প্রশ্ন: আগের প্রজন্মের ফাস্ট বোলারদের অঘোষিত অধিনায়ক ছিলেন আপনি। কেমন দেখছেন বিশ্বকাপে এদের?
শ্রীনাথ: এরা আমাদের চেয়ে অনেক ভাল। যেমন সীমাবদ্ধতার মধ্যে বেচারিদের বল করতে হচ্ছে আমাদের ওসবের বালাই ছিল না। কত ঝামেলা এদের। তিনটে পাওয়ার প্লে। সার্কেলের ভেতর পাঁচ জন ফিল্ডার। দু’টো নতুন বল। এত কিছু নিয়ে কী দারুণ বল করছে এরা! আমরা বরং সহজতর প্লেয়িং কন্ডিশন সমেত অনেক বেশি রান দিয়েছি। আর একটা ফ্যাক্টরের কথা আমি বলতে চাই।
প্র: কী ফ্যাক্টর?
শ্রীনাথ: দ্য ধোনি ফ্যাক্টর! পেসারদের অসম্ভব ভাল চালাচ্ছে ধোনি। যা ফিল্ড দিচ্ছে। চেঞ্জ করে করে যখন আনছে, দেখার মতো। কিপার বলে ওর একটা বাড়তি সুবিধেও আছে। স্টাম্পের পিছন থেকে ও লাইন-লেংথ ভাল জাজ করতে পারে। বোলারকে নিখুঁত ফিডব্যাকটা দিতে পারে। যেটা মিড অন বা মিড অফ থেকে কিছুতেই দেওয়া সম্ভব নয়।
প্র: সে তো যে কোনও টিমে কিপার তার বোলারকে দিয়েই থাকে। বা বোলার জেনে নেয়!
শ্রীনাথ: না, ক্যাপ্টেন কিপার হলে ব্যাপারটা অন্য মাত্রা পেয়ে যায়। আর ধোনি এমনিতেও অসাধারণ!
প্র: কিন্তু কিছু দিন আগেও তো ধোনির ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে এত নেগেটিভ কথা হয়েছে?
শ্রীনাথ: কে কী বলেছে জানতে চাই না। কিন্তু আমার মনে হয় ওয়ান ডে ক্রিকেট আর টি-টোয়েন্টিতে এখুনি ওকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য নেতা বেছে ফেলা যায়।
প্র: আপনি গাঙ্গুলির অধীনেও অনেক বছর খেলেছেন। ক্যাপ্টেন হিসেবে কাকে এগিয়ে রাখবেন?
শ্রীনাথ:গাঙ্গুলির একটা গুণ ছিল, ও প্রচুর স্বাধীনতা দিত। আমাদের নিজেদের মতো করে ক্রিয়েট করতে দিত। ধোনিকে দেখে আমার মনে হয় অর্কেস্ট্রার কুশলী কন্ডাক্টরের মতো। সব কিছু যেন আগে ঠিক আছে। আর একটা বরফশীতল মুখ নিয়ে ও সেটার অনায়াস পরিচালনা করে যাচ্ছে।
প্র: প্রশ্নটার উত্তর পেলাম না। কে বেটার ক্যাপ্টেন?
শ্রীনাথ: বলা কঠিন, এক জনের আন্ডারে এত বছর খেলেছি। আর এক জনকে দূর থেকে দেখছি।
প্র: ভারতীয় নতুন জমানার পেসারদের সম্পর্কে আপনার মতামতটা প্লিজ দেবেন।
শ্রীনাথ: তিন জনই খুব ভাল! মোহিত সম্পর্কে আমি বলব সবচেয়ে ধারাবাহিক লাইনে বল করে। আমি ভাবিইনি একটা ছেলে চট করে এত ভাল মানিয়ে নিতে পারে! স্লোয়ারটা যেমন ভাল তেমনই নিখুঁত লেংথ। টিভিতে মোহিতকে দেখে বারবার মনে মনে বলছি, বাহ রে! শামি তো গ্রেট পারফর্মার। আমি ওকে বলতে চাই এ বার সেমিফাইনাল পর্যায় বিশ্বকাপ পৌঁছেছে, তোমার খেল এ বার শুরু করো তো!
