বাবলুর মন্তব্যের নিন্দে করছি: বলরাম

‘আমরা কী ধান্দাবাজি করেছি ও বলুক এক বার’

ময়দানি ভাষায় ওঁরা ‘দাদা-বৌদি’। গত বিয়াল্লিশ বছর ধরে হরিহর আত্মা। মোহনবাগানের ঘরের ছেলে। সেই মানস ভট্টাচার্য-বিদেশ বসু সম্পর্কে ক্লাবের নির্বাচনে বিরোধী গোষ্ঠীর ফুটবল সচিব পদপ্রার্থী সুব্রত ভট্টাচার্য বলেছিলেন ‘সব ধান্দাবাজ’। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা এল শাসক গোষ্ঠীর প্যানেলে থাকা বিদেশের থেকে। পাশে মানসকে নিয়ে। বিরোধীদের শীর্ষকর্তা বলরাম চৌধুরী-র সামনেই ক্ষোভের ভিসুভিয়াস উগরে দিলেন দু’জনে। বুধবার সন্ধেয় পার্ক স্ট্রিটের কফিশপে। যার সাক্ষী আনন্দবাজার।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:২৯
Share:

উত্তপ্ত বাগান আড্ডা। বলরাম-বিদেশ-মানস। বুধবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

ময়দানি ভাষায় ওঁরা ‘দাদা-বৌদি’। গত বিয়াল্লিশ বছর ধরে হরিহর আত্মা। মোহনবাগানের ঘরের ছেলে। সেই মানস ভট্টাচার্য-বিদেশ বসু সম্পর্কে ক্লাবের নির্বাচনে বিরোধী গোষ্ঠীর ফুটবল সচিব পদপ্রার্থী সুব্রত ভট্টাচার্য বলেছিলেন ‘সব ধান্দাবাজ’। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা এল শাসক গোষ্ঠীর প্যানেলে থাকা বিদেশের থেকে। পাশে মানসকে নিয়ে। বিরোধীদের শীর্ষকর্তা বলরাম চৌধুরী-র সামনেই ক্ষোভের ভিসুভিয়াস উগরে দিলেন দু’জনে। বুধবার সন্ধেয় পার্ক স্ট্রিটের কফিশপে। যার সাক্ষী আনন্দবাজার।

Advertisement

মানস: এই যে বলুদা, কেমন আছ?

Advertisement

বলরাম: ভাল রে। তোরা কেমন?

বিদেশ: ভাল আর কী করে থাকি বলো? বাবলুদা (সুব্রত ভট্টাচার্য) আজ আনন্দবাজারে কী বলেছে, দেখেছ?

বলরাম: কী বলল?

মানস: আমি, বিদেশ—সব নাকি ধান্দাবাজ। আমাদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে কেনা হয়েছে? মানে কী? আরে আমাদেরও তো ঘর, পরিবার রয়েছে। গত তিরিশ বছরে কী ধান্দাবাজি করেছি বলো তো? ও এ ভাবে প্রাক্তন সতীর্থদের অপমান করার সাহস বারবার পায় কী ভাবে?

বলরাম: সকালে খুব ব্যস্ত ছিলাম। খবরের কাগজ দেখা হয়নি। তবে বাবলু যদি এ রকম বলে থাকে আমি তার নিন্দে করছি। একদম ঠিক করেনি।

বিদেশ: সকাল থেকে একের পর এক ফোন। আমাদের কি কোনও সম্মান নেই? ওই লোকটার সঙ্গেই তো ছ’বছর মোহনবাগান মেসে ছিলাম। আমরা কী ধান্দাবাজি করেছি বলুক?

বলরাম: জানিস তো ও বরাবর একটু বিতর্কিত। রাগ-অভিমান করিস না। স্বচ্ছ মোহনবাগান গড়তে তোদের সবাইকে চাই।

মানস: তাই বলে ধান্দাবাজ বলে বেড়াবে? আর আমরা যদি মুখ খুলি?

বিদেশ: এই বাবলুদাই তো মোহনবাগান দিবস বয়কটের ডাক দিয়ে আমাদের একজোট করেছিল কয়েক বছর আগে। তার পর নিজেই বাগানের কোচ হয়ে যায়।

মানস: আরও বলব? সেই বয়কটের দিন সাংবাদিক সম্মেলনে আমাদের সঙ্গে না থেকে চলে গিয়েছিল এক অভিনেত্রীর সুইমিং পুল উদ্বোধনে। শাসক গোষ্ঠীর কাছে নিজে সাধু সেজে আমাদের ভিলেন বানিয়েছিল। এটা ধান্দাবাজি নয়?

