প্রতীকী ছবি।
বাংলার ক্রিকেটারদের ফিটনেস- মাপকাঠি বাড়ানোর জন্য মরসুমের দু’মাস আগে থেকে শুরু হয়েছিল ট্রেনিং। সম্ভাব্য ৩০ জনের দল গড়ে তাঁদের নিয়েই চলে ফিটনেস বাড়ানোর প্রয়াস। এমনকি তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে দলগঠন করার পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু মরসুম যত এগোচ্ছে, লক্ষ্য থেকে যেন সরে যাচ্ছে বাংলা। মনে হতেই পারে, ক্রিকেটারদের ‘ফেয়ারওয়েল’ দেওয়ার মঞ্চ হয়ে দাঁড়িয়েছে বঙ্গ-ক্রিকেট!
সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে হঠাৎ মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে খেলিয়ে দেওয়া হল দেবব্রত দাসকে। ১৭ বলে আট রান করে বাংলার হারের অন্যতম কারণ তিনি। প্রাক-মরসুম শিবিরের ফিটনেস ট্রেনিংয়ে ছিলেন না। সম্ভাব্য তালিকাতেও না।
এ বার আরও বড় চমক!
রঞ্জি ট্রফির শেষ দুই ম্যাচে ১৬ জনের দলে নেওয়া হল ৩৫ বছররের বাঁ-হাতি স্পিনার রাজকুমার পালকে। রঞ্জি খেলার কোনও অভিজ্ঞতা নেই। হয়নি ফিটনেস পরীক্ষা। সম্ভাব্য দলে ভাবাও হয়নি তাঁকে। তবুও কী করে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই ম্যাচের দলে তিনি জায়গা পেলেন? কেন প্রদীপ্ত প্রামাণিক, প্রয়াস রায়বর্মণের মতো প্রতিভার কথা আলোচনাও হল না।
মরসুমের শুরুতেই কোচ অরুণ লাল বলে দিয়েছিলেন, ‘‘আমার দলে ইয়ো-ইয়ো পরীক্ষা যে পাশ করবে না, তারা সুযোগ পাবে না।’’ প্রত্যেককে পাশ করে যোগ্যতা অর্জন করতে হয়েছে। কিন্তু ময়দানে দীর্ঘদিন প্রথম ডিভিশন খেলে আসা ক্রিকেটার কোনও ফিটনেস পরীক্ষা না দিয়েই সুযোগ পেলেন!
বাংলার কোচ তো তাঁকে চেনেনই না, ‘‘রাজস্থান ও পঞ্জাব ম্যাচের দল একসঙ্গে করা হয়েছে। পঞ্জাব-ম্যাচ পাটিয়ালায়। ঘূর্ণি পিচে খেলা। তাই শাহবাজ ও শ্রেয়ানের সঙ্গে একজন বাঁ-হাতি স্পিনার প্রয়োজন, যার বল বেশি ঘোরে না। ঘূর্ণি পিচেও সোজা বল করতে পারে।’’ যোগ করেন, ‘‘নির্বাচকেরা বললেন রাজকুমার অনেক অভিজ্ঞ ও নিয়মিত পারফর্ম করছে। আমি যদিও ওর খেলা দেখিনি।’’
প্রশ্ন উঠতেই পারে, তা হলে রঞ্জির অভিজ্ঞতা থাকা প্রদীপ্ত, প্রয়াস নয় কেন? তাঁরা ফিটনেস পরীক্ষা দিয়েছেন। মরসুম শুরুর আগে উৎপল চট্টোপাধ্যায়ের প্রশিক্ষণে স্পিনারদের বিশেষ শিবিরেও ছিলেন। অনূর্ধ্ব-২৩ ওয়ান ডে-তে ২৪ উইকেট নিয়ে প্রদীপ্ত ভারতের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক। গত বার তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ জিতিয়েছেন। ২০১৭তে পঞ্জাবের বিরুদ্ধেও পাঁচ উইকেট নেন। তাঁকে না নিয়ে রাজকুমার কেন? একই দিনে বাঁ-হাতি পেসার গীত পুরিকেও নেওয়া হয় বাংলা শিবিরে। মরসুমের শুরু থেকে তাঁরও বাংলা শিবিরের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না।
বঙ্গ-ক্রিকেটের একটি মহলের দাবি, এক নির্বাচকের বিশেষ প্রভাবে সুযোগ পেয়েছেন রাজকুমার। তিনি মোহনবাগানের ক্রিকেটার। পাঁচ ম্যাচে মাত্র ১২ উইকেট পাওয়া সত্ত্বেও নেওয়া হয়েছে তাঁকে। অন্য দিকে গীত টাউন ক্লাবে খেলেন। তাঁর সুযোগ পাওয়াতেও সিএবি-র এক কর্তার প্রভাব রয়েছে। এ ভাবেই যদি দল গড়া হয়, তা হলে ফিটনেস ও তারুণ্যের উপরে কেন জোর দেওয়া হল?
ঘোষিত দল: অভিমন্যু ঈশ্বরন (অধিনায়ক), মনোজ তিওয়ারি, কৌশিক ঘোষ, অনুষ্টুপ মজুমদার, অভিষেক রামন, শ্রীবৎস গোস্বামী, কাজি জুনেইদ সৈফি, শাহবাজ আহমেদ, অর্ণব নন্দী, ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়, শ্রেয়ান চক্রবর্তী, নীলকণ্ঠ দাস, আকাশ দীপ, মুকেশ কুমার, গীত পুরি ও রাজকুমার পাল।