ঢালাও মধ্যাহ্নভোজ। অসংখ্য আইনজীবীর সঙ্গে বৈঠকের পর বৈঠক। প্রায় হাজার কিলোমিটারের বিশ্বভ্রমণ।
চল্লিশ বছর আগে ফুটবল-সম্রাটকে নিউ ইয়র্ক কসমসে আনতে ঠিক এমন কাণ্ড-কারখানাই করতে হয়েছিল নিউ ইয়র্ক কসমসকে!
চল্লিশ বছর পরেও যে দিনগুলো ভুলতে পারছেন না সেই কসমস টিমের ম্যানেজার ক্লাইভ টয়। ৩ জুন, ১৯৭৫— চল্লিশ বছর আগে ঠিক এই দিনেই তো কসমসে সরকারি সই করেছিলেন ফুটবল-সম্রাট।
যে গল্পের মুখবন্ধ শুরুই ‘না’ দিয়ে। পেলে স্যান্টোসে তখন চুটিয়ে খেলছেন, গোল করছেন। কসমসের প্রস্তাব কানে যাওয়া মাত্র পত্রপাঠ তা উড়িয়ে দেন পেলে। পরামর্শদাতা প্রফেসর জুলিও মাজ্জেইকে বলে দেন, ‘‘প্রফেসর, ওদের বলে দাও ওরা পাগল হয়ে গিয়েছে।’’ কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেলেকে আসতে হয়। কারণ কসমস ম্যানেজার টয় ‘না’ শুনে দমে না গিয়ে বরং আরও বদ্ধপরিকর হয়ে পড়েন তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে আনার ব্যাপারে। লক্ষ্য একটাই ছিল— যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবল উন্মাদনা আমদানি। ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া লিগ তখন প্রায় শেষ। দুটো জিনিস দরকার ছিল। এক, বিশ্বকাপ আয়োজন। দুই, পেলে,’’ স্মৃতি রোমন্থনে বসে বলে ফেলছেন টয়।
এবং পেলেকে আনার কাজ মোটেও সহজ ছিল না। কখনও জামাইকার জাতীয় টিমের বিরুদ্ধে পেলের স্যান্টোস নামার আগে তাঁর সঙ্গে বৈঠক। কসমস তখনও তাদের সর্বপ্রথম ম্যাচ খেলেনি, কিন্তু টয় ফুটবল-সম্রাটকে ক্রমাগত বুঝিয়ে চলেছেন, কেন তাঁকে কসমসের দরকার। কখনও আবার স্যান্টোসেরই ম্যাচে কিক অফের আগে মাঠের মাইক্রোফোনে টয়ের ঘোষণা, ‘‘কসমসের দশ নম্বর জার্সিটা তোমার জন্য তোলা থাকল পেলে। তুমি না এলে এই ক্লাবের আর এটা কেউ পরবে না।’’ ক্লাবের জার্সির রংও হলুদ করে দেওয়া হয়। ব্রাজিলের মতো।
স্যান্টোস, সাও পাওলো, গুয়ারুজা— ব্রাজিলের প্রায় প্রতিটা শহরেই বৈঠকের পর বৈঠক হতে থাকে। বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের মোটেলে একটা সাদা নোটপেপারে শেষ পর্যন্ত সই করেন পেলে। সরকারি নয়, বেসরকারি ভাবে। যেখানে একটা প্রীতি ম্যাচ চলছিল, যেখানে পেলেকে সই করানোর প্রচেষ্টা চলছে দেখে ইতালির হোসে আলফান্তিনিও এসে টয়কে বলে বসেন, ‘‘আমাকে নাও। পেলেকে কেন!’’ এবং এমন নানাবিধ নাটকের পর রোমে পেলেকে তিন বছরের চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়। টয়ের ইচ্ছে ছিল তৃতীয় বছরে নিউ ইয়র্ক জায়ান্টের স্টেডিয়ামে খেলে পেলের অবসরটা হোক। ৩ জুন, ১৯৭৫-এ কসমসে সরকারি সই করেন পেলে। এবং ডালাস টর্নেডোর বিরুদ্ধে অভিষেক ম্যাচেই কেরিয়ারের ১,২১৯ নম্বর গোলটা করেন তিনি।
বাকিটা?
ইতিহাসই বলে দেবে।