বলরাম: একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। বিষয়টা আর তিক্ত করিস না।

মানস: আজ তোমাকে বলবই। একটা লোক গত কুড়ি বছরে আট বার মোহনবাগানের কোচ হল। আর সে-ই এখন রোজ শাসক গোষ্ঠীর সমালোচনা করছে। অথচ ধান্দাবাজ হয়ে গেলাম নাকি আমরা?

বলরাম: কিন্তু ক্লাবটার কী অবস্থা ওরা করেছে সেটা এক বার ভাব। বাবলুকে তো পয়লা বৈশাখের দিন ওরা তাড়িয়ে দিয়েছিল। সেটাও বল?

মানস: দেখো, আমি ক্লাব রাজনীতিতে ঢুকব না। কিন্তু তার পরেও বাবলুদা নিজের স্বঘোষিত প্রতিবাদী সত্ত্বা বিকিয়ে ওদের কোচ হয়েছিল। কেন? বাবলুদার সঙ্গেই তো আমরা ছিলাম। আমাদেরও ক্ষোভ ছিল। ক্লাবটা পারিবারিক হয়ে যাচ্ছে। হিসেবের কোনও ঠিক নেই। ক্লাবের প্রাক্তন ফুটবলারদের ফুটবল সেকশনের সঙ্গে রাখা করা হচ্ছিল না বলে আমরা গলা ফাটিয়েছি। তার পর তো টেকনিক্যাল কমিটি, অডিট দাখিল, প্যানেলে প্রাক্তন ফুটবলারদের রাখা—সবই হয়েছে।

বলরাম: অডিট দাখিল? শুক্রবারই সাংবাদিক সম্মেলন করব। তখন সব জানতে পারবি। তোরা ফুটবলাররা এই রাজনীতিতে ঢুকিস না।

বিদেশ: আচ্ছা, বাগানে সব ট্রফি কি বাবলুদা এনেছে? এক বার বলো তো এই যে কথায় কথায় গৌতম সরকার থেকে প্রদীপ চৌধুরী, কম্পটন দত্ত সবাইকে যা খুশি তা-ই বলে যায় ও, সেটার কোনও বিহিত নেই? আমি, মানস একবার মহমেডানে গিয়েছিলাম বলে আমরা নাকি সাচ্চা মোহনবাগানী নই?

মানস: বাবলুদা তো ঘোড়ার গাড়ি চেপে ইস্টবেঙ্গলে কোচিং করতে গিয়েছিল। সাচ্চা মোহনবাগানী বড়াইটা ওর মুখে মানায় না। টেকনিক্যাল কমিটি নিয়ে সত্যজিৎকে অনেক কথা বলেছে বাবলুদা। নিজে যখন মোহনবাগান কোচ ছিল তখন কিন্তু আমাদের টেকনিক্যাল কমিটিকে গুরুত্বই দিত না।

বলরাম: তোরা তিন জনে বসে এক দিন এটা মিটিয়ে নে। কী হবে অযথা অশান্তি জিইয়ে রেখে? মানসের মতো বক্তা আর বিদেশের মতো ভাল ছেলে মোহনবাগানের দরকার।

মানস: মোহনবাগানের স্বার্থে সব সময় আছি। কী দরকার ছিল বলো তো, এক যুগেরও বেশি পরে টিমটা যখন আই লিগে চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইতে তখন এই ডামাডোলের?

বলরাম: মানস, প্লিজ তুই এ সবের মধ্যে ঢুকিস না।

মানস: (সঙ্গে বিদেশও): তা হলে রোজ ‘ধান্দাবাজ’ শুনব?

বলরাম: বললাম তো ও ঠিক করেনি। এ বার অন্তত থাম। ও তো তোদের দাদার মতো।

মানস: আলবাত। আমার মায়ের অপারেশন দাঁড়িয়ে থেকে করিয়েছে ও। কিন্তু এ সব মন্তব্য? তোমার শুনলে ভাল লাগত বলুদা? বলো?

আনন্দবাজার: স্বচ্ছ মোহনবাগান গড়তে আপনি বলরামবাবু যে ডাক দিয়েছেন তার আগেই তো বাগানের ঘরের ছেলেদের মধ্যে এক সমুদ্র দূরত্ব?

বলরাম: কোনও চিন্তা নেই। এই মনোমালিন্যের বাইরেও ফুটবলারদের একটা সংসার আছে। একবার ক্লাবে গেলেই সব ঠিকঠাক করে দেব। বাকিটা সময় বলবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement