষ্টা করছে। বারে বারেই মনে হচ্ছিল, এ ভাবে খুব বেশি ক্ষণ বাহরিনকে আটকে রাখা যাবে না। যতই গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু অবিশ্বাস্য দক্ষতায় একাধিক নিশ্চিত গোল বাঁচাক। আমার আশঙ্কাই সত্যি হল। সংযুক্ত সময়ে পেনাল্টি থেকে গোল করে বাহরিনকে শেষ ষোলোয় তুলে দিল জামাল রশিদ।
স্টিভনের রণকৌশলের মতোই অবাক করল এ দিনের ম্যাচের অধিনায়ক প্রণয় হালদার। ওর মতো অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার কেন নিজেদের পেনাল্টি বক্সের মধ্যে বিপক্ষের ফুটবলারকে আটকানোর জন্য শরীর ব্যবহার করবে? শেষ মুহূর্তের এই মারাত্মক ভুলেই শেষ হয় গেল ভারতের শেষ ষোলোয় যাওয়ার স্বপ্ন।
প্রতিযোগিতার প্রথম দু’টো ম্যাচ দেখে মনে হচ্ছিল আমরা এশিয়ার অন্যতম সেরা দলগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছি। এ দিন স্টিভনের পরিকল্পনা প্রমাণ করে দিল আমরা আগের জায়গাতেই আছি। জয় নয়, হার বাঁচানোই একমাত্র লক্ষ্য!
ভারত: গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু, প্রীতম কোটাল, আনাস এথাদোডিকা (সালামরঞ্জন সিংহ), সন্দেশ ঝিঙ্গান, শুভাশিস বসু, আশিক কুরিয়ান (জেজে লালপেখলুয়া), প্রণয় হালদার, রওলিন বর্জেস, হোলিচরণ নার্জারি (অবিনাশ থাপা), উদান্ত সিংহ ও সুনীল ছেত্রী।
বাহরিন: সৈয়দ আলওয়ায়ি, ওয়ালেদ মহম্মদ, সৈয়দ সায়িদ, হামাদ মহম্মদ, আব্দুলওয়াহেব আলসাফি, আলি জফ্ফর (মহম্মদ মাহরুন), আহমেদ জুমা (সামি আল হুসেইনি), মহম্মদ সাদ (আবদুল্লা ইউসুফ), সৈয়দ ইসা, হাসান আলসাদ ও জামাল রশিদ।