প্র: উমেশ যাদব?
শ্রীনাথ: সবচেয়ে বেশি পেস তো ওরই। দারুণ জায়গায় বল করছে।
প্র: উমেশকে এই ম্যাচের জন্য আপনার বিশেষ কোনও পরামর্শ?
শ্রীনাথ:বেশি পরামর্শর চক্করে না ঢোকাই ভাল। এই সব সিচুয়েশনে প্লেয়ারদের কাছে একশোরও বেশি অ্যাডভাইস আসে। সেগুলোকে এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।
প্র: কিন্তু এই যে একটা রব উঠেছে, অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে উমেশের রাউন্ড দ্য উইকেট দিয়ে অ্যাটাক করা উচিত ক্লার্ক-ওয়ার্নারদের। যা ওয়াহাব রিয়াজ করে এত সফল।
শ্রীনাথ: আমার কাছে এটা যুক্তিহীন। কারা বলছে এ সব?
প্র: মেঠো পাবলিক বলছে না কিন্তু। ইয়ান চ্যাপেলের মতো লোক তাঁর কলামে লিখেছেন।
শ্রীনাথ: আমি একমত নই। ওয়াহাব রিয়াজ এক জন বাঁ-হাতি বোলার। সে ওভার দ্য উইকেট এলে যে অ্যাঙ্গেল থেকে আসবে ডান হাতি রাউন্ড দ্য উইকেট এলে একই অ্যাঙ্গেল তৈরি হবে কী করে?
প্র: তা হলে আপনার মতটা কী?
শ্রীনাথ: আমার মত হল, অ্যাডিলেড আর সিডনি এক নয়। জোর করে অ্যাডিলেডের নকল সিডনিতে করতে যেও না। যে খেলাটা এত দিন খেলেছ, যেটা তোমাদের কাছে নর্মাল সেটাতেই থাকার চেষ্টা করো।
প্র: তাও তিনটে অ্যাডভাইস বললে কী বলবেন?
শ্রীনাথ:স্পিডটাকে রেখে যাও। করিডরে বল করো, ঠিক অফস্টাম্প ও তার বাইরে। আর বাউন্সার তখনই ছাড়ো যখন তোমার নির্দিষ্ট কোনও উদ্দেশ্য আছে। আবেগে ভেসে গিয়ে বাউন্সার বৃষ্টি করে বসো না। অস্ট্রেলিয়ানরা কিন্তু শর্ট বল ভাল খেলে। আবার মনে করিয়ে দিই, অ্যাডিলেড আর সিডনি এক হবে তার কোনও মানে নেই।
প্র: আপনার সেমিফাইনাল পূর্বাভাস কী?
শ্রীনাথ: অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে রয়েছে। তবে ফল কী হবে পুরোটাই নির্ভর করবে পিচ কেমন হয় তার ওপর। যতক্ষণ না উইকেট কেমন জানার সুযোগ পাচ্ছি এই ম্যাচে প্রেডিকশন করা কঠিন।
প্র: দু’হাজার তিনের ওয়ান্ডারার্স ফাইনাল বলতে গেলে আজও লোকে বলে আপনি আর জাহির একটু বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে পড়েছিলেন।
শ্রীনাথ: আমাদের বাড়তি উজ্জীবিত হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। ওই অস্ট্রেলিয়া টিমটা ভেবে দেখুন! আমরা বহু ভেবেও কোনও দুর্বলতা খুঁজে পাইনি। হয়তো একটু বেশি এনার্জি দেখানো হয়ে গিয়েছিল। লাগাম ছিল না। কিন্তু উদ্দেশ্যটাই ছিল ওটা করে ওদের যদি ঘাবড়ানো যায়।
প্র: ওয়ান্ডারার্সের ওই ফাইনাল ঘিরে আপনার ব্যক্তিগত কোনও অতৃপ্তি আছে? মনে করুন কাল আবার ওই ম্যাচটা খেলতে নামছেন। কোথায় বদলাবেন?
শ্রীনাথ: সে দিন আমি ওদের প্রচুর কাট আর পুল মারতে দিয়েছিলাম। আজ আর সেই শর্ট বোলিংটা করব না। ড্রাইভ মারতে দেব ওদের।