ঋদ্ধিমানের শহর থেকে ভারতীয় দলে ১৬ বছরের তরুণী
India

মাধ্যমিক নয়, রিচার সামনে বিশ্বকাপ-পরীক্ষা

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও অভিষেক হয়নি শিলিগুড়ির মেয়ের।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৩১
Share:

প্রতিজ্ঞ: নিজেকে প্রমাণ করতে তৈরি রিচা ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

দশম শ্রেণিতে উঠলেই অনেক পরিবারে ক্রিকেট কিট বাঙ্কে রেখে, মাধ্যমিকের প্রস্তুতিতে মনোযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ১৬ বছর বয়সি রিচা ঘোষের পরিবার একেবারেই ব্যতিক্রম। কারণ, এই ফেব্রুয়ারিতে মাধ্যমিক চলাকালীন তাঁদের ঘরের মেয়েকে অন্য পরীক্ষা দিতে উড়ে যেতে হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়।

Advertisement

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও অভিষেক হয়নি শিলিগুড়ির মেয়ের। তবুও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ১৫ জনের দলে জায়গা করে নিয়েছেন ঋদ্ধিমান সাহার শহরের তরুণী। শুক্রবার মানকুণ্ডুতে বাংলার মেয়েদের শিবিরে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ চলছিল। ফিল্ডিং শেষে ড্রেসিংরুমে ফোন ঘেঁটে খবরটি পান। আনন্দে ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলেন রিচা। আনন্দবাজারকে ফোনে বলছিলেন, ‘‘স্বপ্নপূরণ। বিশ্বাস হচ্ছে না এখনও। ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখি। ভারতের হয়ে বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন নিয়েই রোজ রাতে শুতে যাই। আজ সেই স্বপ্নপূরণের প্রথম ধাপে পা দিলাম। এর চেয়ে ভাল অনুভূতি আর কী হতে পারে।’’

গত বার বাংলার অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে চ্যাম্পিয়ন করার অন্যতম কাণ্ডারি তিনি। এ বারেও সিনিয়র টি-টোয়েন্টি দলের হয়ে একাধিক ম্যাচে পারফর্ম করেছেন। দিল্লির বিরুদ্ধে ৬৭ রান করে জাতীয় নির্বাচকদের নজর কেড়েছেন। সেই পারফরম্যান্স দরজা খুলে দিয়েছিল টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জার ট্রফির। সেখানে চার ম্যাচে তাঁর রান ৯৮। সর্বোচ্চ ৩৬। চার নম্বরে নেমে দ্রুত রান করার দক্ষতাই রিচাকে জায়গা করে দিল বিশ্বকাপ দলে।

Advertisement

আরও পড়ুন: রাহুল এগিেয় কিছুটা, শিখরও নন সমর্থনহীন

সাড়ে চার বছর বয়সে প্রথম ব্যাট ধরেছিলেন। শিলিগুড়ির মহাজাতি অ্যাথলেটিক ক্লাবে তাঁর ক্রিকেটজীবন শুরু। ব্যাটিংয়ের সঙ্গে মিডিয়াম পেস বোলিং করেন। উইকেটকিপিংও করতে পারেন। তবে তিনি ব্যাটসম্যান হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হতে চান।

রিচার সুযোগ পাওয়ার খবর জানার পরে বাংলা শিবিরেও শুরু হয় উৎসব। মানকুণ্ডুতে বাংলার মেয়েদের শিবিরেই নিয়ে আসা হয় কেক। ফোন করে অভিনন্দন জানান ঝুলন গোস্বামী থেকে বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। কী বললেন সৌরভ? রিচার উত্তর, ‘‘খুব খুশি। আমাকে বললেন আরও ভাল খেলতে।’’ আর ঝুলন? তাঁর থেকে কোনও পরামর্শ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া যাবে? ‘‘অবশ্যই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওর অভিজ্ঞতা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ ও পরিস্থিতির বিষয়ে ঝুলনদির থেকে জানব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত হওয়ার জন্য কোথায় আমার পরিবর্তন প্রয়োজন সেটাও জানার চেষ্টা করব।’’ বিশ্বকাপ দলে রিচা সুযোগ পাওয়ায়, টুইট করে অভিনন্দন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। লিখেছেন, ‘‘মাত্র ১৬ বছর বয়সে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেয়েছে বাংলার মেয়ে রিচা। তাকে অভিনন্দন। ভারতীয় দলকেও আমার শুভেচ্ছা।’’

কিন্তু মার্গারেট সিস্টার নিবেদিতা ইংলিশ স্কুলের ছাত্রীর মাধ্যমিক দেওয়া এ বছর হচ্ছে না। বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়ার পরেই রিচা তাঁর বাবার সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেন। রিচার বাবা মানবেন্দ্র ঘোষ সিএবি-র স্থানীয় লিগে আম্পায়ারিং করেন। তাই বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ ছেড়ে তিনি কখনওই চান না মেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিক। রিচা বলছিলেন, ‘‘ফেব্রুয়ারিতে বাংলার ম্যাচও রয়েছে। কিন্তু বাংলার হয়ে খেলার জন্য মাধ্যমিক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেব কি না, সে বিষয়ে দ্বিধাবোধ করছিলাম। ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পরে সিদ্ধান্তটি নিতে সুবিধা হল।’’ তা হলে কি পরের বছর মাধ্যমিক দেবে? রিচার জবাব, ‘‘দেখা যাক। স্কুলের সঙ্গে কথা বলব। তারা কী চায় সেটা জানতে হবে।’’

ঘোষিত মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দল: হরমনপ্রীত কৌর (অধিনায়ক), স্মৃতি মন্ধানা, শেফালি বর্মা, জেমাইমা রদ্রিগেজ, হরলীন দেওল, দীপ্তি শর্মা, বেদা কৃষ্ণমূর্তি, রিচা ঘোষ, তানিয়া ভাটিয়া, পুনম যাদব, রাধা যাদব, রাজেশ্বরী গায়কোয়াড়, শিখা পাণ্ডে, পূজা বস্ত্রকর,

অরুন্ধতী রেড্ডি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement